আজ ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- বিকাল ৩:৩৩

আজ ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলাম

ইসলাম কী?
এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্নভাবে দেওয়া সম্ভব। ইসলামের বিভিন্ন ধরনের ও বিচিত্র আঙ্গিকের ব্যাখ্যা বাজারে প্রচলিত আছেও। বিভিন্ন শ্রেণী ও সম্প্রদায় ইসলামকে নিজেদের রঙে রঙিন করার চেষ্টা করেছেন, করেই যাচ্ছেন। ইসলাম কী? এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন শ্রেণী ও সম্প্রদায়ের ব্যাখ্যার চেয়ে স্বয়ং ইসলাম নিজের পরিচয় কীভাবে দেয়, সেটাই বেশি বিবেচনাযোগ্য; এবং এটি ইসলামের প্রতি ইনসাফও বটে।

সেক্যুলারিজমের প্রচলিত একটি অর্থ হলো ইহজাগতিকতা। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখি যে, ইসলামের মর্ম কথাও এটাই। ইসলাম শুধু পরকালীন মুক্তির কথাই বলে না, ইহকালীন কল্যাণের কথাও বলে। ইসলাম ইহকালীন কল্যাণের পাশাপাশি পরকাল স্বীকার করে, অন্যদিকে শুধু ইহজগত নিয়েই সেক্যুলারিজমের কারবার।

মোটাদাগে ইসলামের সঙ্গে সেক্যুলারিজমের পার্থক্য হলো ইসলামের ইহজাগতিক নির্দেশনার ভিত্তি অহী, সেক্যুলারিজমের তা নয়। সেক্যুলার নৈতিকতার কোনো কেন্দ্রীয় মাপকাঠি নেই; ফলে সেক্যুলারিজমে শৃঙ্খলা অনুপস্থিত। পক্ষান্তরে ইসলামের সকল বিধানেরই মাপকাঠি কুরআন-সুন্নাহ; ফলে শৃঙ্খলা উপস্থিত। সেক্যুলারিজমের ভিত্তি মানুষের চিন্তা ও মূল্যবোধ। অথচ চিন্তা ও মূল্যবোধ স্থান, কাল ও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এক স্থানে ও সময়ে যা ঠিক বলে মনে হয়, অন্য সময়ে ও স্থানে তা ঠিক মনে নাও হতে পারে। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন দেশের আইন-কানুন বিভিন্ন হয়। কারণ প্রত্যেক দেশের মানুষের চিন্তা ও মূল্যবোধ এক নয়। যে জিনিস স্থান-কাল-ভেদে বিভিন্ন হয়, তা কোনো কিছুর মাপকাঠি হতে পারে না। এজন্য শুধু চিন্তা ও মূল্যবোধকে ইসলাম মাপকাঠি বলে স্বীকার করে না। ইসলাম মাপকাঠি স্বীকার করে সেই সত্তার বাণীকে, যিনি বিভিন্ন চিন্তা ও বিচিত্র ধ্যানধারণা দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ অহী, তথা কুরআন-সুন্নাহই হলো মাপকাঠি। এই এক ও অপরিবর্তনীয় কেন্দ্রীয় মাপকাঠির কারণেই ইসলামী সমাজব্যবস্থা একটাই। অথচ মানবরচিত সেক্যুলার সমাজব্যবস্থা বিভিন্ন। গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্রসহ বিচিত্র ধরনের সেক্যুলার মানবরচিত সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন রূপ দেখা গেলেও ইসলামী সমাজব্যবস্থার রূপ অপরিবর্তিত।

এটা স্বীকৃত যে, ইসলাম এমন একটি জীবনববিধান যা ধনী-গরিবের, সাদা-কালোর, উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ ভুলিয়ে সবাইকে নিয়ে যায় এক আল্লাহর আনুগত্যে। মানুষের আত্মপরিচয়, মনুষ্যত্ববোধ, নৈতিকতা ও চিন্তার পরিশুদ্ধতাসহ যা কিছু প্রয়োজন তা ইসলামই একমাত্র দিয়েছে।

ইসলাম মানুষকে জীবনের জটিলতা থেকে বের হতে শিখিয়েছে, যুগিয়েছে জীবন পথের পাথেয়। দৃশ্যমান করে দিয়েছে আঁধারে ঢাকা সুন্দর সুসজ্জিতজীবন বিধানকে। মানুষকে পৌঁছে দিয়েছে সফলতার সর্বোচ্চস্তরে। পশুত্ব থেকে তুলে এনে বানিয়েছে সৃষ্টির সেরা জীব। অহমিকা, হিংস্রতা, অহংকার ও আত্মগৌরব ভুলিয়ে সত্যিকারের মানুষ বানিয়েছে ইসলাম। মানবজীবনে ইসলামের অবদান অতুলনীয়। ইসলামের কল্যাণে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ, আনুগত্য, একে অপরের প্রতি স্নেহ-শ্রদ্ধা, ভক্তি-ভালবাসার এক অনন্য নিদর্শন তৈরি করেছে।

ইসলাম অর্থ কী? ইসলাম বলতে কী বোঝায়? কী তার প্রকৃতি ও পরিধি?
কুরআন-হাদীস, শাস্ত্রবেত্তা ও অভিধানের আলোকে আসুন এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা লাভের চেষ্টা করি।

প্রথমে প্রতিষ্ঠিত ও প্রখ্যাত ভাষাবিদদের লিখিত অভিধানগুলোতে ইসলামের পরিচয় দেখব। তারপর আল্লাহ রব্বুল আলামিনের পবিত্র গ্রন্থ ও মুসলিম উম্মাহর ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির ফর্মুলা আল কুরআনুল কারীম এবং মানবতার মুক্তির দূত, মুসলিম উম্মাহর অনুপম আদর্শ প্রিয় নবী সা.-এর হাদীস থেকে ইসলাম শব্দের পরিচয় জানব। এরপর উম্মাহর রাহবার বরেণ্য আলেমদের দৃষ্টিতে ইসলামের পরিচয় জানার চেষ্টা করব।

ভাষাবিদদের দৃষ্টিতে ইসলাম:
রাসূল সা.-এর আনিত বিষয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা এবং তা গ্রহণ করা। অথবা রাসূল সা.-এর আনিত ধর্মের নাম ইসলাম। এবং মুসলিম শব্দটি আহলুল ইসলাম বা ইসলামের অনুসারী অর্থে ব্যবহৃত হয়। (আল মুনজিদ, পৃষ্ঠা ৩৪৭)

আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্টি ও আদেশসমূহের প্রতি আত্মসমর্পণ করা। যেমন বলা হয়ে থাকে “اسلمالرجل” লোকটি আত্মসমর্পণ করলো। এই অর্থেই হাদীসের ব্যাখ্যা করা হয়েছে,ولكناللهاعاننيعليهفاسلمايانقادوكفعنوسوستي অর্থাৎ “কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাকে সাহায্য করেছেন, ফলে সে আত্মসমর্পণ করেছে। আমাকে ধোঁকা দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে”।

বলা হয়, ‘আসলামু’ অর্থাৎ ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং মুসলমান হয়েছি। ফলে আমি তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ হয়েছি। আল্লাহ তাআলার ইরশাদ: বেদুঈনরা বলে, ‘আমরা ঈমান আনলাম’। বলুন, ‘তোমরা ঈমান আননি, বরং তোমরা বল, ‘আমরা আত্মসমর্পণ করেছি।’ (সূরা হুজুরাত ১৪)

রাসুল সা.-এর আনিত ধর্মের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা এবং গ্রহণ করা। যেমন সে মুসলমান হওয়ার অভিনয় করছে। অর্থাৎ অমুক কাফির ছিল অতঃপর মুসলমান হওয়ার অভিনয় করছে। সে পরে বিষয়টি আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছে। অর্থাৎ সোপর্দ করেছে। (تاجالعروسمنجواهرالقاموسللزبيديالحنفي ১৬/৩৫১)

শরীয়তের পরিভাষায় ইসলাম হলো, আনুগত্য প্রকাশ করা এবং শরীয়তের প্রকাশ ও রাসূল সা.-এর আনিত ধর্ম কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করা।

সালাব চমৎকারভাবে সংক্ষিপ্ত করে বলেছেন, ইসলাম হলো মুখে স্বীকার করার নাম আর ঈমান হলো অন্তরে বিশ্বাস করার নাম।

আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে বাশশার বলেন, বলা হয়ে থাকে অমুক মুসলমান। যদি তার সাথে বিশ্বাস এবং অন্তরের সত্যায়ন থাকে, তাহলে সেটা হলো ইসলাম। সুতরাং যে ব্যক্তি শরীয়ত কবুল করাকে প্রকাশ করেছে এবং মাকরূহ বিষয়ের দূরীকরণে আত্মসমর্পণ করেছে, বাহ্যিকভাবে সে মুসলমান এবং অভ্যন্তরীণভাবে সত্যায়নকারী। আর ঈমানদারকে অন্তরে সত্যায়নকারী হতে হবে। কেননা সত্যায়ন করার নাম ঈমান। সুতরাং মুমিন বাহ্যিকের ন্যায় অন্তরে সত্যায়নকারী এক পরিপূর্ণ মুসলমান। সুতরাং যে মুসলমান আত্মরক্ষার জন্য ইসলামে প্রবেশ করেছে অথচ বাস্তবে সে মুমিন নয়, তবু বাহ্যিকভাবে তার হুকুম মুসলমানদের মতো।

এখানে দু’টি বিষয় রয়েছে, ১. আল্লাহর আদেশ আত্মসমর্পণকারী। ২. খালেস আল্লাহর জন্য ইবাদতকারী। আরবদের মতে, কারো নিকট কোন কিছু সমর্পণ করল। অর্থাৎ তা শেষ করল।لسانالعربلابنمنظورالمصوي ৩/৩২৭

কুরআনের ভাষায় ইসলামের পরিচয়
একমাত্র ইসলাম ধর্মেই মানবজাতির কল্যাণ নিহিত। ইসলাম ছাড়া অন্য পথ ও মতের অনুসারীরা ক্ষতিগ্রস্থ। ইসলামের প্রতিটি বিষয় মানব কল্যাণের জন্য। এতে কোনো ক্ষতি বা প্রান্তিকতার ছোঁয়া নেই। সবার জন্য উপযোগী তার বিধি-বিধান। কারো উপর অযাচিত কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। সর্বোপরি মানুষের কল্যাণ ও আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন
নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহ্র নিকট একমাত্র দীন। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা কেবলমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ তাদের নিকট জ্ঞান আসার পর মতানৈক্য ঘটিয়েছিল। আর কেউ আল্লাহ্র আয়াতসমূহে কুফরি করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা আল ইমরান: ১৯)

আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবেনা এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আল ইমরান : ৮৫)

তোমাদেও জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোস্ত , আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা পশু, গলা চিপে মারা যাওয়া জন্তু, প্রহারে মারা যাওয়া জন্তু, উপর থেকে পড়ে মারা যাওয়া জন্তু, অন্য প্রাণীর শিং এর আঘাতে মারা যাওয়া জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু ; তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া আর যা মূর্তিপূজার বেদীর উপর বলী দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করা এসব পাপ কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীনের বিরূদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে ; কাজেই তাদেরকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতঃপর কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা মায়েদা : ৩)

সুতরাং আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন এবং কাউকে বিপদগামী করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ খুব সংকীর্ণ করে দেন; (তার কাছে ইসলামের অনুসরণ) মনে হয় সে কষ্ট করে আকাশে উঠেছে, এভাবেই আল্লাহ শাস্তি দেন তাদেরকে ; যারা ঈমান আনে না। (সূরা আনআম : ১৩৫)

তারা আল্লাহ্র শপথ করে যে, তারা কিছু বলেনি; অথচ তারা তো কুফরি বাক্য বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর তারা কুফরি করেছে ; আর তারা এমন কিছুর সংকল্প করেছিল যা তারা পায়নি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করেছিলেন বলেই বিরোধিতা করেছিল। অতঃপর তারা তাওবা করলে তা তাদের জন্য ভালো হবে, আর তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন ; আর যমীনে তাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা আত তাওবা : ৭৬)

আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন ফলে সে তার রবের দেয়া নূরের উপর রয়েছে, সে কি তার সমান যে এরূপ নয় ? অতএব দুর্ভোগ সে কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের জন্য, যারা আল্লাহর স্মরণ বিমুখ, তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে। (সূরা যুমার : ২২)

তারা ইসলাম গ্রহণ করে আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। বলুন, ‘তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না, বরং আল্লাহ্ ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা হুজরাত : ১৭)

আর সে ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আরকে, যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে ? অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (সূরা সফ : ৭)

হাদীসের আলোকে ইসলামের পরিচয়:

হযরত ইবন উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি:
১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সা. তাঁর রাসূল – এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
২. সালাত (নামায) কায়িমকরা।
৩. যাকাত আদায় করা।
৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং
৫. রমযানের সিয়াম পালন করা (রোজা রাখা)।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৮)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছেন, বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলাম উত্তম হয়, আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। অতঃপর শুরু হয় প্রতিফল, একটি পূণ্যের বিনিময়ে দশ হতে সাতশ গুণ পর্যন্ত, আর একটি পাপ কাজের বিনিময়ে মন্দ সমান প্রতিফল। অবশ্য আল্লাহ যদি ক্ষমা করে দেন তবে তা অন্য ব্যাপার। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৪১)

হযরত আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, ইসলামে কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, যার জিহবা ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১১)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল সা.-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সকলকে সালাম দেবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১২)

বরেণ্য ইমাম ও আলেমদের দৃষ্টিতে ইসলামের ব্যাখ্যা:
ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. বলেছেন, ইসলাম আল্লাহর আদেশের সামনে নত হওয়া। ঈমান ও ইসলামের মধ্যে শাব্দিক অর্থে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও পরিভাষায় উভয়টি অভিন্ন। ঈমান ব্যতিরেকে মুসলিম হতে পারে না, ঠিক এর বিপরীত ইসলাম ব্যতিরেকে মুমিন হতে পারে না। উভয়টি একে অপরটির পরিপূরক।

ইমাম গাজালী রহ. বলেন, ইসলাম নিজেকে খোদার সমীপে অর্পণের নাম। আত্মিক সমর্পণ অথবা আনুগত্যের শব্দ মুখে উচ্চারণ করে এবং অঙ্গ প্রতঙ্গের মাধ্যমে ‘দ্বীনি’ আমলকে রূপায়িত করে। তবে সর্বোৎকৃষ্ট আনুগত্যের নাম আত্মিক আনুগত্য ও আন্তরিক বিশ্বাস ; যার অপর নাম ঈমান। ১৬৫/১ إحياءعلومالدين

ইবনে জারীর তাবারী স্বীয় গ্রন্থ তাফসীরে তাবারীতে انالدينعنداللهالسلام এই আয়াতের ব্যাখ্যায় কাতাদা রা. থেকে একটি উক্তি বর্ণনা করেছেন ; কাতাদা রা. আয়াতটি তেলাওয়াত করে বললেন, ইসলাম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর নাম। আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের ঘোষণা এবং আল্লাহ প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ বিষয়ে একান্ত স্বীকৃতি। আর এটাই দীন যা নিয়ে আল্লাহ তার রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন।

আল্লামা শাহ আব্দুল হক দেহলবী রহ. বলেন, শরয়ী পরিভাষায় ইসলাম হলো, বাহ্যিক দ্বীনি আমলের মাধ্যমে আনুগত্য। আর ঈমান অন্তরীণ বা অভ্যন্তরীণ সত্যায়ন। তাহলে ইসলাম হলো ঈমানের ফল। যা বাস্তব সমর্থন ও সত্যায়ন। এ উভয়ের সমষ্টি হলো ‘দ্বীন’শব্দটি। যা ঈমান এবং ইসলামকে বুঝায়। যেমনটি হাদীসে জিবরাইলের বর্ণনায় এসেছে। لمصابالتنقيحفيشرح ৬৫/১مشكاةالمصابيح

মাওলানা মুনজুর নোমানী রহ. বলেন, ইসলাম হলো আত্মসমর্পণের নাম। আনুগত্যের নাম। রাসূলগণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা যে ‘দ্বীন’ পাঠিয়েছেন তাকে ইসলাম এ জন্য বলা হয় যে, মানুষ এই দ্বীনকে নিজের জীবনের সমূহ আপদের আশ্রয়পূর্ণ আনুগত্য খুঁজে নেয়।

মোটকথা, ইসলামের বিষয় হলো অনুসরণ। আল্লাহ তাআলার ইরশাদ তোমাদের রব এক ও একক। (তিনি আল্লাহ) সুতরাং তাঁর আনুগত্য কর। এভাবে আল্লাহ তাআলা ইসলাম সম্পর্কে বলেছেন, তার চেয়ে উত্তম কে, যে নিজেকে আল্লাহ তাআলার কাজে অর্পণ করেছে। নিজেকে আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিত করেছে।

আসুন, ইসলামী শরীয়াহ তথা কুরআন-সুন্নাহর দেখানো পথে নিজেদের সমর্পন করি, ইহ-পরকালীন জীবনে সফল হই। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

লেখক : মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মুহাদ্দিস, দারুল উলূম হাটহাজারী

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন