আজ ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার | ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- দুপুর ১:২০

আজ ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার | ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাইআত বা শপথ

আয়াতের সরল অনুবাদ :
اِنَّ الَّذِیۡنَ یُبَایِعُوۡنَکَ اِنَّمَا یُبَایِعُوۡنَ اللّٰہَ ؕ یَدُ اللّٰہِ فَوۡقَ اَیۡدِیۡہِمۡ ۚ فَمَنۡ نَّکَثَ فَاِنَّمَا یَنۡکُثُ عَلٰی نَفۡسِہٖ ۚ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِمَا عٰہَدَ عَلَیۡہُ اللّٰہَ فَسَیُؤۡتِیۡہِ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿٪۱۰﴾
যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করল, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করল। আল্লাহর কুদরতের হাত তাদরে হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার র্পূণ করে আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন। (সুরা ফাতাহ-১০)

সূরার নামকরণ :
সূরা ফাতাহ এর প্রথম আয়াতের প্রথম বাক্যাংশ দ্বারা এর নামকরণ করা হয়। আর “ফাতাহ” দ্বারা শুধুই সূরার নাম বোঝানো হয়নি; বরং এটি একটি শিরোনাম। কারণ হুদায়বিয়ার সন্ধি ইসলাম বিজয়ের নামান্তর। তাই একে ইসলাম বিজয়ের শিরোনামও বলা হয়। (www.iscabd.org)

নাযিলের সময়কাল :
উক্ত সূরাটি ৬ষ্ঠ হিজরী সনের যিলকদ মাসে মক্কার কাফেরদের সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদনের পর নাযিল হয়।

উপরোক্ত আয়াতের শানে নূযুল :
হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে হযরত উসমান রা. এর শাহাদাতের সংবাদ পেয়ে সাহাবায়ে কেরামগণ তার প্রতিশোধ গ্রহণে রাসূলে আকরাম সা. এর নিকট শপথ গ্রহণ করেন। যাকে বাইআতে রিযওয়ান বলা হয়। সেই বাইআতে আল্লাহ তা’য়ালা সন্তুষ্ট হয়ে উক্ত আয়াত নাযিল করেন।

উপরোক্ত আয়াতের পরিচয় :
উক্ত আয়াতখানা পবিত্র কুরআনের ১১৪ টি সুরার ৪৮তম সুরার ২৯ টি আয়াত সমূহের ১০ম আয়াত। সুরাটি হিজরতের পরবর্তীতে নাযিল হওয়ায় তাকে মাদানী সুরা বলা হয়। উক্ত সুরায় চারটি রুকুহ আছে, মাদানী ২৮ টি সুরার মাঝে এটি ১২তম সুরা।

আয়াতের মূল বক্তব্য :
উক্ত আয়াতখানা ইসলাম বিজয়ের চূরান্ত সূচনাকালে নাজিল করা হয়। সাহাবায়ে কেরামগণের ঐক্য ও ঈমানী দৃঢ়তা এবং মহাপুরুষ্কারের বার্তাবাহক।
রসূল সা. একদিন স্বপ্নে দেখলেন, তিনি তাঁর সাহাবীদের সাথে নিয়ে পবিত্র মক্কায় গিয়ে উমরা আদায় করেছেন । নবীর স্বপ্ন নিছক স্বপ্ন এবং কল্পনা হতে পারে না; বরং তা এক প্রকার ওহী। পরবর্তী ২৭ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নিজেও একথা অনুমোদন করেছেন যে, তিনিই তাঁর রাসূলকে এ স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে এটি নিছক স্বপ্ন ছিল না, বরং মহান পথে রওয়ানা হওয়া আল্লাহর ইঙ্গিত ছিল যার অনুসরণ নবীজি সা. এর জন্য জরুরী ছিল। তাই রসূল সা. ৬ষ্ঠ হিজরীর যিল-ক্বদ মাসের প্রারম্ভে এ হজ্জ ও উমরা পালনের নিমিত্তে ১৪শ সাহবীর একটি কাফেলা ও কুরবানীর জন্য ৭০ টি উট সাথে নিয়ে, পবিত্র মদীনা থেকে মক্কার পথে যাত্রা করেন। কিন্তু মক্কার ৬ মাইল দূরত্বে অবস্থিত যুল -হুলাইফাতে স্থানের মক্কার কুরাইশদের দ্বারা বাঁধাগ্রস্থ হন। উক্ত স্থনে হুদাবিয়ার সন্ধিচুক্তি সংঘঠিত হয়। (www.facebook.com/iscabd91)

বাইয়াতে অর্থ :
আভিধানিকভাবে আল কাউলুল জামীল গ্রন্থে শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভী রহ. বলেন, বাইয়াত আরবী শব্দ। যার অর্থ বেচা-কেনা, লেন-দেন, ক্রয়-বিক্রয়। তবে মূল অর্থ বিক্রয় করা অথবা শপথ, চুক্তি অানুগত্য, প্রতিশ্রুতি, অঙ্গীকার ইত্যাদি।
পরিভাষায় ইসলামের জন্যে আল্লাহ ও রাসূল সা. এর সন্তুষ্টি অর্জনে শপথ গ্রহণ করা, প্রতিশ্রুতি দেওয়া বা চুক্তি করাকে বাইয়াত বলে।

বাইয়াতের প্রকারভেদ :
কুরআন ও হাদিসের গবেষণামতে অন্তত পাঁচ ধরনের বাইয়াতের প্রমাণ পাওয়া যায়।
যেমন-
১. খিলাফাতের বাইয়াত। যা ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে।
২. বাইয়াতে ইসলাম : ইসলাম গ্রহণের জন্য বাইয়াত নেয়া।
৩. আমলের বাইআত : তাকওয়া পরহেযগারীতে অগ্রগামী হওয়ার বাইয়াত। যাকে বাইয়াতে তাসাওউফও বলা হয়।
৪. হিজরতের বাইআত : কাফেরদের জুলুমী রাষ্ট্র ছেড়ে দেয়ার বাইয়াত।
৫. জিহাদের বাইআত : জিহাদের ময়দানে দৃঢ় থাকার বাইয়াত। যদি কখনো জিহাদের ময়দানে ভয়ে পালিয়ে যাবার শঙ্কা দেখা দেয়, তখন আমীরের হাতে জিহাদের দৃঢ়তার বাইয়াত গ্রহণ করা। (www.icabdlibrary.com)

আয়াতের শিক্ষা :
(ক) ঈমানের ও তাসাউফের প্রতি দৃঢ়তার মাধ্যমে ইসলাম ও দ্বীনের প্রতি ইস্তেকামাত থাকা যায়।
(খ) জিহাদের ময়দানের জিহাদের প্রতি দৃঢ় থেকে মহাপুরুষ্কারে প্রতি অাশান্বিত থাকা যায়। আল্লাহর নুসরতের প্রতি আশান্বিত হওয়া যায়।
(গ) বাইয়াতের মাধ্যমে আমীরের প্রতি অনুগত্য সুদৃঢ় থাকে। বিশৃঙ্খলা হতে মুক্ত থাকা যায়, ইসলামী আন্দোলনে শৃঙ্খলা মজবুত হয় ও বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়।

আয়াতের উদ্দেশ্য :
বাইয়াত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। যার গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন হাদিসে অসংখ্য নির্দেশনা ও ধমকি রয়েছে। রাসূলে আকরাম সা. বাইআত সম্পর্কে বলেন।
عَنْ مُعَاوِيَةَ أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ عَلَيْهِ إِمَامٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً {♪}
হযরত মুআবিয়া রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মারা গেল, অথচ তার কোন ইমাম নেই, সে আসলে জাহেলিয়াতের মরণ মারা গেল। (সহীহ মুসলিম) (www.twitter.com/iscabd1)

সুতারাং বোঝা গেল, ইসলামের জন্য আল্লাহ ও রাসূর সা. এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমীরের হাতে বাইয়াত বা শপথ গ্রহণ করা রাসূলের হাতে বাইয়াতের নামান্তর। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সকলকে আমীর বা হক্কানী মাশায়খের হাতে বাইআত গ্রহণের মাধ্যম ঈমান ও আমলের উপর দৃঢ়তা ও ইসলামী গণবিপ্লব তথা “খেলাফত আলা মিনহাযিন নবুওয়্যাহ” কায়েম করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : জি.এম মাহমুদুল হাসান হামিদী, মুবাল্লিগ, ইশা ছাত্র আন্দোলন, নোয়াখালী উত্তর

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন