আজ ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রবিবার | ৫ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- রাত ৩:৩৩

আজ ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রবিবার | ৫ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একান্ত সাক্ষাৎকারে ইশা ছাত্র আন্দোলন এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা নূরুল ইসলাম আল-আমীন

‘ইশা ছাত্র আন্দোলনই আগামী দিনে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিবে, ইনশাআল্লাহ’
মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম আল-আমীন ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল জেলার অন্তর্গত বাকেরগঞ্জে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল মোতালেব চৌধুরী। স্থানীয় ক্বেরাতুল কুরআন (খাছ) মাদরাসা থেকে তাঁর পড়াশোনার হাতে খড়ি, অতঃপর বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪র্থ শ্রেণী, পাদ্রীশিবপুর মুহাম্মাদিয়া ফাজিল মাদরাসা এবং বাকেরগঞ্জ মুজাহিদিয়া কেরামতিয়া আলিম মাদরাসা থেকে যথাক্রমে ৫ম,৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করার পরে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই আহসানাবাদ রশীদিয়া কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম শেষ করেন। তারপর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে ফাজিল ও কামিল শেষ করেন। সংগঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মেধাবী এই ছাত্রনেতা একেবারেই তৃণমূল থেকে কাজ শুরু করে সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দেশের অনেক সংকটময় মুহুর্তেও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-উপজেলা-জেলা ও একাধিক কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালনের পর সর্বশেষ ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বিপ্লবী এই ছাত্রনেতার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সাংগঠনিক জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাপ শেষে তা ছাত্র সমাচারে তুলে ধরেছেন ছাত্র সমাচারের নির্বাহী সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ আল-আমিন।

ছাত্র সমাচার : ইশা ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ততা ও দায়িত্ব পালন সম্পর্কে কিছু বলুন?
নূরুল ইসলাম আল-আমীন : ছোট বেলায়ই ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর দাওয়াত পাই। ‘দ¦ীন কায়েম এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিজেকে পরিচালনা করা যাবে’ এই প্রত্যাশায়ই মূলত ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর সাথে সম্পৃক্ত হই। ১৯৯৭ সালে সদস্য হওয়ার পর বাকেরগঞ্জ উপজেলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। তারপর চরমোনাই আহসানাবাদ রশীদিয়া কামিল মাদরাসায় ১০ম শ্রেণির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, আলিম শ্রেণির অর্থ সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ফাজিল শ্রেণির সভাপতি, মাদরাসা শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ২০১১ সেশনে কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক, ২০১২ সেশনে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, ২০১৩ সেশনে জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১৪ সেশনে সেক্রেটারি জেনারেল এবং ২০১৫ ও ২০১৬ সেশনে কেন্দ্রীয় সভাপতি দায়িত্ব পালন করি।

ছাত্র সমাচার : ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন থেকে বিদায়ের পর আপনার অনুভূতি কী?
নূরুল ইসলাম আল-আমীন : আমি মনে করি এটা বিদায় না। একই বিল্ডিংয়ে স্থান পরিবর্তন করেছি মাত্র। যা খুবই স্বাভাবিক। ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে তাই বিদায় নিতে হয়েছে। যেহেতু আমরা শপথ পড়ি যে, আজীবন ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকব। সেই হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বা তার সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড পর্যায়ে হলেও দায়িত্ব পালন করব ইনশাআল্লাহ।

ছাত্র সমাচার : কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করার পর এখন আপনার অনুভূতি কী?
নূরুল ইসলাম আল-আমীন : ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন একটি মাকবুল সংগঠন। এর বহু নিদর্শন আপনাদের কাছে আছে, আমার কাছেও আছে। যেহেতু সংগঠনের সর্বোচ্চ জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছি, তাই আমাদের কাছে একটু বেশি আছে। আমার মত একটা সহজ-সরল ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনের এত বড় দায়িত্ব পালন করাকে প্রথমে কষ্টসাধ্য মনে করেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে দেখেছি, অনেক সময় দেশের সংকটময় মুহুর্তেও যখন সমস্ত ছাত্র সংগঠন প্রায় ম্রিয়মান, তখন ছাত্র আন্দোলনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং তা সহজেই বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে আল্লাহ তা’আলার খাস রহমত ও পরামর্শভিত্তিক কাজের জন্যই।

ছাত্র সমাচার : আপনার দীর্ঘ সাংগঠনিক জীবনের কোন স্মরণীয় ঘটনা বলবেন কী?
নূরুল ইসলাম আল-আমীন : কাজে একনিষ্ঠতা থাকলে সব কাজই আল্লাহ তা’আলা খুব সহজেই করে দেন। আমি তখন চরমোনাই মাদ্রাসা শাখার দায়িত্বশীল। প্রোগ্রামে যিনি কেন্দ্রীয় মেহমান হিসেবে গিয়েছিলেন, বিশেষ কারণে তাকে রাতেই ঢাকায় ফিরতে হচ্ছিল। আল্লাহর ওপর ভরসা করে আমরা রাত বারটার দিকে বরিশাল বাস স্ট্যান্ডে আসি। ধারণাও ছিল না যে, কোন গাড়ী পাব। কারণ, ঐ সময় ঢাকাগামী কোন গাড়ী সাধারণত থাকে না। আমাদেরকে দু‘মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি। পটুয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা একটি গাড়ী দেরীতে ফিরছিল। তাতে একটি মাত্র সিটই খালি ছিল। তাতেই তিনি রওয়ানা দিতে পারলেন। এটা আল্লাহর খাস রহমত ছাড়া কিছু নয়।

ছাত্র সমাচার : গত ২৬ আগস্ট আপনার নেতৃত্বে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইশা ছাত্র আন্দোলনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুনর্মিলনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৬ বছরে পদার্পন করে ইশা ছাত্র আন্দোলনের কী সক্ষমতা দেখছেন?
নূরুল ইসলাম আল-আমীন : সব কাজেই যেকোন একজনকে নেতৃত্ব দিতে হয়। সেই হিসেবে চেষ্টা করেছি সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করার। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে সকলের সর্বোচ্চ চেষ্টায় উপস্থিতি, প্রচার ও রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেছি। ২৫ বছর পুনর্মিলনী সমাবেশের মাধ্যমে বিগত সকল সাবেক দায়িত্বশীল ভাইদের পুনরায় বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি এবং যারা ঝিমিয়ে পড়েছিল তাদেরকে আবারও বিপ্লবী চেতনায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশের সনামধন্য বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ, প্রশাসন ও সাংবাদিকসহ সর্বমহলের কাছে ইশা ছাত্র আন্দোলন আগামী দিনে বড় শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

ছাত্র সমাচার : বিতর্কিত শিক্ষানীতি ও শিক্ষাআইন পরিবর্তনের দাবীতে গত বছর জুড়ে চলমান আন্দোলন ও এর ফলাফল সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
নূরুল ইসলাম আল-আমীন : আলহামদুলিল্লাহ! গত এপ্রিলের শুরুতে একটি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে জানতে পারলাম, বিতর্কিত শিক্ষাআইন‘১৬ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এবং পাঠ্য সিলেবাস নাস্তিকতা ও হিন্দুত্ববাদে ভরপুর। তখনই আমরা বিষয়টি আরোও খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিত হই এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-কে তা অবগত করি। তারপর এ বিষয় নিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি, শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি, শিক্ষকদের সাথে খোলা চিঠির মাধ্যমে মতবিনিময় করেছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমনে মানববন্ধন করেছি, ইসলামী আন্দোলনের সাথে বিভাগীয় ও জাতীয় মহাসমাবেশ করেছি, লিফলেট বিতরণ করেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্দানে ছাত্র সমাবেশ করেছি ও গণ-স্বাক্ষর গ্রহণসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে সহযোগীতা করেছি। এ ছাড়া দেশের উল্লেখযোগ্য ইসলামী ছাত্র সংগঠনসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করেছি। আলহামদুলিল্লাহ! এখন একটা ভাল সমাধান এসেছে। তবে সমাধানের পরে হাতে গোণা কিছু বুদ্ধিহীন নাস্তিক সম্প্রদায় এটা পরিবর্তন করার অপচেষ্টা করছে। আমাদের আশা ও বিশ্বাস- বাংলাদেশের তৌহিদী জনতা তা কখনোই হতে দেবে না।

ছাত্র সমাচার : পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.) কে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁর সম্পর্কে কিছু বলুন।
নূরুল ইসলাম আল-আমীন : আসলে তাঁর সম্পর্কে স্বল্প পরিসরে কিছু ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। তবে হুজুরের একটা উল্লেখযোগ্য গুণ হলো, তিনি বাতিলের সাথে কখনো আপোস করেন নি। আমি দেখেছি, যখন দেশের উল্লেখযোগ্য উলামায়ে কেরাম নারী নেতৃত্বের সাথে মিশে গিয়েছিল, তখন তিনি হাজারো বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যয় অবিচল ছিলেন। আল্লাহ না করুন, হুজুর যদি সে সময় তাদের সাথে মিশে যেতেন তাহলে হয়তবা উলামায়ে কেরাম নারী নেতৃত্বের মত একটা হারাম ব্যাপারে ইজমায় উপনিত হত। আমি বিভিন্ন সময় দেখেছি, যদি হুজুরকে বলা হত এখানে জামাত, দেওয়ানবাগী বা অন্য কোন বিদয়াতীদের প্রভাব বেশি, তাই এ সম্পর্কে আলোচনা না করাই ভাল। হুজুর সেদিন স্টেজে গিয়ে প্রথমেই সে ব্যাপারে আলোচনা করতেন। এভাবে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
ছাত্র সমাচার : ইশা ছাত্র আন্দোলনের সর্বস্তরের জনশক্তি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
নূরুল ইসলাম আল-আমীন : আমাদের এখন যে জনসমর্থন আছে এটাকে যদি জনশক্তিতে পরিবর্তন করতে পারি তাহলে বিপ্লবের পথ অনেক তরান্বিত হবে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের মাঠ পর্যায়ে যে জনশক্তি আছে তাঁরা যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতি মাসে চারজন করে সদস্য তৈরি করতে পারে এবং গখঝ পদ্ধতির মাধ্যমে জনশক্তি কার্যক্রমকে মজবুত করতে পারে তাহলে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনই আগামী দিনে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে, ইনশাআল্লাহ।

ছাত্র সমাচার : আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় থেকে আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
নূরুল ইসলাম আল-আমীন : আপনাকে সহ ছাত্র সমাচারের সকল পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও কতৃপক্ষকেও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। সর্বোপরি আল্লাহ তা’আলা আমাকে ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর সকল স্তরের জনশক্তিকে কবুল করুন। আমীন ॥

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন