আজ ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার | ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- সকাল ৯:৫৭

আজ ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার | ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তামাক ও মাদকাসক্তি বাংলাদেশ ও বিশ্ব প্রেক্ষিত

সারসংক্ষেপ
ধুমপান ও মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার জন্য এক মারাত্বক হুমকি হয়ে দাঁডিয়েছে। বিশেষত তরুণ জনগোষ্ঠীর মাঝে তামাকাসক্তি (বহুলাংসে যা ধুমপানের মাধ্যমে সংঘটিত হয়) এবং মাদকাসক্তি আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব ¯^াস্থ সংস্থা, বাংলাদেশ তামাক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সহ দেশ বিদেশের বহু সংস্থা ও সরকারগুলো এ দুটি সমস্যা মোকাবেলায় নানা প্রচেষ্টা ও আইনগত বিধি-নিষেধ গ্রহণ করেছে। এরপরও ধূমপান ও মাদকাসক্তি নির্মূলে কাক্সিক্ষত সাফল্যতো আসছেই না; বরং বেড়েই চলছে। ব¶মান প্রবন্ধে সামাজিক এ সমস্যার উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বর্ণনা ও বিশ্লেষণাত্বক পদ্ধতিতে আলোচনা করা হয়েছে। প্রবন্ধে ধূমপান ও মাদকাসক্তির আনুষাঙ্গিক বিষয়াবলী নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান মনোবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞান ও ধর্মীয় বিষেশত ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ধূমপান ও মাদকাসক্তি নিয়ে প্রসঙ্গক্রমে বৈশ্বিক নানা বিষয়ের অবতারণার মাধ্যমে এবং বিশেষজ্ঞ মতামত সামনে এনে রচনাটিকে সমৃদ্ব করা হয়েছে। পরিশেষে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রে¶াপটের আলোকে ধূমপান ও মাদকাসক্তি মুক্তির উপায় হিসেবে সুচিন্তিত ৩০দফা সমšি^ত সুপারিশ মালা তুলে ধরা হয়েছে। যা জানামতো এ সংক্রান্ত নতুন সংযোজন বলে অনুমিত হয়। বিষয়বস্তুর গুরুত্ব ও রচনার মৌলিকত্ব বিচারে প্রবন্ধটি বিষয় গবেষণায় ও এতদসংক্রান্ত সরকারী নীতি নির্ধারণে বিবেচ্য হতে পারে। রচনায় সং¶িপ্তাকারে বিষয়টির ধারাবাহিক বিবরণ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শব্দ সংখ্যার নির্দিষ্টতা, সময়ের ¯^ল্পতা, প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরিসংখ্যানের নির্ভরযোগ্য হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তের অপ্রাপ্ততা সত্তে¡ও সং¶িপ্ত পরিসরে পাঠক তামাক ও মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়ের সন্মিবেশ পাবেন। ফলে ধূমপান ও মাদকাসক্তি সম্পর্কে পাঠক মনে সচেতনতার উদ্রেক হবে।

উপক্রমণিকা
তামাক (ঃড়নধপপড়)
নিকোটিনা টোবাকন নামক উদ্ভিদের পাতা শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে যে বস্তু পাওয়া যায় সেটাই হলো তামাক।

ধুমপান (ংসড়শরহম)
তামাক জাতীয় দ্রাব্যাদি বিশেষ প্রক্রিয়ায় আগুনে জ্বেলে শ্বাসের সাথে তার ধোয়া শরীরে গ্রহণ করার প্রক্রিয়া।

শব্দগত বিশ্লেষণ
ধুম এবং পান শব্দদ্বয়ের সন্ধি হয়ে ধুমপান হয়। ধুম অর্থ ধোয়া বা বাষ্প। তামাকজাত দ্রব্য পুড়িয়ে শরীরে তার ধোয়া গ্রহন তথা পান করা হয় এ জন্য তামাকের ধোয়া পান কে ধুমপান বলা হয়।১

ধূমপানে আনন্দ কিসে?
ধুমপানের সময় ধুমপায়ীরা এ থেকে এক অদ্ভুদ তৃপ্তি লাভ করে যাকে বলা যায় বিকৃত আনন্দ লাভ। বিড়ি, সিগারেট, ও হুক্কার ধোঁয়া গলার ভেতরে এক ধরণের সুড়সুড়ি দেয় বিধায় ধুমপায়ীরা সুখানুভ‚তি অনুভব করে। সেজন্য অনেকে এটাকে সুখটান মনে করে।

তামাক ব্যবহার পদ্ধতি
পাতলা কাগজে মোড়া তামাকে তৈরী সিগারেট বা চুরুটের ধোঁয়া সেবন, টেন্ডু, তমাল ইত্যাদি পাতায় মোড়া তামাক দিয়ে তৈরী বিড়ির মধ্যমে ধুমপান অথবা পানের সাথে, সাদাপাতা কিংবা মসলাযুক্ত দোক্তা খাওয়া, তামাক পাতায় চুন মিশিয়ে খইন করে মুখে প‚রে দেয়া, পেড়া তামাকের গুল মাড়িতে ঘষা, সুগন্ধ তামাক চুর্ণ বা জর্দা পানের সাথে ব্যবহার, হুক্কাতে বা কল্কেতে তামাক টিকা পুড়িয়ে ধুমপান, তামাকের চুর্ণ নাস্যিরূপে নাকে টেনে নিয়ে মানুষ তামাকের নেশা করে থাকে।

তামাকে রাসায়নিক ¶তিকর পদার্থ
তামাকের প্রধান উপদান হলো নিকোটনি। এর উপস্থিতির পরিমান হলো ৩.৫-৮ শতাংশ। এটা একটি আ্যালকালয়েড ও শক্তিশালী বিষ। গবেষকগণ প্রমান করেছেন যে ১০ শলার এক প্যাকেট সিগারেটে নিকোটিনের গড় পরিমান হলো ২৫ মিলিগ্রাম এবং এই পরিমান নিকোটিন যদি কোন মানুষের শিরাই ইনজেকশনের মধ্যমে প্রয়োগ করা যায় তবে মানুষটি কয়েকমিনিটের মধ্যে মারা যাবে।কিন্তু সিগারেটের ধোঁয়ায় অবস্থিত নিকোটিনের মাত্রা ৬% রক্তে শোষিত হয় এবং অবশিষ্ট বাতাসে পরিত্যক্ত হয়ে বলে সিগারেট পানে নিকোটিন তাৎ¶নিক ভাবে ধুমপায়ীর মৃত্যু ঘটায় না। তামাকে নিকোটিন ছাড়াও আরো থাকে পাইরিডিন আইসোপ্রিন, উদ্বায়ী অ¤­, টারফেনল, ফারুফুরাল ও একরোনিল।ধুমপানের সময় এসব রসায়নিক বস্তুগুলো নাক, গলা, ঠোঁট, জিহŸা, শ্বাসনালী, শৈষ্মিক, ঝিলিকে উত্যক্ত করে প্রদাহ সৃষ্টি করে।২

পরো¶ ধূমপান
দুনিয়ায় প্রতি ১০০ জনে ১ জন মানুষ পরো¶ ধুমপানে মারা যান। যাদের দুই তৃতীয়াংশ শিশু। পৃথিবীতে ১ বিলিয়ন ধুমপায়ী, প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন মানুষ তামাকজনিত অসুস্থতায় মারা যান।৩
৫ বছরের নীচে ১,৬৫,০০০ হাজার শিশু পরো¶ ধুমপানের কারণে সৃষ্ট শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগে প্রতি বছর মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ে, যার বেশীর ভাগ ঘটে দ¶িণ এশিয়া ও আফ্রিকায়।৪
বিশ্বের মোট ধুমপায়ীর ৮০ শতাংশেরও অধিকেরবসবাস নিম্মএবং মধ্যম আয়ের দেশে।৫

বাংলাদেশে ধুমপায়ীর সংখ্যা কত যড়ি সধহু ংসড়শবৎং রহ নধহমষধফবংয)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনোমিক রির্সাচ (বিইআর) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ আয়োজিত “বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ এবং করনীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জনসংখ্যার ৪৩.৩% (৪১.৩ মিলিয়ন) প্রাপ্তবয়স্ক লোক তামাক ব্যবহার করে।৬

মাদক ও মাদকাসক্তির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য :
যেসব প্রাকৃতিক, রাসায়নিক দ্রব্যবা উপাদান গ্রহণ করলে স্নায়ুবিকউত্তেজনা, কিছুটা মানসিক প্রশান্তি ওসাময়িক আনন্দ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় তাইহলো মাদকদ্রব্য। আর বিভিন্ন মাদকদ্রব্যেরপ্রতি আসক্তি বানির্ভরতাইহচ্ছে মাদকাসক্তি।মাদকাসক্তি এমনএকটি অবস্থা যাতে ব্যবহৃত দ্রব্যেরপ্রতি ব্যবহারকারীরশারীরিক ও মানসিকনির্ভরতা জন্ম নেয়, এর প্রতি আকর্ষণ ওব্যবহৃত মাত্রার পরিমাণ দিন দিনবৃদ্ধি পায় এবংআবেগ ও চিন্তারপ্রক্রিয়াকে পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যক্তিরআচরণে সক্রিয় প্রভাব বিস্তার করে।

মাদকাসক্তি কি?
মাদকাসক্তি শব্দটিযুগল শব্দ। যারএকটি হলো মাদক, অপরটি হলো আসক্তি।অর্থাৎ মাদক+আসক্তি= মাদকাসক্তি। মাদকশব্দটি মদ শব্দের বিশেষণ। মাদকঅর্থ মত্ততা জন্মায় এমন (মাদকদ্রব্য)। আরমাদকতা (বি) অর্থমত্ততা বা নেশা উৎপাদন শক্তি।৭
মদ-এর ম‚ল আরবী শব্দ খামার। এর আভিধানিক অর্থ ‘বিলুপ্ত করা, লুকিয়ে ফেলা।” যেহেতু সুরা মানুষের বুদ্ধি-বিবেককে বিলুপ্ত করে দেয় তাই এ নামে নাম করণ করা হয়েছে।৮
মাদকাসক্তি একটি রোগ। আরো স্পষ্ট করে বললে মাদকাসক্তি একটি মানসিক রোগ বা মস্তিষ্কের ব্যাধি।
মাদক মানে নেশা সৃস্টিকারী দ্রব্য। আসক্তিবিশেষ্য পদ। যারঅর্থ গভীর অনুরাগ, লিপ্সা, পাওয়ারদুর্দমনীয় প্রত্যাশা। অর্থাৎমাদকাসক্তি অর্থহলো নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যের প্রতি গভীরঅনুরাগ বা পাওয়ার দুর্দমনীয় প্রত্যাশা। আর মাদকদ্রব্যের প্রতি যারআসক্তি রয়েছে তাকে বলে মাদকাসক্ত।৯
যে কোন ধরণের নেশা বা আসক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, আসক্তি হচ্ছে নিউরোট্রান্সমিশনের (ঘবঁৎড়ঃৎধহংসরংংরড়হ) ¯^-আবেশিত এমনএক পরিবর্তনযা সমস্যা সৃষ্টিকারী আচরণের জন্ম দেয়।১০
রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্য ছাড়া যখন ক্রমাগত এবং মাত্রাধিকভাবে কোন ড্রাগের অপব্যবহার চলে তখন তাকে বলা হয় উৎঁম ধফফরপঃরড়হ বা ড্রাগের অপব্যবহার।
ব্যক্তির উপর ড্রাগের পতিক্রিয়ার ফলে শরীর-মনে এমন সব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় যখন সেই ব্যক্তি অবিরামভাবে অথবা কিছুদিন পরপর সেই ড্রাগের ব্যবহার করতে বাধ্য হয় আর এ অবস্থাকেই বলা হয় উৎঁম ফবঢ়বহফবহপব বা ড্রাগআসক্তি। ড্রাগডিপেন্ডস সাধারণত ২ভাবে হয়-
ঢ়যুংরপধষ ফবঢ়বহফবহপব বা শারারীক নির্ভরতা এবং ঢ়ংুপযড়ষড়মরপধষ ফবঢ়বহফবহপব বা মানসিক নির্ভরতা।
ইমাম আবু হানীফা (র.) বলেন, “মাদকাসক্তি বা নেশা হলো যারসাথে ‘হল’ ও ‘নিষেধাজ্ঞা’ সম্পৃক্ত।উহা জ্ঞানকে বিলুপ্ত করে, এমনকি মাতালব্যক্তি কোন কিছু বোঝে না, কথাবার্তায়জ্ঞান থাকে না, পুরুষ ও মহিলারমধ্যে এবং ভ‚মন্ডল ও নভোমন্ডলেরমধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।১১
বিশ্ব ¯^াস্থ্য সংস্থার (যিড়) মতে “মাদকদ্রব্যেরউপরে আসক্তি বা নির্ভরশীলতা হচ্ছে একটি মানসিকও শারীরিক অবস্থা যার উপরনির্ভরশীলতা মিথস্ক্রিয়ারমাধ্যমে সাধিত হয়ে থাকে। যখনকোনো ব্যক্তি মাদকাসক্তিতে আক্রান্তহয় তখন সে মাদকদ্রব্য সেবনেরঅবর্তমানে উচ্ছৃক্সখল ও অশান্ত হয়ে পড়ে, যার ফলে সে যে কোনো অপরাধ সংঘটনকরতে পারে। মাদকদ্রব্যের অর্থসংকুলানের জন্য যা খুশি তা করতে পারে।
মাদকাসক্তি হচ্ছে এক ধরণেরঅবিরাম বা পর্যায়ভিত্তিকনেশাগ্রস্ততা যার ফল¯^রূপ একবিশেষ মাদকদ্রব্য অবশ্যইনিয়মিতভাবে সেবন করতে হয়। ক্রমাগতমাদকদ্রব্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হয়।প্রয়োজনের তাড়নায় সাধু বা অসাধুযেকোনো উপায়ে হোক ঔষধ যোগাড়করতে হয়। শারীরিক, মানসিকবাউভয়ভাবে এই মাদক ক্রিয়ারউপরে নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়এবং ক্রমাগতভাবে পারিবারিক ওসামাজিকসম্পর্কের সাথে বৃত্তিম‚লকদিকের অবনতি হতে থাকে।১২
উৎঁম ধফফরপঃরড়হ সবধহং ংঃৎড়হম ধঃঃৎধপঃরড়হ ভড়ৎ যধৎসভঁষ ঃযরহমং. ওহ ঃযরং ংবহংব ঃধষশরহম ঃবধ, পড়ভভবব, ংসড়শরহম ধহফ ফৎরহশরহম ধষপড়যড়ষ সধু নব পধষষবফ ধফফরপঃরড়হ. ঘড়ধিফধুং ফৎঁম ধফফরপঃরড়হ সবধহং ঃধশরহম ড়ঢ়রঁস, যবৎড়রহ, পড়পধরহব, সধৎরলঁধহধ, সড়ৎঢ়যরহব বঃপ.১৩

১৯৯০সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী- মাদকাসক্ত বলতে এমন একজন মাদকদ্রব্যগ্রহণকারীকে বুঝায়, যে অভ্যাসগতভাবে মাদকদ্রব্যের উপরনির্ভরশীল, মাদকদ্রব্য সেবন কিংবা গ্রহণযেন তার নিকট রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরঔষধের সমতুল্য। মাদকদ্রব্য গ্রহণতাকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে, ধ্বংস ওঅব¶য়ের দিকে ঠেলে দেয়।১৪

উপর্যুক্ত সংগাগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায় মাদকাসক্তি এক বিশেষ অসুস্থতা যারফলে, রোগী ড্রাগের উপরসম্প‚র্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একবারড্রাগ ব্যবহারে ভালো লাগার আমেজেরমধ্য দিয়ে জন্ম নেয় পুনরায় ব্যবহারেরইচ্ছা। এভাবে পুনঃপুন ড্রাগ ব্যবহারেরফলে ড্রাগেরপ্রতি সহনশীলতা ক্রমাš^য়ে বাড়তে থাকে।ফলে ব্যবহারকারীকে ড্রাগেরমাত্রা বাড়াতে হয়। এভাবে অবস্থা এমনএক পর্যায়ে পৌঁছে যে, ড্রাগ ব্যবহারনা করলে শরীরে প্রত্যাখ্যানজনিত বিরূপপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আর এরূপপ্রতিক্রিয়ার ভয় তাকে আবারটেনে নিয়ে যায় ড্রাগের দিকে। ফলে আসক্ত ব্যক্তি একমাত্র ড্রাগব্যবহারের চিন্তা-ভাবনায় আচ্ছন্নহয়ে পড়ে। জীবনের বাকি সব চাহিদা, দায়িত্ব ও গুরত্ব হারিয়ে ফেলে। ড্রাগব্যবহারের প্রাথমিক অবস্থায়সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলেওপরবর্তীতে তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যহয়ে দাঁড়ায় আরো ড্রাগ সংগ্রহ ও ব্যবহার। এভাবেই তার পরিণতি হয় মারাত্মকশারীরিক ও মানসিক জটিলতা, যারপরিণাম মৃত্যু।১৫

মাদকদ্রব্যের শ্রেণীবিভাগ
সাধারনভাবে নেশা সৃষ্টিকারী বা চিত্তবিভ্রাটকারী সব দ্রব্যই মাদক বলে পরিগণিত। এগুলোকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। (ক)প্রাকৃতিক (খ) রাসায়নিক।
(ক) প্রাকৃতিক : প্রাকৃতিক উপায়ে যে সকলদ্রব্য উৎপন্ন হয় তাই প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য। প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য গাছথেকে আসে যেমন : তাড়ি, আফিম, গাঁজা, ভাঙ্গ, চরস, হাশিশ, মারিজুয়ানা,জর্দা,গুল ইত্যাদি। (খ) রাসায়নিক : পরী¶াগারে রাসায়নিকক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে মাদকদ্রব্যপ্রস্তুত হয় তা-ই রাসায়নিক মাদকদ্রব্য। রাসায়নিক মাদকদ্রব্য প্রাকৃতিকউপায়ে উৎপন্ন মাদকদ্রব্যথেকে বেশী নেশা সৃষ্টিকারী ও ¶তিকর।
যেমন : হেরোইন, মরফিন, কোকেন, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, সঞ্জীবনী সূরাসহ
বিভিন্ন প্রকার এলকোহল ইত্যাদি।১৬

বিশ্ব ¯^াস্থ্য সংস্থা
নির্ভরতা সৃষ্টিকারী ঔষধের একআন্তর্জাতিক শ্রেণীবিভাজনকরে দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে : (১) আচ্ছন্নভাব উদ্রেককর মাদক ; যেমন : (ক) আফিম ধরণের ; যথা-মরফিন, হেরোইন, পেথেডিন, কোডেইন, মিথাডন ইত্যাদি। (খ)বার্বিচ্যুরেট ধরণের; যথা-গার্ডিনাল, সোনেরিল, ক্রোরাল, মেপ্রোবামেট, ডায়াজিপাম, মেথাকোয়ালোন প্রভৃতি। (২)উত্তেজক ধরণের মাদক; যেমন : (ক)ক্যানাবিস জাতীয় ; যথা- গাঁজা চরস, ভাঙ, সিদ্ধি ইত্যাদি। (খ)অ্যামফিটামিনজাতীয় ; যথা-মেথেড্রিন, ডে·িড্রিন, ফেনপে­ারামিন ইত্যাদি। (গ) কোকেন জাতীয়; যথা-কোকেন বড়ি বা নস্যি। (৩) ভ্রমবা মায়া উৎপাদনকারী মাদক : যথা-এল.এস.ডি মেসক্যালিন। বিভিন্ন ধরণের ঔষধ; যেমন(ক)যন্ত্রণানিবারক ঔষধ ; যথা – অ্যাসিপিরিন, পেন্টাজেনিনইত্যাদি। (খ) পেট্রোলিয়াম উদ্ভ‚ত দ্রব্য :যথা-পেট্রোল শোঁকা, জুতো পালিশ শোঁকা ইত্যাদি।১৭

বর্তমান সময়ে উল্লেখযোগ্য মাদকদ্রব্য
গাঁজা, হাশিশ, হেরোইন, প্যাথেড্রিন, মরফিন, কোকোন, ক্যাফেইন, অ্যামফেটামিন, বার্বিচ্যুরেট, মেথাকোয়ালেন, ট্রাংকুইলাইজার্স,এলএসডি, পেথেডিন, আফিম, কোডিন, থিবাইন, প্যাপারাভিন, নোসকাফাইন, নারকটিন, মেথাডন, ডেকাট্রোমোবামাইড, ডাই-পিপানল, ডাই-হাইড্রোকোডিন, পেন্টানাইল, কেন্টাযোকাইন, আলফাপ্রোডাইন, হাইড্রোমরফাইন, অ্যালফেন্টানাইল, আলফামিথাইল, ফেন্টানালই, সুপেন্টানাইল, লোফেন্টানাইন, এন্ট্রোফাইন, অ·িকোডন, ডিমেরাল, ক্যানাবিস, রেসিন, মদ, হুইস্কি, জিন, রাম, ভদকা, তাড়ি, পচাই, সুরাসুর, ডিনেচার্ড, স্পিরিটবা মেথিলেটেড স্পিরিট, ক্লোরডায়াজিপ·াইড, ডায়াজিপাম, অ·াজিপাম, লোরাজিপাম, ফরাজিপাম, ক্লোরোজিপেট, ফেন্সিডিল, নাইট্রাজিপাম, ট্রায়াজেলাম, ট্রেমাজিপাম, ইয়াবা ইত্যাদি বর্তমানসময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মাদকদ্রব্য।১৮

মদ্যপান বন্ধ করলে যা হতে পারে
অ্যালকোহল বা মদে আসক্ত মদ্যপায়ী মদপান হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে তার মাঝে দেখা দেয় বিভিন্ন উপসর্গ এগুলো হলো- বমি, বমিবমিভাব, বিরক্তি, রাগ, দুর্বলতা, ঘুম না আসা, অস্থিরতা, বিষন্নতা, হতাশা ইত্যাদি। কখনো এসব ল¶ণ বা উপসর্গ অল্পমাত্রায় থাকে আবার কখনও বেশিমাত্রায় হলে তা মৃগীরোগীর মতো ফিট হয়ে যাওয়া এবং প্রলাপের অবস্থাও সৃষ্টি করতে পারে। এসময় দেখা দিতে পারে-অম‚ল প্রত্য¶ণ ভ্রান্তবিশ্বাস এরকম অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে জীবন বিপন্ন পর্যন্ত হতে পারে।১৯

মাদকাসক্তির কারণ
মাদকদ্রব্যে আসক্ত হওয়ার পেছনে একক কোন কারণ দায়ী নয়। কিন্তু তারপরেও বলতে হয় ম‚লে রয়েছে এর
(১) সহজ প্রাপ্তি। এক সংঘবদ্ধ মাফিয়া চক্রকেবল নিজ¯^ ¯^ার্থসিদ্ধির জন্যসুকৌশলেএটিকে বাজারে ছাড়ছে। সমাজবিজ্ঞানীরদের মতে, মাদকাসক্তি হল বাজার অর্থনীতির কুফল যেখানে একদল ¯^ার্থাšে^ষী কালো টাকা লাভের আশায় সে কাজ করছে; পিছনে রয়েছে আরো নানা আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্মিক কারণ।২০
¯^াধীনতা উত্তর বাংলাদেশে শহরায়ন ও নগরায়নের ফলে সৃষ্ট জটিলতা, ছাত্র-রাজনীতিতে ঢুকে পড়া কু-প্রভাব, রাজনীতিবিদদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া, আধুনিকতার নামে উচ্ছৃক্সখল হওয়া, সন্ত্রাস, হতাশা, দ্বন্দ্ব ইত্যাদি মানুষকে মাদকাসক্ত হতে সাহায্য করেছে। এছাড়া বন্ধু-বান্ধবের কুসংসর্গ, পারিবারিক, সামাজিক ও মানসিক অস্থিরতা, মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশ ব্যবহৃত হওয়া এবং মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এগুলো সমাজে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।
বিশ্ব ¯^াস্থ্য সংস্থার পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, সচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মধ্যেই মাদকদ্রব্য সেবনের প্রবণতা বেশী। ধনীর দুলাল-দুলালীদের কাছে এটি আভিজাত্যের প্রতীক। সুখের হতাশায় মাদকদ্রব্যের সম্মোহনে হারিয়ে যেতে এরা ভালবাসে। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে এরা আনাবিল আনন্দ উপভোগ করে। রক্ত প্রবাহে মাদকদ্রব্যের জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া এদেরকে প্রদান করে এক উষ্ণ অনুভ‚তি। এই পুলক অনুভ‚তি, ¯^প্নিল তন্দ্রাচ্ছন্নতা ও নষ্ট আনন্দ এক সময় তাকে আসক্তির চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়।২১

ভুল ধারণা
এছাড়াও আমাদের দেশে শি¶িত সচেতন মাদকাসক্তদের এমন অনেককেই পাওয়া যায় যারা মনে করেন যে মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মস্তক ¯^চ্ছ থাকে, কাজে আনন্দ পাওয়া যায়, সাফল্য আসে। মাদকদ্রব্যের গুণাগুণ সম্পর্কে যুক্তিগুলোর অধিকাংশই দুর্বল মানসিকতার পরিচায়ক।

বাংলাদেশে তামাক চাষ (ঃড়নধপপড় পধষঃরাধঃরড়হ পধষঃরাধঃরড়হ রহ ইধহমষধফবংয)
২০১২-১৩অর্থবছরে ৭০হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ২০১৩-১৪অর্থবছরে এটা ১লাখ ৮হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।২২
বিষাক্ত তামাক চাষের মাধ্যমে আমাদের খাদ্যশষ্য উৎপাদনযোগ্য জমির ব্যাপক ¶তি করছে তামাক কোম্পানীগুলো। ধ্বংস করছে জীববৈচিত্র তাই তামাক চাষের উপর অতিরিক্ত ভ‚মি কর ও পরিবেশ কর আরোপ করতে হবে। তামাক চাষের আগে স্থানীয়ভাবে বিশেষ অনুমোদন নেবার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২৭ ফেব্রæয়ারি ২০১৮ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ডাবি­উবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এই দাবী করেন,
পৃথিবীর যে সকল দেশে তামাক পণ্য সস্তা তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাদাপাতা, জর্দা, গুল, বিড়ি ও সিগারেট ¯^ল্পম‚ল্য, সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য হওয়ায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে তামাক সেবনের হার ক্রমবর্ধমান।

ইয়াবার জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের শেষ সীমানায় অবস্থিত ছেড়াদ্বীপের পাশে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় ৩ লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড।২৩
টেকনাফের উপক‚ল সাবরাং ইউনিয়নের খুরের মুখ সংলগ্ন শ্মশানঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাচারকারীরাদের ফেলে যাওয়া বস্তা থেকে ১১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ইয়াবার আনুমানিক ম‚ল্য ৩৩ কোটি ৬০ টাকা বলে তিনি জানান।২৪

পুলিশ টিমের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যাবসার অভিযোগ
২০১৭ সালের ডিসে¤^রে আইজিপি ও ক·বাযার পুলিশ সুপারের বরাবর দাখিলকৃত এক অভিযোগপত্রে ফেনী মডেল থানার এস বশির উদ্দিন দাবী করেন যে ঐ বছর ২৭ সেপ্টে¤^র ক·বাজারের টেকনাফে গোয়েন্দা পুলিশের দল অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ৩০ হাজার ফিল ইয়াবা উদ্বার করেন। কিন্তু পরদিন টেকনাফ থানায় দায়েরকৃত মামলায় উদ্বারকৃত ফিলের পরিমান দেখানো হয় মাত্র ৮০০০ ফিল। তার অভিযোগ বাকি ইয়াবা বিভিন্ন ধাপে ৮ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। বশির নিজেও তখন ক·বাযার ডিবি পুলিশের এওকজন সদস্য ছিলেন।২৫
ঘটনার পরবর্তি সত্যতা সম্পর্কে জানা যায়নি। এভাবে মাঝে মাঝে আইন শৃঙ্গখলা বাহিনীর কিছু কিছু সিদস্য বা টিমের বিরুদ্বেও মাদক ইয়াবার ব্যাবসায় জড়িয়ে পডার খবর বের হয়।

পাশাপাশি কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকজাত দ্রব্যকে একক কর কাঠামোতে আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশে তামাকের উপর বর্তমান শুল্ক কাঠামো জটিল ও স্তর ভিত্তিক। বর্তমান এই শুল্ক কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক নীতি প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। পুরো কর ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করা প্রয়োজন। কর আরোপের পাশাপাশি কর আদায়ের ¶েত্রেও জাতীয় রাজ¯^ বোর্ডের স¶মতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

ইসলামে মাদক নিষিদ্ধের প্রমাণ
রাসূল সা. দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন لاتشربالخمرفانهامفتاحكلشر- “তোমরা সুরা পান করো না। কেননা, এটা সকল প্রকার মন্দ কাজের কুঞ্জি।” সুরা পানে মানুষের পরস্পর ব্যবহারে তারতাম্য ঘটে। তাছাড়া সকল মন্দ অভ্যাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আর এমন সব কার্য সংঘঠিত হয় যা মানুষের কাছে তার মানসম্মানকে ভুলন্ঠিত করে, মানুষের চোখে তাকে এক হাস্যাস্পদ বস্তুতে পরিণত করে দেয়।

ইসলামে সুরা নিষিদ্ধকরণ
ইসলাম প‚র্ব যুগে আরবদের সুরাসুক্ত হওয়ার ব্যাপারটি সর্বজন বিদিত। তারা তাদের কাব্যচর্চার এক বড় অংশ জুড়ে ছিল মদ ও নারী। সুরা পান তাদের অভ্যাসে পরিনত হয়ে পড়ছিল। ইসলাম আগমনের পর তাদের এ অভ্যাসকে একেবারে নিষিদ্ধ করা সহজ কাজ ছিলনা। এ জন্যই ইসলাম শুরা নিষিদ্ধকরণের ব্যাপারে অন্যান্য কাজের ন্যায় শ¤^ুক গতি অবল¤^ন করলো। যেন লোকের উপর এর পতিক্রিয়া কষ্টসাধ্য না হয়, তাই ইসলাম একে তিন ধাপে হারাম ঘোষণা করেছে।

প্রথম ধাপ
কুরআনপাকে আল্লাহ তা’য়ালা প্রথমত যে আয়াতের মাধ্যমে সুরার অবৈধতা সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছেন তা يسألونكعنالخمروالميسرقلفيماإثمكبيرومنافعللناسواثمهمااكبرمننفعهما- লোক তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাস করে। বল, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু এতে পাপ উপকার অপে¶া অধিক।২৬
এ আয়াতটি সুরা এবং জুয়ার অবৈধতা সম্পর্কিত। যদি সুরার অবৈধতার ব্যপারে অন্য কোন আয়াত নাযিল না-ই হতো তাহলে এ আয়াতটিই এ ব্যাপারে যথেষ্ট ছিল, কেননা আল্লাহ তা’আলা অত্র আয়াতে বলেছেন-
فيمااثمكبير এতে মহাপাপ রয়েছে। আর পাপ সবগুলিই হারাম বা অবৈধ কেননা আল্লাহ তা’আলা অনত্র ইরশাদ করেন- قلانماحرمربيالفواحشماصهرمنهاومابطنوالثم- “বল, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লিলতা আর পাপ।” (সুরা আরাফ আয়াত ৩৩)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা’আলা পরিষ্কার ঘোষণা করছেন যে, সর্ব প্রকার পাপই অবৈধ। আর আল্লাহ তা’আলা সুরা এবং জুয়ার পাপ রয়েছে বলেই ¶ান্ত হন নাই; বরং অবৈধতার পোষকতার এ পাপকে كببر বা মহা বলেও আয়াতে উল্লেখ করেছেন। আর জুয়া ও সুরার ব্যাপারে আয়াতে যে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন- ومنافعلناس অর্থাৎ এবং মানুষের জন্য লাভ রয়েছে, এতে এদের বৈধতা প্রমানিত হয়না। কেননা এর উদ্দেশ্য হলো কোন কোন লোকের জন্য পার্থিব কোন উপকার এতে থাকতে পারে।
কারণ প্রত্যেক অবৈধ বস্তুতে নগন্য পরিমান হলেও কোন না কোন উপকার মানুষের হতে পারে। কিন্তু এ লাভ বা উপকার তার অপকারের তুলনায় অতি নগণ্য। যেমন আয়াতে বিস্তারিত ব্যখ্যা করে বলা হয়েছে- واثمهمااكبرمننفعهما- “এদের পাপ এদের উপকারের তুলনায় সর্বাধিক।” বিশেষত জুয়া ও সুরা পানের মধ্যমে এমন সব পাপ সংঘটিত হয় যা পরকালের আযাব কে অনিবার্য করে দেয়। আর সুরাই যে অনিষ্টকারিতার উদয় হয় তা সুরাই অভিজ্ঞ জ্ঞানীরা ¯^ীকার করেছেন।
দ্বিতীয় ধাপ
অতঃপর সুরার অবৈধতার দ্বিতীয় ধাপে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-
ياايهاالذينامنوالاتقربوااصلاةوانتمسكاريحتيتعلموماتقولون হে বিশ্বাসিগণ! মদ্য পনোন্মত্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যত¶ন না তোমরা যা বলো তা বুঝতে পার। সুরা নিসা আয়াত ৪৩

বিভিন্ন দেশে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ ইতিহাস মোটেই সুখকর ছিলনা। প্রেসিডেন্ট নি·নের আমলে শুরু হওয়া এই নীতি দেশের কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যে এক ভয়াবহ অবস্থার তৈরি করেছে। বৈষম্যম‚লক আইনের পরিণতিতে মাদকের ব্যবসা কমেনি, কেবল আটক ব্যক্তি বেড়েছে।
২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তে কমপ¶ে ১২ হাজার নাগরিককে হত্যা করেছেন মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে। এর মধ্যে অন্ততপ¶ে ৬০জন শিশুও আছে। আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে গত বছরের অক্টোবরে খানিকটা পিছিয়ে এলেও ডিসে¤^রে এই কথিত অভিযান আবার শুরু হয়েছে।২৭
‘ওয়ার অন ড্রাগস’-এর আরেক উদাহরণ হচ্ছে মে·িকো। ২০০৬ সালের ডিসে¤^রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবার পর ফিলিপে কলডেরোন এই ‘যুদ্ধের’ সুচনা করেন। তাঁর ¶মতার ছয় বছরে মাদক ব্যবসা কমেনি; মোট যে এক ল¶ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশই মারা গেছে সরকারি বাহিনীর হাতে, ২৮ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন, ৮ হাজার অত্যাচারের ঘটনার বর্ণনা পাওয়া গেছে। ‘মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের’ এই ধারা অব্যাহত রেখেছেন তাঁর উত্তরসূরি এনরিকে পেনা নেটো। ১৫ ডিসে¤^র ২০১৭ মে·িকোর কংগ্রেস এক আইন পাশ করেছে যাতে করে সেনাবাহিনীর হাতে আরো ¶মতা দেয়া হয়েছে
আভাবে যুদ্ধ করে মাদক নির্মূল সম্ভব হয়নি। এজন্য প্রয়োজন সমšি^ত পরিকল্পনা ও বিভিন্নমুখি পদ¶েপ

পরো¶ ধুমপানের শিকার
কর্মস্থলে ৬৩শতাংশ অধূমপায়ী পরো¶ ধূমপানের শিকার হন। বিশ্বে১০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় পরো¶ ধূমপানের জন্য। দেশের ৪৩শতাংশ মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। চারকোটির বেশি মানুষ ধূমপান করে। এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে আইন-শৃক্সখলা র¶াকারী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা। তাই মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

বিড়ি সিগারেটের ব্যায়
প্রতিদিন বিড়ি-সিগারেটে ব্যয় হচ্ছে ৭কোটি ৯৮লাখ টাকা। বছরে ব্যয় হয় ২হাজার ৯০০কোটি টাকা।২৮
এই বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে মানুষ মৃত্যু অথবা পঙ্গুত্ব কিনছে। বিশ্বর ¯^াস্থ্যসংস্থার ২০০৪সালের এক জরিপ থেকে জানতে পারি, তামাক গ্রহণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫৭হাজার মানুষ মারা যায়। পঙ্গু হয় ৩লাখ ৮২হাজার মানুষ।২৯ আর এখন এ সংখ্যা কোথায় দাঁড়িয়েছে, আমরা কেউ বলতে পারিনা।
এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ৫৮শতাংশ পুরুষ ও ২৮দশমিক ৭শতাংশ নারী প্রতিবছর তামাক ব্যবহারে আক্রান্ত হচ্ছে। তামাকজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।৩০
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট দাবী করছে,পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে কম ম‚ল্যে তামাকজাত দ্রব্য বাংলাদেশেই পাওয়া যায়। এজন্য বর্তমানে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটির বেশি। সর্বশেষ তথ্যানুসারে, তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ সরকারকে প্রতিবছর ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় যা তামাকজাত দ্রব্য থেকে প্রাপ্ত রাজ¯ে^র দ্বিগুণ।৩১

বিড়ি সিগারেটের ¶তিকর উপাদান
তামাক এবং বিড়ি সিগারেটের ধোয়ায় ৭০০০ বেশী ¶তিওকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যার মধ্যে ৭০ টি সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টিতে স¶ম।৩২

ধুমপান ও মাদকের উতপত্তি
১৮৯৮ সাল হতে হিরোইন ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে ধমনীতে এর ইনজেকশন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। হেরোইন এ সময়ে সর্বাপে¶া অধিক ব্যবহৃত এবং আলোচিত ¶তিকর মাদকদ্রব্য, সাদা বা বাদামী রঙের পাউডারের মতো। মাদকাসক্তদের কাছে ‘ব্রাউন সুগার’ নামে বেশি পরিচিত। এ মাদকদ্রব্যটির ম‚ল উৎস হচ্ছে আফিম।
মেসোপটেমিয়া, এশিয়া ও ইউরোপে ঔষধ হিসেবে আফিমের ব্যবহার শুরু হয় খ্রিষ্টপ‚র্ব ৬০০০ অব্দে। ১৫০০ খ্রিষ্টপ‚র্ব থেকে মিসরের চিকিৎসকগণ আফিমের ব্যবহার করত এ্যনেসথেকিরূপে। সেখানকার আদিম অধিবাসীগণ তখন কোক পাতা চিবিয়ে খেত। মে·িকোর ইন্ডিয়ানগণ খ্রিষ্টপ‚র্ব ১০০ অব্দে ধর্মীয় উৎসব ও আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য ঐধষষঁপরহড়মবহরপ চংরষড়পুনরহ সঁংযৎড়ড়স নামক উদ্ভিদের নির্যাস গ্রহণ করত; যাকে তারা বলত ‘ঈশ্বরের দেহমাংস’। ফনীমনসা জাতীয় (চবুড়ঃব) গাছের নির্যাসও তারা ব্যবহার করত। আমেরিকার গির্জাগুলোতে চযড়ঃব ক্যাকটাস ব্যবহারের নিয়ম ছিল।৩৩
গাঁজা তৈরি হয় ক্যানবিস স্যাটাইভা নামের এক ধরণের উদ্ভিদের পাতা, ডাল, ফুল ও বীজ থেকে। গাঁজাতে সাধারণত তামাকের চেয়ে ১২ গুণ টার ও ১০ থেকে ২০ গুণ কার্বন মনো·াইড বেশি থাকে, যার ফলে এ মাদকদ্রব্য সেবনে ফুঁসফুঁসে ¶ত বা ক্যান্সারের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
খ্রিষ্টপ‚র্ব ৬০০০ অব্দে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার যুগে এশিয়ার মাইনরে আফিম ও পপিকে আনন্দ উদ্দীপক নেশা হিসেবে ব্যবহার করত বলে পন্ডিতগণ মনে করেন। তাইওয়ানে প্রস্তর যুগের ১০,০০০ বছর প‚র্বেও গাঁজার ব্যবহার ছিল।
পোপাভার সমনিফেরাম নামক এক ধরণের উদ্ভিদের ফুলের রস থেকে আফিম তৈরি হয়। ১৮০৫ সালে মাটারনাম নামে একজন বিজ্ঞানী আফিম থেকে আরো শক্তিশালী বেদনানাশক দ্রব্য প্রস্তুত করেন এবং গ্রীক নিদ্রাদেবী ‘মার্ফিউস’ এর নামানুসারে এর নাম দেয় ‘মরফিন’।
চীনে খ্রিষ্টপ‚র্ব ৩০০০ অব্দে ‘মাহুয়াং’ নামক ড্রাগ ‘ইনথেলেন্ট’ রূপে ব্যবহারের কথা জানা যায়। প্রায় একই সময়ে চীনের সম্রাট সেনমুঙ্গ-এর শাসনামলে নেশাকর ড্রাগ হিসেবে গাঁজার ব্যবহার ছিল। প্রাচীনকালে চীন ছাড়াও পারস্য, তুরস্ক, মিসর, ইতালী, জার্মানি এবং অন্যান্য দেশে গাঁজার ব্যবহার ছিল।৩৪
কোকেন পৃথিবীর সর্বাপে¶া বেশি জনপ্রিয় ড্রাগ। ট্রাংকুলাইজারসের আবির্ভাব ঘটে ১৯৫০ সনে আমেরিকায়। উদ্ভিদের নির্যাস হতে তৈরি এই ঔষধ ভারতবর্ষে শত শত বর্ষ ধরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।৩৫
খ্রিষ্টপ‚র্ব ২০০০ অব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে ক্যানাবিসের প্রচলন শুরু হয়। সম্ভবত ভারতীয়রাই আফিম, ধুতুরা এবং ভাঙ ব্যবহারের সূচনা করে। বেশ কিছু সংখ্যক হিন্দু সাধক ¶ুধা এবং তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ক্যানাবিস ব্যবহার করতেন। এটি সম্ভবত ধ্যানে মগ্ন বা মনকে নিবিষ্ট করতে সাহায্য করত। ক্যানাবিস এক ধরণের পানীয় হিসেবে বহু মন্দিরে পরিবেশন করা হত। ক্যানাবিস বিভিন্ন উৎসবাদি যেমন হোলি, শ্রীভারতী এবং বিবাহ উৎসবে ব্যবহার করা হত।৩৬
সাধু-সন্ন্যাসী, বাউল, যোগী, তান্ত্রিক ইত্যাদি ধরণের লোক গাঁজা, ভাঙন সিদ্ধি সাধনায় ‘একাগ্রতা সৃষ্টি ও ধ্যানস্থ’ হওয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন পুরাণ ও উপকথায় নানা প্রসঙ্গে গাঁজার কথা পাওয়া যায়।৩৭
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পুরাণ-এ ধর্মীয় মর্যাদা প্রদান করে বলা হয়, ইন্দ্র তাঁর সহস্র চ¶ু, রোগ নাশক শক্তি ও দৈত্যনাশক ¶মতা দিয়েছেন এই গাঁজাকে। সেই থেকে হিন্দুদের কাছে গাঁজা গাছ ‘পবিত্রতার’ প্রতীক হয়ে আছে। তাদের কাছে ¯^প্নে গাঁজা গাছ-এর পাতা দেখা সৌভাগ্য¯^রূপ। বেদ-এ গাঁজা ও অন্যান্য দ্রব্য মিশ্রিত পানীয় কে দুশ্চিন্তানাশক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।৩৮

আইয়্যামে জাহিলিয়ার যুগ
অজ্ঞতার যুগে অন্যান্য অপরাধ ও অপকর্মের পাশাপাশি মদপানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। সুরা পান তখন আভিজাত্য বলে মনে করা হতো। প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানে সুরা পান ছিল অপরিহার্য উপাদান। ইসলামের বিকাশ লাভের প‚র্বে আরব দেশে সুরা পান ছিল একটি গ্রহণযোগ্য রীতি।৩৯
অ্যামফেটামিন এক জাতীয় কৃত্রিম ড্রাগ। ১৯৪০ সালে আমেরিকা, বৃটেন, জার্মানী ও জাপান সরকার সৈন্যদের মানসিক অবসাদ দ‚র করে কর্মোদ্দীপক করে তোলার জন্য এ্যামফেটামিন চালু করে।

বাংলাদেশে ধূমপানের উদ্ভব কখন?
বাংলাদেশে ধূমপানের সূত্রপাত হয় সম্ভবত চট্টগ্রাম বন্দরে পর্তুগীজদের আনাগোনার সাথে সাথে। এভাবে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যে দ¶িণ ও মধ্য আমেরিকার চুরুটের ব্যবহার ফ্রান্স, স্পেন, বৃটেনসহ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।৪০
তাই বলা যায়, অতীতকালে বিভিন্ন চিকিৎসার জন্য বেদনানাশক উপকরণ হিসেবে গাঁজা, মদ প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে এর সাথে সংযোজিত হয়েছে হেরোইন, প্যাথিড্রিন, ফেন্সিডিলের মতো মারাত্মক নেশাকর দ্রব্য। আর এই মাদকদ্রব্য ইতিহাসের ক্রমধারায় এখন শহর, নগর, বন্দর, গ্রাম সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে এবং বর্তমান বিশ্ব সভ্যতার জন্য একটি মারাত্মক হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার ও ব্যবহার
মাদকদ্রব্যের ¶তিকর প্রভাব, প্রতিক্রিয়া জানা এবং ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও বাংলাদেশে বহুকাল প‚র্ব থেকে মাদকাসক্তি সমস্যা বিদ্যমান। ৬০০-১০০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে রচিত চর্যাপদে বাংলাদেশের প্রাচীন গুঁড়িখানায় গাছের ছাল-বাকল দিয়ে চোলাই মদ তৈরির তথ্য পাওয়া যায়।৪১
বাংলাদেশে চোলাই মদ, তাড়ি, গাঁজা ইত্যাদির প্রচলন অনেক পুরানো হলেও এগুলোর ব্যবহার ম‚লত সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানাদির মধ্যে সীমিত ছিল।

আকাশ সংস্কৃতির হাত ধরে আধুনিক মাদকের অনুপ্রবেশ
ব্যাপকহারে মাদকের বিস্তার এবং প্রযুক্তির ছত্রছায়ায় লালিত আধুনিক নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার এদেশে খুব পুরানো নয়। সবচেয়ে ভয়াবহ নেশাজাতীয় দ্রব্য মরফিন বা হেরোইনের মত ¯^র্গানন্দ উদ্রেককারী মায়াবিস্তারকারী নেশা দ্রব্যের অনুপ্রবেশ এদেশে ১৯৮৩ সালের দিকে ঘটে বলে অনুমান করা হয়।৪২

কিছু প্রচলিত মাদক
বর্তমানে আমাদের দেশে বহুল ব্যবহৃত হেরোইন, প্যাথেড্রিন, ফেনসিডিল, বিয়ার, ব্রান্ডি, হুইস্কি, কোকেন, আফিম, ডায়াজেনাস, নাইট্রোজেনাম ইত্যাদি নেশাজাতীয় দ্রব্যের সয়লাব দেখা যায়।

দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা
লাখ থেকে ১৭ লাখ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতে এই সংখ্যা ১৫ ল¶ যার মধ্যে ৭০% যুব স¤প্রদায় এবং ১০% নারী।৪৩
শুধু ঢাকা শহরেই ১ ল¶ মাদকাসক্ত রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।৪৪
১৯৯৬ সালের মুক্তিনামের একটি বে-সরকারী মাদকাসক্তি নিরাময় ক্লিনিকের বরাতে দাবী করা হয়, কেবল ঢাকার একটি মাত্র থানা মোহাম্মদপুরেই ২২ হাজার মাদকাসক্ত রয়েছে।৪৫

বার প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স
মাদকদ্রব্যের খুচরা বিক্রয় এবং পান করা জন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয়। এগুলোকেই বার বলা হয়।বার প্রতিষ্ঠার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর লাইসেন্স দিয়ে থাকে। লাইসেন্স ছাড়া বার প্রতিষ্ঠা করা অবৈধ্য বলে বিবেচিত হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সরকারি এই সেবার মাধ্যমে বারের লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। এর ফলে বার মালিকরা বৈধ উপায়ে বার প্রতিষ্ঠা এবং মদের খুচরা বিক্রয় করতে পারে।৪৬

লাইসেন্স প্রাপ্ত মদ্যপায়ী
১৯৯৬ সালে দেশে ৬০,০০০ লাইসেন্স প্রাপ্ত মদ্যপায়ী ছিল। যাদের মধ্যে ৪০,০০০ তরুণ বয়সী, আর ১,০০০ জন মদ্যপায়ীর মধ্যে ১০ জনের বেশীর লাইসেন্স নেই।৪৭

পেশা অনুযায়ী মাদকাসক্তের হার
প্রতি ২,৪৪৩ মদ্যপায়ীর মধ্যে প্রায় ২৮৫ জন অর্থাৎ ১১.৬৭% ছাত্র।৪৮
বিভিন্ন কর্মচারী ৪৫%, ব্যবসায়ী-১৯%, চোরাচালানী-৫%, ছাত্রী-৬%, ছাত্র-৬%, বেকার- ১৫%, অন্যান্য ৫%। প্রথম পর্যায়েই ছাত্রদের সংখ্যা প্রায় ৬ শতাংশ। বিশ্বে মাদকাসক্তি বৃদ্ধির হার ২% ভাগ; বাংলাদেশে এই বৃদ্ধির হার ৩.৮% অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ।৪৯

মাদকাসক্তির পরিণতি
মাদকাসক্তি ব্যক্তি, পারিবার, সামাজ ও রাষ্ট্রে এমনকি পৃথিবীতে বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। মাদকাসক্তি চুরি, ছিনতাই, চোরাকারবার, ঝগড়া- ঝাটি, পরকিয়া, ধর্ষন, নারী নির্যাতন, ডিভোর্স প্রভৃতি সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দেয়। আন্তদেশীয় চোরাচালান অস্ত্র ও সন্ত্রাসের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে মাদকাসক্তি। এমনকি অভিজাত পরিবারের সন্তানের হাতে মা বাবার জোড়া খুনের ঘটনাও ঘটে মাদকাসক্তির পরিণতিতে। মাদকাসক্তির কিছু প্রভাব নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

১) নৈতিক ম‚ল্যবোধের বিদায়
একজন ব্যাক্তি যখন মাদকাসক্ত হয়ে পডে তার ভিতর থেকে সর্বপ্রথম নীতি নৈতিকতা, ধর্মের অনুশাষন, প্রচলিত সামাজিকতা, আদব কায়দা ও স্নেহবোধ সম্মানবোধের বিদায় ঘটে। ফলে তার আচরণে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ল¶ন দেখা দেয়। ধীরে ধীরে সে স্মাজ ও রাষ্ট্র ও পরিবারের ম‚ল্যবোধের বাইরে নিজের জন্য অন্য এক বিকৃত সুখ স্মভোগের জগত তৈরী করে নেয়।

২) অপরাধের বিস্তার
মাদকের কিছু প্রকরণ রয়েছে যেগুলো সেবন করলে নেশাকারী নিজের মাঝে এক[প্রকারের শক্তি অনুভব করে। সাময়িক এই শক্তিরবহিঃপ্রকাশ ঘটাতে কারণে অকারণে সে অন্যের উপর চডাও হতে পারে। অযথা ঝগড়া ফ্যাসাদে জড়িয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে বাবা-মা, ঘনিষ্ঠ ¯^জন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন, নেশাখোর পিতা মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার ক্রোধে নিজ সন্তানকে খুন করছেন অবলীলায়। নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা, মাকে জবাই করা, আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে স¤প্রতি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১০ বছরে নেশাখোর ছেলেদের হাতে অন্তত ২০০ জন বাবা-মা নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। একই সময়ে মাদকসেবী ¯^ামীর হাতে প্রাণ গেছে আড়াই শতাধিক নারীর।৫০
রাজধানীতে মাদকসেবী মেয়ের হাতে পুলিশ অফিসার বাবা ও মা খুনের ঘটনা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়। পুলিশের একাধিক প্রতিবেদনেও মাদকের জের হিসেবে অপরাধ বৃদ্ধির ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। ইদানীং মাদকাসক্তির কারণেই চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি, ডাকাতি ও খুন-খারাবির ঘটনা বেশি ঘটছে বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পারিবারিক বন্ধনের বিলুপ্তি
দেশজুড়ে নিয়ন্ত্রণহীন মাদকাসক্তির বিস্তৃতি ক্রমেই হয়ে উঠেছে সর্বগ্রাসী। এই ভয়াল মাদকাসক্তি তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব- সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছেবিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন পর্যন্ত।

শারীরিক পরিণতি
মাদক নির্ভরতা ব্যক্তির ¯^াস্থ্যহানি ঘটায়, রোগ ব্যাধি সৃষ্টি করে; ওজনহীনতা, শক্তিহীনতা ও ¶ুধামন্দায় ভোগায়। এদের কর্মোদ্দীপনা হ্রাস পায়, মতিভ্রম দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ¯^াস্থ্যহীন ও কংকালসার হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। মদ মানুষের শরীরে বহুমুখী ¶তিসাধন করে থাকে। মদের প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মানুষের হজম শক্তি বিনষ্ট হয়ে যায়, খাদ্য স্পৃহা কমে যায়, শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য লোপ পায়,চেহারা বিকৃত হয়ে পড়ে, মানুষ অকর্মণ্য হয়ে পড়ে, স্নায়ু দুর্বল হয়ে আসে, সামগ্রিকভাবে শারীরিক অ¶মতা বৃদ্ধি পায়, মদ যকৃৎ কিডনী সম্প‚র্ণভাবে বিনষ্ট করে ফেলে, য²া রোগ মদ পানেরই একটি বিশেষ পরিণতি। বর্তমানে এইডস এর প্রাদুর্ভাবেও মদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। মাদকসেবীদের মধ্যে ৯০% বহুগামিতায় অভ্যস্ত।৫১
ধুমপানের চলমান প্রবণতা বজায় থাকলে ২১ শতাব্দীতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মারা যাবে।৫২

মাদকাসক্তির কারণ
রাজনৈতিক ছত্রছায়া : প্রায়ই দেখা যায় মাদকাদ্রব্যের ক্রয় বিক্রয় ও মাদ·েবীদের আখড়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব জড়িয়ে পড়ে। যেমন কেবলকুমিল্লা জেলায় প্রতি মাসে ২০০ কোটি টাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন আটজন প্রভাবশালী নেতা।৫৩

সীমান্ত চোরাকারবার : ক·বাজারের টেকনাফ-উখিয়া অঞ্চল পরিচিত হয়ে উঠেছে ইয়াবার রাজ্য হিসেবে। মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা এ দুটি উপজেলার অসংখ্য পয়েন্ট হয়ে জোয়ারের মতো ঢুকছে ইয়াবা।
শুধু ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে এক-দেড় বছরের মধ্যেই টেকনাফ, উখিয়াসহ ক·বাজারের অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি কোটিপতি হয়ে উঠেছেন।৫৪
কোটিপতির তালিকায় আছেন ছাগল হাটের দালাল, অটো গাড়ির হেলপার, ফুটপাথ হোটেলের টেবিল বয় থেকে শুরু করে ডিঙ্গি নৌকার মাঝি পর্যন্ত।

সহজ প্রক্রিয়ার মদ তৈরী : বিভিন্ন কাশির ওষুধ সিরাপের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তৈরি করা এ নেশাদ্রব্য ঝাঁকি বা ‘ঘুটা’ নামেই বেশি পরিচিতি। ঘুটা তৈরির সবকিছু পাওয়াও যায় সহজেই। দামেও কম। সহজলভ্য মদ-গাঁজা আর নিজেদের তৈরি ঘুটার পাশাপাশি অননুমোদিত যৌন উত্তেজক নেশাজাতীয় কোমল পানীয় (এনার্জি ড্রিংক) দ্বারাও নেশা করছে তরুণ-তরুণীরা।

শি¶াপ্রতিষ্ঠানে নেশার বিস্তার : নেশার সর্বগ্রাসী থাবা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে শি¶া প্রতিষ্ঠানসম‚হে। উচ্চশি¶া প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডি পর্যায়েও মাদকের ভয়াল অভিশাপ নেমে এসেছে।৫৫
এছাড়াও সহজলভ্যতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, কালো টাকার আধিক্য, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ ইত্যাদি কারণে মাদকাসক্তের মিছিল দিন দিন দীর্ঘ থেকে।

মুক্তির উপায়
ট্যা· বৃদ্বি : এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে চক্রবৃদ্বিহারে ট্যা· বৃদ্ধির ফলে ধুমপানের বাজার সংকুচিত হয়। নিম্মে কিছু গবেষণা রিপোর্ট দেখলে অতি সহজে অনুধাবন হবে।
কর্মস্থলে ও রেষ্টুরেন্টে ধুমপান নিষিদ্ধ করা হলে এবং দেশব্যাপী সীগারেটের প্যাকেটে ১ ডলার ট্যা· বৃদ্ধি করলে ২ বিলিয়ন জীবন র¶া পাবে।৫৬
ট্যা· বৃদ্ধি করার ফলে তামাকজাত পণ্যের ম‚ল্য ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে তামাকদ্রব্যের ব্যবহার ৪ ভাগ হ্রাস পাবে।৫৭

বাংলাদেশে ধুমপানের ঝুকি
ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ২০১৬ সালের বার্ষিক বিক্রয় প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে তাদের অন্যতম বৃহৎ ও উর্ধমুখী বাজার বলে আখ্যায়িত করেছে।৫৮
২০১৬ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ সিগারেট বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮ ন¤^ারে। ঐ বছর যেখানে ১৩০ কোটি মানুষের ভারতে সিগারেটের মার্কেট ছিল ৮৪.৯ বিলিয়ন কাঠী সেখানে বাংলাদেশে সিগারেট বিক্রি হয়েছে ৮৬.১ বিলিয়ন শলাকা। তাও হাতে বানানো বিড়ি বিক্রি বাদ দিয়ে।৫৯
তামাকদ্রব্যে সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণনীতির ফলে বাধাগ্রস্থ হয়ে উন্নত দেশগুলোতে তামাকদ্রব্যের বিপনণ হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে ক্রমবর্ধনশীল বাজার হিসেবে এশিয়া ও আফ্রিকায় এর বাজার বাড়ছে। কেননা এতদ অঞ্চলে টোবাকো কোম্পানীগুলো কতৃপ¶ের উদারনৈতিক পর‌্যাবে¶ন পরিবেশ, উচ্চ জন্মহার ও আয় বৃদ্ধিও ত্রিত্ব সুবিধা পেয়ে থাকে।৬০

২০০৫-২০১৬ তে এশিয়া প্যসিফিক, মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকা অঞ্চলে ব্যপক মাত্রায় সিগারেট বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে যেখানে অন্যত্র হ্রাস পেয়েছে।৬১
বিশ্বের ৮০ ভাগের বেশী ধুমপায়ীর বসবাস নি¤œও মধ্যম আয়ের দেশে। ফলে তামাক কোম্পানীগুলোর টার্গেট হচ্ছে এসব দেশ।৬২

ইসলামে তামাক ও মাদক প্রসঙ্গ
হে মু’মিনগণ! মদ, জুয়া ম‚র্তিপ‚জার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানী কার্যের অন্তর্ভুক্ত; সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পা।৬৩

وَيُحِلُّلَهُمُالطَّيِّبَاتِوَيُحَرِّمُعَلَيْهِمُالْخَبَائِثَ তাদের জন্য পবিত্রবস্তুগুলোকে হালাল এবং অপবিত্র বস্তুগুলোকে হারাম করা হয়েছে। মদ ও তামাক নিঃসন্দেহে অপবিত্র। কাজেই এসবের উতপাদন, ব্যাবহার ও ব্যাবসা হারাম। সূরা আ’রাফ : ১৫৭

وَلَاتُلْقُوابِأَيْدِيكُمْإِلَىالتَّهْلُكَةِ আর নিজেকে নিজে তোমরা ধ্বংশেনিপতিত করো না। সূরা বাকারা-১৯৫
কাখনো অন্যের ¶তি করা যাবে না। নিজেও ¶তিগ্রস্থ হওয়া চলবে না।৬৪
আর এটাতো সুবিদিত যে ধূমপান ও মাদক সেবন সন্দেহাতীতভাবেই ¶তিকর। فَإِنَّالْمَلاَئِكَةَتَتَأَذَّىمِمَّايَتَأَذَّىمِنْهُبَنُوآدَمَ মান‚ষ যা দ্বারা কষ্ট পায় ফেরেশ্তারাও তাতে কষ্ট পেয়ে থাকে।৬৫
منآذىمسلمافقدآذانيومنآذانيفقدآذىالله যে কোন মুসলিমকে কষ্ট দেয় সে যেন আমাকেষ্ট দেয় আর যে আমাকে কষ্ট দেয় সে যেন খোদ আল্লাহকেই কষ্ট দেয়।৬৬
আর এ কথাতো সুবিদত যে ধুমপায়ী ধোয়া এবং দুর্গন্ধ দ্বারা পার্শস্থদের কষ্ট দিয়েই থাকে।

ধুমপান ও মাদকদ্রব্য রোধকল্পে প্রস্তাবিত সুপারিশমালা
১. কৌশল নির্ধারণ
ধুমপান ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সরকারে কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন। এ ¶েত্রে হঠাৎ করে তামাক ও মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ নিষ্ফল ও অমনোবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত হবে।
অন্যদিকে অনির্দিষ্টকাল যাবত এ মরণ নেশাকে নিজ¯^ গতিতে চলতে দেয়া হবে দেশ ও প্রজন্মের জন্য আত্মঘাতি। কাজেই এ ¶েত্রে ¯^ল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী একটি বিস্তারিত কর্মকৌশল গ্রহন করতে হবে।

২. তামাক ও মাদকদ্রব্য নিরোধক এ্যাডভাইজারী টাস্কফোর্স গঠন।
আইন, শাসন ও নির্বাহী বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়া সংস্কৃতি ও জনপ্রিয় ধর্মীয় সামাজিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, শি¶াবিদ, আন্তর্জাতিক দাতা ও সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ব ¯^াস্থ সংস্থা ও দেশী বিদেশী বিষয় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমš^য়ে একটি জাতীয় তামাক ও মাদকদ্রব্য নিরোধক ‘এ্যাডভাইজারী টাস্কফোর্স’গঠন করতে হবে। যাতে প্রত্যেকে নিজ কর্মপরিথির অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে ও সমান্তরাল আলোচনার মাধ্যমে ধুমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ,প্রতিরোধ, আক্রান্ত ও আসক্তদের ব্যাপারে নীতি নির্ধারণে ভ‚মিকা রাখতে পারেন। একই সাথে ¯^ ¯^ ¶েত্রে জনপ্রিয়তা ও প্রভাব এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তামাকাসিক্ত ও মাদকাসক্তি নিরোধে ভক্তকুল ও সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা ও প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেন।

৩.আইনের দুর্বলতা দ‚রীকরণ ও কঠোর আইন প্রণয়ন।
বিদ্ধমান আইন টোবাকো ও মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য এক ধরণের অভয়ারণ্যের বাজার সৃষ্টিতে অনেকটা সহায়ক। তাই আইনের ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করে তামাক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন আরো কঠোর করা উচিৎ।

৪. জনপ্রতিনিধিদের তামাক ও মাদকমুক্ত থাকার শপথ গ্রহণ।
মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা। তৃণম‚লের একজন ইউপি মে¤^ারের নিজ ওয়ার্ডে, চেয়ারম্যানের নিজ ইউনিয়নে স্থানীয় ব্যপক প্রভাব রয়েছে। এ প্রভাব খাটিয়ে বহু জনপ্রতিনিধি মাদক ও তামাক ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন। তাই স্থানীয় সরকার পর্যায়ে ইউপি মে¤^ার ও চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব গ্রহনকালে এ মর্মে শপথ করানো যেতে পারে যে তারা ধূমপান ও মাদকমুক্ত থাকবে? স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যদি শপথ বাক্যের মধ্যমে তামাক ও মাদক হতে বিরত রাখার সম্ভব হয় তাহলে তাদের আওতাধীন ৫০০০ ইউনিয়ন ৪৫০০ ওয়ার্ড প্রান্তিক পর্যায়ে এ শপথের একটা ইতিবাচক প্রভাব আশাকরা যায়।

৫. ধূমপায়ী ও মাদকসেবীদের নির্বাচনে অযেগ্য ঘোষণা করা।
বাংলাদেশে সময়ে সময়ে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন হয়। এ সময় প্রার্থী সমর্থক ও ভোটারদের মাঝে ব্যপক আগ্রহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা কনে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ¯^প্ন দেখে অনেকে। নির্বাচন কালীন এসময়ে ধূমপান ও মাদকাসক্তির প্রতি ঘৃনা সৃষ্টি করার সুযোগ হিসাবে গ্রহন করা যেতে পারে। প্রার্থীদের হলফনামায় ও নির্বাচনী আইনে ধুমপায়ী ও মাদকসেবীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে অন্তত প্রার্থীগণ প্রকাশ্যে ধুমপান ও মাদকসেবন হতে বিরত থাকবে। এতে ধুমপায়ী ও মাদকসেবীদের নির্বাচন বয়কট করার প্রবনতা তৈরী হবে। যা তামাক ও মাদকদ্রব্য প্রত্যাখ্যানে সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে।

৬. ট্যা· বৃদ্বি।
তামাক নিয়ন্ত্রণে ম‚ল্য ও কর বৃদ্ধি সর্বাধিক কার্যকর পদ্ধতি বিবেচিত বিধায় তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিতকরণ এবং জন¯^াস্থ্য উন্নয়নে এর উপর উচ্চ হারে করারোপ জরুরী।
কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ধোঁয়াযুক্ত ও ধোয়াঁবিহিন উভয় তামাক পন্যের সর্বনিম্ন বিক্রয় ম‚ল্য নির্ধারন করতে হবে। বিড়ি, সিগারেটের খুচরা বিক্রয় নিষিদ্ধ (সর্বনিম্ন ২০ শলাকা নির্ধারন) করতে হবে।
তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি ও নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে হুক্কা প্রতিক বরাদ্দ না করার

৭. ধাপভিত্তিক নির্মূলনীতি গ্রহন।
৩টি ধাপে মোট ১৫ বছরে ধুমপান ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভর। ধাপগুলো হবে নিম্নরুপ :

ধাপ ১ : নিরুৎসাহ ও ঘৃনা সৃষ্টির পর্ব।
১ম ৫ বছরে ক্রিড়া, বিনোদন, সংস্কৃতি, ধর্মীয় উপদেশ, ¯^াস্থগত ¶তিকর দিক উপস্থাপন, ও ব্যাপক সমšি^ত প্রচার অভিযানের মধ্যমে জনগণের মাঝে ধুমপান ও মাদকসক্তি প্রতি এমন তীব্র ঘৃণা ও অনাগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে যেন নতুন করে কেউ এসব কে গ্রহন না করে।
এবং জড়িতরা সমাজে একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে ¯^াভাবিক জীবনে ফিরে আনে। এতে ধুমপান ও মাদক ব্যপক হ্রাস না পেলেও বৃদ্ধি ঘটবে না মর্মে আশা করা যায়।

ধাপ ২ : কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিতকরন কঠোরতা আরোপ পর্ব।
তামাক ও মাদকদ্রব্যে চক্রবৃদ্ধি হারে কর আরোপ, রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া জটিলকরণ, তামাকজাত দ্রব্য পরিবহনে অতিরিক্ত ট্যা· আরোপ, কোম্পানীগুলোর লাভ সীমিত করণ, টোবাকো শ্রমিক ও বিপনন কর্মীদের উচ্চ বেতন কাঠামো নির্ধারণ প্রকাশ্য ধুমপানে জরিমানা বৃদ্ধি ও আদায় নিশ্চিৎকরণ।
মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের দ্রুত বিচার ট্রাইবুনা ¯^শ্রম কারাদন্ড ও জরিমানা আদায়, মদ্যপ অবস্থায় ড্রাইভিং করলে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করতে হবে কেননা এটা তার নিজের, যাত্রীর ও পথচারীর নিরাপত্তার ব্যাপার জড়িত। প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ও মদপান করলে ব্যাক্তিগত জাতীয় পরিচয় পত্রের কার্যকারিতা সীমিত সময়ের জন্য বাতিল করা যেতে পারে যেন কিছুদিন সে বিভিন্ন কাজে তা ব্যাবহার করতে না পারে। যত্রতত্র সিগারেটের বিক্রয় ও বিপণণ বন্ধে এবং কেউ চাইলেই যেন হেলায় খেলায় সিগারেট বিড়ি না পায় সে জন্য সিগারেটের খুচরা বিক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপে¶ে তামাক বিক্রির সরকারী লাইসেন্স গ্রহণের বিধি তৈরী করতে হবে। মদ ক্রয় ও সেবনের জন্য যেভাবে লাইসেন্সের বিধান রয়েছে তেমনি ধূমপানের জন্যও অনুমোদন নেয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। ইত্যাদি আইনগত কঠোরতা ও প্রয়োগ নিশ্চয়তার মাধ্যমে ধুমপান ও মাদকের প্রাপ্যতা কঠিন করে তুলতে হবে। এতে ধুমপান ও মাদকের ব্যবহার কাম্যপরিমানে হ্রাস পাবে।

ধাপ ৩ : ধুমপান ও মাদক সম্প‚র্ণ নিষিদ্ধকরণ
এটা ¯^ীকার্য যে মানুষ সর্বদা তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রন বজায় রাখতে পারে না। মানুষের আবেগ, আসক্তি ও সাময়িক সুখানুভ‚তির লোভ তাকে ভুল পথে নিয়ে যায়। এজন্য ধুমপান বা মাদকসেবন ¶তিকর ও অনুচিৎ জানা সত্তে¡ও বহু মানুষ আইনের কঠোরতা ও প্রাপ্তির দুর্লভ্যতার মাঝে ধুমপানে ও মাদকে সুখ খুজে বেড়াবে। যেমনঃ ধুমপানের বিষয়ে আদ্যপান্ত সবচেয়ে বেশী জানেন একজন ডাক্তার
একজন শি¶িত বিশেষজ্ঞ পেশাজীবি হয়েও অনেক ডাক্তার চে¤^ারে বসে রোগীর সামনে ধুমপান করতে দেখা যায়। এ¶েত্রে সচেতনতা ও আইনের বিধিনিষেধ অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটা তার মনোদৈহিক আত্মনিয়ন্ত্রণগত সীমাবদ্ধতার কারণে হয়ে থাকে। এজন্য চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে ধুমপান ও মাদক কে সম্প‚র্ণভাবে অবৈধ ঘোষণা করে এ সবের উৎপাদন, আমদানী, বিপনন, বিক্রয়, পরিবহন, ব্যবহার আগ্নেযন্ত্রের মতই চিরতরে অবৈধ ও নিশিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। এবং এই ঘোষণা কার্যকরের জন্য মানসিক প্রস্তুতি, প্রশাসনিক ও আইনী প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় নিয়ে অন্তত ৫ বছর আগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারী কিংবা সংসদে আইন পাশ করতে হবে।
একইভাবে ধুমপান ও মাদকসেবন কে শারিরিক ও আর্থিক শাস্তিযোগ অপরাধ এবং এসবের উৎপাদন বা বাজার জাত কিংবা আমদানী পরিবহন কে রাষ্ট্রদ্রোহী ও সমাজদ্রোহী অপরাধ বলে বিধিবদ্ধ করতে হবে।এ ছাড়াও নিম্মোক্ত সচেতনতাম‚লক কারযক্রম গ্রহণ করতে হবে।

প্রামাণ্যচিত্র
ধুমপান ও মাদকাসক্তির শারিরিক ও পারিপার্শিক পরিণতি তুলে ধরে বিভিন্ন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে, বা অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর রোগীদের ধুম্পানতৎ প‚র্বাপর জীবনালেখ্য নিয়ে বাস্তবিক ঘটনার আলোকে শতাধিক ডকুমেন্টারি বা প্রামাণ্যচিত্র তৈরী করে ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও প্রাইভেট টিভি মিডিয়ায় সেসব প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে। এতে ইতোমধ্যে যারা ধুমপান ও মাদকের নাগালে চলে এসেছে কিন্তু আসক্ত হয়ে পড়েনি তারা ফিরে আসতে পারে। এবং নতুন করে তামাক – মাদকের প্রতি ঝুকে পডার হার হ্রাস পাবে।
পথনাটকঃ পল্লী ও শহরাঞ্চলের বিভিন্ন জনবহুল পথের দ্বারে ও স্কুল কলেজের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় মঞ্চকর্মী ও আঞ্চলিক নাট্যকর্মিদের দিয়ে তামাক মাদক সেবনের পথ ও কারণ এবং ফলাফল চিত্রিত করে দেখাতে পারলে দর্শকরা বিনোদনের সাথে সাথে অবচেতনভাবেই সচেতন হয়ে উঠবে।
চলচিত্রঃ আধুনিক কালে সিনেমা বা চলচিত্র মানুষের বিনোদন চাহিদা প‚রণের অন্যতম বিস্তৃত মাধ্যম। তরুণ তরুণীরা পছন্দের নায়ক বা নায়িকা কিংবা খল নায়কের বেশ ভ‚ষা বাচন ও চলনভঙ্গি ধারন করে। হলিঊঢ,বলিউঢ ও ঢাকাইয়া সিনেমায় অহরহ দুঃখে, শোকে প্রেম বিরহে নায়ক নায়িকা কতৃক মদাক্রান্ত হয়ে দুঃখ ভুলার দৃশ্য দেখানো হয়। ভিলেনদের হাতে মদের বারে সম্মিলিতভাবে মদ পানের আনন্দ ও ফ‚র্তির ভিডিও দেখানো হয়। হাল জমানার ফ্যাশনে সিগারেট ধরিয়ে দেয়া হয় নায়কের হাতে। অনুকরণপ্রিয় তারুণ্য বাছবিছার ও পরিণতি চিন্তা ব্যাতিরেকে বয়সজনিত অপরিপক্কতা, আবেগ ও প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীর মত হতে গিয়ে অথবা সিনেমায় প্রদর্শিত বার্তামতে জীবনের ব্যাক্তিক পারিবারিক বা সম্পর্কের ভাংণ জনিত কষ্ট ভুলতে হাতে সিগারেট তুলে নেয়। মদের সন্ধানে নেমে পডে। মদ গিলার রোমান্সিজম উপভোগ করতে বন্ধুরাসহ মদের আসরে হাজির হয়। সিগারেট ও মদ পানকে ভাবে আধুনিকতা। ধীরে ধীরে বন্ধনহীন তারুণ্য সিগারেটের উডন্ত ধোয়ায়, মাদকের রঙ্গিন পেয়ালায় জীবন উপভোগের নতুন উপল¶ের দেখা পেয়ে যায়। তামাক মাদকের পেছনে উড়িয়ে দেয় কাড়ি কাড়ি টাকা। মেতে উঠে অন্যরকম ভোগবাদী ফ‚র্তিতে। আস্তে আস্তে হয়ে উঠে এসবে ভীষণভাবে আসক্ত। কাজেই ধুমপান ও মাদকসেবনের বিস্তারে প্রভাব বিস্তারকারী বিনোদন মাধ্যম হিসেবে দেশী বিদেশী চলচিত্রসম‚হের সরাসরি যাদুকরী ভ‚মিকা রয়েছে। সুতরাং “চরিত্রের প্রয়োজন” শীর্ষক ঠুনকো যুক্তি দিয়ে তামাক মাদকের দৃশ্যায়ণ বন্ধ করতে হবে। চলচিত্রশিল্পের নেতৃবৃন্দ ও সরকারের তথ্য এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এ¶েত্রে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নির্দেশনা জারি করতে হবে।

সামাজিক শপথ
ধুমপান ও মাদক দিবস উপল¶ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্দিষ্ট স্থানে সবার জন্য উন্মুক্ত পরিবেশে “ধুমপান ও মাদকসেবন করব না” মর্মে সামাজিক গণ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেতে পারে। শপথ গ্রহণ কারীদের জন্য আকর্ষণীয় উপহার রাখা যেতে পারে।
১১.মুক্ত ঘোষণাঃ
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও এলাকাকে তামাক ও মাদকদ্রব্য নিয়ণত্রণ কর্তৃপ¶ কর্তৃক ধুমপান ও তামাক মুক্ত আঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে প্রত্যয়ণপত্র দেয়া যেতে পারে। যা প্রাতিষ্ঠানিক বা স্থানিক সুনাম হিসেবে ধৃতব্য হবে।

আত্মহত্যা দুই ধরণের। একপ্রকারের মানুষ হঠাত করে জীবন নাশ করে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। যার পেছনে হয়তো অনেক অসহ্য যন্ত্রণা থাকে। অব্যক্ত বেদনার নীলাভ কষ্টে অভিমানে সবার অল¶ে হারিয়ে যায় আচানক। আমরা এটাকে বলি আত্মহত্যা ও মহাপাপ। আরেক প্রকারের মানুষ আছে যারা কারণে বা অকারণে, সামান্য দুঃখে, বা হতাশায় প্রায়ই আবার খামখেয়ালীপনায় অবচেতনে বন্ধুর পাল্লায় বা নিছক কৌতুহলে ধুমপানে ও মাদক সেবনে তিলে তিলে ধাপে ধাপে নিজেকে মৃত্যুর পথে ধাবিত করে। অথচ সমাজ তাকে আত্মহত্যাকারী এবং মহাপাপী বলে না। শোষোক্ত শ্রেণী নিজেকে ছাড়াও স্ত্রী, আদরের সন্তান, মা, বাবা, বন্ধু বান্ধব ও তৎপার্শস্থ মানুষজনকেও পরো¶ ধুমপানে, মাদকাসিক্তি জনিত আর্থ-সামাজিক মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত করে। অথচ সমাজ তাকে আতœহত্যাকারী,হত্যাকারী বা মহাপাপী বলে না; বরং বিদ্ধমান সমাজ ব্যবস্থার কাঠামোগুলো মাদক ও ধুমপানকে ¯^াভাবিক, আর মাদককে বাস্তবতা বলে ধরে নিয়েছে।

লেখক : মুহাম্মদ জিয়াউল হক

তথ্যসূত্র:
১. বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি)
২. অধ্যাপক ডা. দেওয়ান আবদুর রহীম, ধুমপানঃসুখটান না মৃত্যুবান,মনোজগত,বর্ষ ২০ সংখ্যা ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮,পৃষ্ঠা৩৮
৩. http://www.who.int/
৪. http://thechart.blogs.cnn.com/…/secondhand-…/comment-page-4/
৫. http://thechart.blogs.cnn.com/…/secondhand-…/comment-page-4/
৬. http://www.wbbtrust.org/bn/view/activitz_details/576
৭. ডক্টরমুহাম্মদ এনামুল হক ও অন্যান্য সম্পাদিত, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, ঢাকা বাংলা একাডেমী, ২০০০, পৃষ্ঠা ৯২৫
৮. মূল : আফীফ আব্দুল ফাত্তাহ তাববারা, ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, মাওলানা রিজাউল করীম ইসলামাবাদী অনুদিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম প্রকাশ জুন ১৯৮৬
৯. ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন প্রমুখ,‘বাংলাদেশের প্রে¶াপটে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তি সমস্যা : ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি; ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, মে সংখ্যা, ২০০৪, পৃষ্ঠা ৩
১০. এ.কে. নাজিবুল হক, মন ও মনোবিজ্ঞান, ঢাকা, ১৯৮৯, পৃষ্ঠা ২০০
১১. ড. ওয়াহাবা আয যুহায়লি, আলফিকহুলইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, দামেস্ক: দারুলফিকরি মুআমির, ২০০৬, পৃষ্ঠা ৫৪৮৬
১২. এ.কে.এম,মনিরুজ্জামান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন,ঢাকা: খোশরোজ কিতাব মহল, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ১
১৩. আব্দুল মুহাম্মদ সেলিম, সমাজকল্যাণঅনুক্রম, ঢাকা, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ৯১
১৪. আব্দুল মতিন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০, ঢাকা :মাদল প্রকাশনী, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা৪
১৫. আবদুল হাকিম সরকার প্রমুখ,‘বাংলাদেশে মাদকাসক্তি সমস্যা : সা¤প্রতিক গতি প্রকৃতি’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা, সংখ্যা-৫৬, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ২০৬-২০৭
১৬. দৈনিক ইত্তেফাক, ৮ই আগষ্ট, ২০০৮”
১৭. সাপ্তাহিক রোববার, সংখ্যা-২১, এপ্রিল-২০০৪, পৃষ্ঠা ৩০
১৮. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩১
১৯. ডা. নাভিদ ফারহান, মাদকের সংজ্ঞা এবং নির্ভরতা, মনোজগত,বর্ষ ২০ সংখ্যা ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮,পৃষ্ঠা ২৩
২০. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৮২
২১. স্মরণিকা-১৯৯৩, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৭০
২২. The dailz star,12 februarz,2015,
২৩. ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ দৈনিক যুগান্তর
২৪. ঢাকা টাইমস,২২ফেব্রুয়ারি,২০১৮
২৫. The Dailz Star, March 01, 2018
২৬. আল কুরআন,২;২১৯
২৭. http://amp.dw.com/
২৮. http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/517021
২৯. http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/517021
৩০. http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/517021
৩১. http://www.wbbtrust.org/bn/view/activitz_details/572
৩২. http://ntcc.gov.bd
৩৩. শাহীন আকতার, মাদকদ্রব্য ও বর্তমান বিশ্ব, ঢাকা: যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ১৯৯০, পৃষ্ঠা ১১
৩৪. আব্দুল হাকীম সরকার প্রমুখ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২০৮
৩৫. Enczlopedia Britannica (1978), Vol-20, p. 839
৩৬. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২০৮
৩৭. এ.কে.এম, সিরাজুল ইসলাম, ইসলামে নেশা, ঢাকা : মা প্রকাশনী, ১৯৯৩, পৃষ্ঠা ৮৬
৩৮. আবদুল হাকিম সরকার প্রমুখ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০৮
৩৯. এ.কে.এম. মনিরুজ্জামান, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৯
৪০. Enczclopedia Britannica (1978), Vol-20, p. 839
৪১. আবু তালেব, হেরোইন : আর এক মরণাস্ত্র, খুলনা: অমরাবতী প্রকাশনী, ১৯৮৮, পৃষ্ঠা ১৩৬
৪২. স্মরণিকা-মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস, ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ৫৭
৪৩. যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিবেদন, ১৯৯৪, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৯
৪৪. সৈয়দ শওকতুজ্জামান, বাংলাদেশ সামাজিক সমস্যা: ¯^রূপ ও সমাধান, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১৯৯৩, পৃষ্ঠা ২৬৬
৪৫. এম ইমদাদুল হক, মাদকাসক্তি: জাতীয় ও বিশ্ব পরিপ্রে¶িত, স্মরণিকা-১৯৯৬, পৃষ্ঠা ১৫।’’
৪৬. https://www.nhd.gov.bd/content/evi_লাইসেন্স_প্রদান
৪৭. দৈনিক জনকণ্ঠ, ২২ এপ্রিল, ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ৪
৪৮. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা সংখ্যা- ৬৮, ২০০০, পৃষ্ঠা ১৭৮
৪৯. স্মরণিকা-২০০০, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পৃষ্ঠা ৩০
৫০. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ এপ্রিল, ২০১৫
৫১. মাসিক অগ্রপথিক, ২২ বর্ষ, ৩য় সংখ্যা, মার্চ-২০০৭, পৃষ্ঠা ৮৭-৮৮
৫২. Jha P. Avoidable global cancer deaths and total deaths from smoking. Nature Reviews: Cancer. 2009 September; (9):655-664.
৫৩. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ এপ্রিল, ২০১৫
৫৪. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ এপ্রিল, ২০১৫
৫৫. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ এপ্রিল, ২০১৫
৫৬. https://www.acscan.org/…/…/acscan-smoke-free-laws-report.pdf.
৫৭. http://www.who.int/mediacentre/factsheets/fs339/en/]
৫৮. British American Tobacco. Annual Report 2016. Available from medMDAKAJCS.pdf www.bat.com/…/sites/uk__9d9k…/vwPagesWebLive/DO9DCL3B/$FILE/
৫৯. Euromonitor International [database on the Internet]. Global Tobacco: Kez Findings Part I- Cigarettes. Euromonitor International; c 2017
৬০. Yerramilli, P. The Argument for Global Tobacco Control. The Journal of Global Health. 2013; 3(1):14-19
৬১. Euromonitor International [database on the Internet]. Cigarettes. Euromonitor International; c 2017
৬২. World Health Organization (WHO). Tobacco Fact Sheet. Maz 2017. Available from www.who.int/mediacentre/factsheets/ fs339/en/.
৬৩. আল-কুরআন, ৫ : ৯০
৬৪. رواهأحمدوابنماجه
৬৫. বুখারী ও মুসলিম
৬৬. رواهالطبرانيفيالأوسط
৬৭. http://www.wbbtrust.org/bn/view/activitz_details/350

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন