আজ ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- সন্ধ্যা ৬:১৮

আজ ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুফর ও শিরক : পরিচিতি ও পরিণতি

পবিত্র ধর্ম ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ঈমান বা এক এবং অদ্বিতীয় আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করা। এ ঈমানের বিপরীত হলো, কুফর বা এক এবং অদ্বিতীয় আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বকে অ¯^ীকার। এটা সর্বজন ¯^ীকৃত যে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিপরীত বিষযটি মারাত্মক হয়ে থাকে। এজন্য ইসলামে কুফরকে সবচেয়ে কঠিন পাপ মনে করা হয়। পবিত্র কুরআনুল কারীমে কুফরের কারণে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, অধিকাংশ ¶েত্রেই ঈমান থেকেই কুফর ও শিরক জন্ম নিয়েছে এবং অধিকাংশ ¶েত্রেই ঈমানের নামেই কুফরি প্রচারিত হয়ে আসছে। ইয়াহুদী, খ্রিস্টান ও আরবের মুশরিকরা মূলত আসমানী কিতাব বা ওহী এবং আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসূলদের অনুসারী ছিলেন; কিন্তু বিভিন্ন কারণে তারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হন এবং কুফর ও শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়েন। এজন্য ঈমানদারদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার এবং ভালো জ্ঞান অর্জন করা দরকার।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে অবিশ্বাসের প্রকাশ তিন প্রকারÑ
১. কুফর।
২. শিরক ও
৩. নিফাক।
কুফরের শাব্দিক বিশ্লেষণ
الكفر শব্দটি كُفْرٌ মূলধাতু থেকে এসেছে। শব্দটি অনেকগুলো ক্রিয়ামূল (মাসদার) থেকে আসে। যেমনÑ
كَفْرٌ، كُفْرٌ আবৃত করা, গোপন করা, ঢাকা বা প্রবল হওয়া। বলা হয়Ñ كفر درعه بثوبه (সে কাপড় দ্বারা বর্ম আবৃত করে পরিধান করলো), كفر الليل الشىء (রাতের আঁধার বস্তুটিকে ঢেকে ফেললো), كفر الجهل على علم فلان অমুকের মূর্খতা জ্ঞানের ওপর প্রবল হয়েছে।
كَفْرٌ، كُفْرٌ، كُفُوْرًا، كُفْرَانًا কুফরি করা, অবিশ্বাস করা, অ¯^ীকার করা, ভুলে থাকা। বলা হয়Ñ كفر بكذا (তা থেকে নিঃসম্পর্কতা ঘোষণা করলো)।
পারিভাষিক অর্থ : আল্লাহ তাআলার মনোনীত দীন ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহকে অবিশ^াস করাকে কুফর বলে।
কুফর প্রথমত দুই প্রকারÑ
১. الكفرُ بأصول الإيمان ঈমানের মৌলিক বিষয়সমূহকে অ¯^ীকার করা। একে বড়ো কুফরও বলা হয়। এর বিধান হলো, এ জাতীয় কুফর চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থানকে অপরিহার্য করে।
২. الكفرُ بفروع الإيمان ঈমানের (মৌলিক বিষয়সমূহকে অ¯^ীকার না করলেও) তার শাখাগত বিষয়সমূহকে অ¯^ীকার করা। একে ছোট কুফরও বলা হয়। এর বিধান হলো, এ জাতীয় কুফর চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থানকে অপরিহার্য করে না।
অতঃপর الكفرُ بأصول الإيمان বা বড়ো কুফর চার প্রকারÑ
১. كفرُ إنكارٍ (মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সাথে সম্পৃক্ত কুফর)।
২. كفرُ جحودٍ (অ¯^ীকৃতি ও অহঙ্কারমূলক কুফর)।
৩. كفرُ عنادٍ (হঠকারিতামূলক কুফর)।
৪. كفرُ نفرٍ (বিমুখ থাকা বা এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে কুফর) এবং
৫. كفرُ نفاقٍ (দ্বিমুখিতা বা কপটতামূলক কুফর)।
প্রত্যেক প্রকারের পরিচয়
كفرُ إنكارٍ (মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সাথে সম্পৃক্ত কুফর) : আল্লাহ তাআলাকে না জানা এবং তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কে অ¯^ীকার করা। রাসূলগণের মিথ্যাবাদী হওয়ার বিশ্বাস পোষণ করা এবং তারা যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে মিথ্যা সাব্যস্ত করা।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِلْكَافِرِينَ
‘আর সে ব্যক্তির চেয়ে যালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে অথবা তার নিকট সত্য আসার পর তা অ¯^ীকার করে ? জাহান্নামের মধ্যেই কি কাফিরদের আবাস নয় ?’
كفرُ جحودٍ (অ¯^ীকৃতি ও অহঙ্কারমূলক কুফর) : এটা এভাবে হয় যে, রাসূলের সত্যতা এবং তিনি যে আল্লাহর প¶ থেকে সত্য নিয়ে এসেছেন সে সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা; কিন্তু অহংকার ও হিংসাবশত তার হুকুম না মানা এবং তার নির্দেশ না শোনা। যেমনÑ ইবলীসের কুফর।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
‘আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, “তোমরা আদমকে সিজদা করো”। তখন তারা সিজদা করলো; কিন্তু ইবলীস করলো না। সে অ¯^ীকার করলো এবং অহঙ্কার করলো। আর সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো।’
كفرُ شكٍ و ريبٍ (সংশয়-সন্দেহমূলক কুফর) : মুখে ¯^ীকার করা এবং অন্তরে জ্ঞান থাকা; কিন্তু এর সত্যতা সম্পর্কে ইতস্তত করা এবং দৃঢ় বিশ্বাস না রাখা। একে ধারণা সম্পর্কিত কুফরও বলা হয়। আর ধারণা হলো একীন ও দৃঢ় বিশ্বাসের বিপরীত।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ
وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ قَالَ مَا أَظُنُّ أَنْ تَبِيدَ هَذِهِ أَبَدًا
وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِنْ رُدِدْتُ إِلَى رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِنْهَا مُنْقَلَبًا
قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا
لَكِنَّا هُوَ اللَّهُ رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِرَبِّي أَحَدًا
‘আর নিজের প্রতি যুলমরত অবস্থায় সে তার বাগানে প্রবেশ করলো। সে বললোÑ
“আমি মনে করি না যে, এটি কখনো ধ্বংস হবে। আর আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি ফিরিয়ে নেয়া হয় আমার রবের কাছে, তবে নিশ্চয় আমি এর চেয়ে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল পাবো।”
‘এর উত্তরে তার সঙ্গী বললোÑ
“তুমি কি তাকে অ¯^ীকার করছো, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, তারপর তোমাকে অবয়ব দিয়েছেন পুরুষের ? কিন্তু তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আর আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক করি না”।’
كفرُ نفرٍ (বিমুখ থাকা বা এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে কুফর) : এদ্বারা উদ্দেশ্য হল দীন থেকে পরিপূর্ণভাবে বিমুখ থাকা এমনভাবে যে, ¯^ীয় কর্ণ, হৃদয় ও জ্ঞান দ্বারা ঐ আদর্শ থেকে দূরে থাকা যা রাসূলে কারীম সা. নিয়ে এসেছেন। তবে বিরোধিতায় লিপ্ত না হওয়া।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ
مَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُسَمًّى وَالَّذِينَ كَفَرُوا عَمَّا أُنْذِرُوا مُعْرِضُونَ
‘আমি আসমানসমূহ, যমীন এবং এদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা যথাযথভাবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছি। আর যারা কুফরি করে, তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা থেকে তারা বিমুখ।’
كفرُ نفاقٍ (দ্বিমুখিতা বা কপটতামূলক কুফর) : মুখে ¯^ীকারোক্তি থাকা; কিন্তু অন্তরে অ¯^ীকৃতি থাকা। যেমনÑ আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে খালফ।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا فَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ
‘তা এ জন্য যে, তারা ঈমান এনেছিলো তারপর কুফরি করেছিলো। ফলে তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বুঝতে পারছে না।’
الكفرُ بفروع الإيمان বা ছোট কুফর
কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে বড়ো কুফর পর্যন্ত পৌঁছে না এ রকম যতো কুফরের উল্লেখ এসেছে, তার সবই এ প্রকারের অন্তর্গত।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ
‘আর আল্লাহ উপমা পেশ করছেন, একটি জনপদেরÑ যা ছিলো নিরাপদ ও শান্ত। সবদিক থেকে তার রিযিক তাতে বিপুলভাবে আসতো। অতঃপর সে (জনপদ) আল্লাহর নিয়ামত অ¯^ীকার করলো। তখন তারা যা করতো তার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক পরালেন।’
মানবজীবনে কুফরের পরিণতি ভীষণ ভয়াবহ। কুফরের কারণে শুধু আখেরাতেই নয়; দুনিয়াতেও মানুষ মারাত্মক পরিণতির মুখোমুখী হতে হয়। নি¤েœ এর কতিপয় কুফল উল্লেখ করা হলোÑ
ক. আল্লাহ তাআলার প্রতি অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতা সৃষ্টি হয়।
খ. পাপাচার বৃদ্ধি পায়। কারণ, কাফের ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা, পরকাল, হাশর, মীযান, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি অবিশ^াস করে। তার কাছে পার্থিব জীবনই সব। এজন্য সে পাপের দিকে ধাবিত হয়। সমাজেও পাপাচার বৃদ্ধি পায়।
গ. হতাশা সৃষ্টি হয়। ¯^ভাবগতভাবেই মানুষ ভরসা করতে পছন্দ করে। আশা-ভরসা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। কিন্তু কাফেরের বিশ^াস না থাকার দরুণ আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা রাখতে পারে না। তাই সে চরম হতাশায় ভোগে।
ঘ. কুফর মানবসমাজে অনৈতিকতার প্রসার ঘটায়। জান্নাতের আশা ও জাহান্নামের ভয় না থাকায় কাফের ব্যক্তি মিথ্যাচার, অনাচার ও ব্যভিচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে কুফর মানবসমাজে অনৈতিকতার প্রসার ঘটায়।
ঙ. আল্লাহ তাআলার গযব নাযিল হয়। কারণ, কাফের আল্লাহ তাআলার বিধি-বিধান ও আদেশ-নিষেধের কোনো পারোয়া করে না। কখনও সে আল্লাহ তাআলা, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রাহ করে বসে। একারণে যমীনে আল্লাহর গযব নেমে আসে।
শিরক
ইসলাম ধর্মে শিরক একটি অমার্জনীয় অপরাধ। যদি আল্লাহ তাআলার নিকট এ অপরাধের জন্য ¶মা চেয়ে না নেয়া হয়, তাহলে এর ক্ষমা নেই। উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলার কাছে ¶মা না চাইলেও নিজের বিচার অনুসারে তার ইবাদতকারীদের যে কোনো ভুল ¶মা করতে পারেন; কিন্তু শিরকের অপরাধী দুনিয়াতে ¶মা না চাইলে কখনোই ¶মা করবেন না।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনÑ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন। আর যে কেউ আল্লাহ তাআলার সাথে শরীক করে, সে মহাঅন্যায় করে।’
শাব্দিক পরিচিত
شَرَكٌ (س)জুতার ফিতা ছিঁড়ে যাওয়া।
شَرْكٌ- شَرِكٌ- شِرْكَةٌ- شَرِكَةٌ (س) শরীক হওয়া, অংশীদার হওয়া
إِشْرَاكٌ শরীক বানানো।
أَشْرَكَ بالله আল্লাহর সাথে শরীক করলো।
تشْرِيْكٌ জুতায় ফিতা লাগানো।
مُشَاركَةٌ- تَشَارُكٌ পরস্পরে শরীক হওয়া।
إِشْتِرَاكٌ জটিল ও দুর্বোধ্য হওয়া।
পরিভাষিক অর্থ : মহান আল্লাহ তাআলার সাথে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে অংশীদার সাব্যস্ত করা কিংবা তাঁর সমতুল্য মনে করা।
অর্থাৎ শিরক হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে সাব্যস্ত করা বা তার উপাসনা করা। শাব্দিকভাবে এর দ্বারা এক বা একাধিক কোনো কিছুকে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও কর্তৃত্বের অংশীদার সাব্যস্ত করাকে বোঝায়। শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিকে মুশরিক বলা হয়।
তুলনা বা প্রয়োগের বিবেচনায় শিরক প্রধানত তিন প্রকারÑ
১. الشرك بالذات আল্লাহ তাআলার সত্তার সাথে শিরক করা। যেমনÑ আল্লাহর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা আছে বলে বিশ্বাস করা।
২. الشرك باالصفات আল্লাহ তাআলার গুণাবলীতে শিরক করা। যেমনÑ নবী, রাসূল ও আওলিয়ারা নিজে থেকে গায়েব জানেন বলে মনে করা। কারণ, গায়েবের জ্ঞান শুধু আল্লাহ তাআলাই জানেন।
৩. الشرك فى العمل আল্লাহ তাআলার ইবাদতে শিরক করা। উপাসনার নিয়তে কাউকে সিজদা করা এ পর্যায়ের শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
পরিণাম শিরক দুই প্রকারÑ
১. বা বড়ো শিরক, যা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। উপরোক্ত তিন ধরনের শিরক এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
২. বা ছোট শিরক, যা তাওবা ছাড়াও মাফ হয়ে যায়। যেমনÑ আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করা।
হুকুম (বিধান) : এসব শিরকের মাঝে স্তরগত পার্থক্য থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সব শিরকই সমান। সবগুলোই হারাম এবং মারাত্মক গোনাহের কাজ।
শিরকের কুফল : পৃথিবীর সর্বপ্রকার যুলুমের মধ্যে শিরক হলো সবচেয়ে বড়ো যুলুম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনÑ
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
‘নিশ্চয় শিরক মারাত্মক যুলুম।’
বস্তুত আল্লাহ তাআলার দয়া, অনুগ্রহ ও রহমত ছাড়া কোনোক্রমেই দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করা সম্ভব না। সুতরাং যারা শিরকে লিপ্ত হবে, পরকালে সেসব মুশরিকদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনÑ
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দেবেন। আর তার আবাস হলো জাহান্নাম।
প্রকৃতপক্ষে শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। সর্বদা এ জাতীয় কাজকর্ম থেকে বেঁচে থাকতে হবে। ভুলক্রমে শিরক করে ফেললে দ্রুত তাওবা করে নিতে হবে। ভবিষ্যতে এধরনের অপরাধ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। তাহলে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন।

তথ্যসূত্র :
১. হাশিয়াতুস-সাভী (তাফসীরে জালালাইনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ)
২. তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন : মুফতী শফী রহ.
৩. সহীহ হাদীসের বিভিন্নগ্রন্থ
৪. মিশকাতুল মাসাবীহর বাংলা ব্যাখ্যাগ্রন্থ
৫. মু‘জামুল ওয়াসীত
৬. মিসবাহুল-লুগাত
৭. ইন্টারনেট

লেখক : এনামুল করীম ইমাম

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন