আজ ১২ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার | ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ২৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- সন্ধ্যা ৭:১৮

আজ ১২ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার | ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ২৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ

বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বেশ কয়েকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশ সরকারের আইনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের আইনি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যেমন :
১. বিচার বিভাগ
২. নির্বাহী বিভাগ
৩. নির্বাচন কমিশন
৪. আইন বিভাগ
৫. সরকারি কর্ম কমিশন
৬. অ্যাটর্নি জেনারেনল
৭. মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়
৮. মানবাধিকার কমিশন
বিচার বিভাগ
বাংলাদেশের বিচার বিভাগ মূলত (ক) উচ্চতর বিচার বিভাগ (সুপ্রিম কোর্ট) ও (খ) অধস্তন বিচার বিভাগ (নিম্ন আদালত) এ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত।
সুপ্রিম কোর্ট : সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং এটি দুটি বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত। যথা : হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগ। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও প্রত্যেক বিভাগের বিচারপতিদের সমন্বয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হয়। সংবিধানের বিধান সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকগণ বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ দান করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্য থেকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগ করা হয়।
হাইকোর্ট : হাইকোর্ট বিচারকার্য পর্যালোচনার ক্ষমতার অধিকারী। যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ প্রজাতন্ত্রের যেকোন কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিসহ যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর সংবিধানে প্রদত্ত যেকোন মৌলিক অধিকার কার্যকর করার নির্দেশনা বা আদেশ জারি করতে পারে। হাইকোর্ট মৌলিক অধিকারসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি দেখতে পায় যে, কোনও আইন মৌলিক অধিকার বা সংবিধানের অন্য যে কোন অংশের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তাহলে সে আইনের ততটুকু অকার্যকর ঘোষণা করতে পারে যতটুকু অসামঞ্জস্যপূর্ণ।কোম্পানি, এডমিরালটি, বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রেও হাইকোর্টের মৌলিক এখতিয়ার রয়েছে। অধস্তন আদালতে বিচারাধীন কোনও মামলার ক্ষেত্রে যদি সংবিধানের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত আইনের প্রশ্ন বা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয় দেখা দেয়, তাহলে হাইকোর্ট সে মামলা অধস্তন আদালত থেকে প্রত্যাহার করে তার নিষ্পত্তি করতে পারে। হাইকোর্ট বিভাগের আপিল বিবেচনা ও পর্যালোচনার এখতিয়ার রয়েছে। হাইকোর্ট যদি এ মর্মে প্রত্যয়ন করে যে, হাইকোর্টে প্রদত্ত কোনও রায়, ডিক্রি, আদেশ বা দণ্ডাদেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সংবিধানের ব্যাখ্যার ব্যাপারে আইনের প্রশ্ন জড়িত, বা হাইকোর্ট কোনও ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তি প্রদান করেছে, তাহলে ওই সব রায়, ডিক্রি, আদেশ বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করা যাবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগই রেকর্ড আদালত।
নিম্ন আদালত কার্যাদির ভিন্নতায় পাঁচ প্রকার :
১. দেওয়ানি বিচার বিভাগ : অধস্তন দেওয়ানি আদালত চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা : সহকারি জজের আদালত, সাবজজ আদালত, অতিরিক্ত জজের আদালত এবং জেলা জজের আদালত। প্রত্যেক জেলার বিচার বিভাগের প্রধান হলেন জেলা জজ। পার্বত্য জেলাসমূহে পৃথক কোনও দেওয়ানি আদালত নেই; সেসব জেলায় ম্যাজিস্ট্রেটগণ দেওয়ানি আদালতের কার্য সমাধা করেন। হাইকোর্ট বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীনে প্রতিটি জেলার সকল দেওয়ানি আদালত পরিচালনার দায়িত্ব থাকে জেলা জজের হাতে। জেলা জজ প্রধানত আপিল মামলা বিচারের এখতিয়ার রাখেন, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁর মূল মামলার বিচার এখতিয়ারও রয়েছে। অতিরিক্ত জজের বিচার এখতিয়ার জেলা জজের এখতিয়ারের সঙ্গে সমবিস্তৃত ও যৌথ। তিনি জেলা জজ কর্তৃক নির্ধারিত মামলার বিচারকার্য সম্পাদন করেন। সহকারি জজ ও অধস্তন বিচারকদের প্রদত্ত রায়, ডিক্রি ও আদেশের বিরুদ্ধে আপিল পেশ করা হয় জেলা জজের আদালতে। একইভাবে সহকারি জজদের প্রদত্ত রায়, ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির জন্য জেলা জজ সেগুলি অধস্তন আদালতে স্থানান্তর করতে পারেন। অধস্তন আদালতগুলোর হাতেই থাকে মূলত মূল দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তির অবাধ এখতিয়ার।
২. অর্থ ঋণ আদালত : অর্থ ঋণ আদালত আইন ১৯৯০-এর অধীনে সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে অর্থ ঋণ আদালত স্থাপন করেছে। সরকার সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এসব আদালতের বিচারক হিসেবে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ করে। ব্যাংক, বিনিয়োগ করপোরেশন, গৃহনির্মাণ, অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান, লিজিং কোম্পানিসমূহ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইন ১৯৯৩-এর বিধানাবলী অনুসারে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ঋণ সংক্রান্ত সকল মামলা অর্থ ঋণ আদালতে দায়ের করতে হয় এবং শুধুমাত্র এ আদালতই এসব মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করে। অর্থ ঋণ আদালত একটি দেওয়ানি আদালত। দেওয়ানি আদালতের সকল ক্ষমতাই এ আদালতের রয়েছে।
৩. দেউলিয়া আদালত : এ আদালত দেউলিয়া আইন ১৯৯৭-এর অধীনে গঠিত। প্রত্যেক জেলায় জেলা আদালতই হচ্ছে ঐ জেলার দেউলিয়া আদালত। জেলা জজ এ আদালতের প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। জেলার সীমানায় দেউলিয়া মামলাগুলি নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পিত। প্রয়োজনবোধে তিনি একজন অতিরিক্ত (জেলা) জজের উপরও অনুরূপ মামলার বিচারকার্যের দায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন।
৪. অধস্তন ফৌজদারি ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালত : অধস্তন ফৌজদারি আদালত পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা : (ক) দায়রা আদালত। (খ) মহানগর হাকিমের আদালত। (গ) প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। (ঘ) দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং (ঙ) তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তিনটি পার্বত্য জেলায় দায়রা আদালতের কাজ করেন বিভাগীয় কমিশনার। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মহানগর পৌর এলাকার জন্য মহানগর দায়রা আদালত গঠন করা হয়।
৫. প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল : কোনও আইনবলে বা আইনের দ্বারা সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত সম্পত্তি বা সরকারের ব্যবস্থাপনাধীন সম্পত্তি, প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনও ব্যক্তির চাকরির শর্তাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে উদ্ভূত বিষয়াদি নিষ্পত্তির আইনগত এখতিয়ার দিয়ে জাতীয় সংসদ আইনবলে এক বা একাধিক প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে।
নির্বাহী বিভাগ
যে কোন আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তিনটি মূল স্তম্ভের ওপর নির্ভরশীল। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা। সদ্যস্বাধীন অধিকাংশ রাষ্ট্রই সংবিধান প্রণয়নকালে সরকারের নির্বাহী বিভাগের ধরণ, প্রকৃতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে সতর্ক থেকেছে। পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী ব্যবস্থা গঠনের জন্য কতিপয় অনুসরণীয় মডেল রয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাহী ব্যবস্থা গঠনে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদীয় মডেল অনুসরণ করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের আইনগত ভিত্তি ছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
এ ঘোষণা আদেশের ভিত্তিতে রচিত সংবিধান রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে এক সর্বময় ক্ষমতাধর নির্বাহ সৃষ্টি করে। ক্ষমা মঞ্জুরের ক্ষমতাসহ নির্বাহী ও বিধানিক উভয় ক্ষমতাই রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত হয়েছিল। প্রয়োজনবোধে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা ছিল তার। সংসদের অধিবেশন আহবান ও তা বিলুপ্তির এবং করধার্য ও অর্থব্যয়ের একচেটিয়া ক্ষমতাও তাকে দেয়া হয়েছিল। অধিকন্তু, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ও যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বিদ্যমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এ ঘোষণা সর্বময় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতির মধ্যে একটি নির্বাহ ব্যবস্থার জন্ম দেয়।
নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ এর আওতায় নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কমিশনের সভাপতিরূপে কাজ করবেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯-এ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বর্ণিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হল রাষ্ট্রপতি ও সংসদে নির্বাচন পরিচালনা, নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, আইন কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য নির্বাচন পরিচালনা (এর মধ্যে সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ যেমন : ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ অর্ন্তভূক্ত) এবং আনুষাঙ্গিক কার্যাদির সুষ্ঠু সম্পাদন। দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। নির্বাচন কমিশন কে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।
নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা : (১১৮ (৪) অনুচ্ছেদ এবং ১২৬(৪) অনুচ্ছেদ-১৯৭২ সাল) গণপ্রতিনিধিত্ব আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং শুধুমাত্র সংবিধান ও আইনের অধীনে থাকবেন। আইনত নির্বাচন কমিশন এর সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষমতা প্রদর্শন এবং কার্য সম্পাদনের কর্তৃত্ব এর চেয়ারম্যান/ যেকোনো সদস্য/ যেকোনো কর্মকর্তাকে দিতে পারেন। উল্লেখিত আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। কমিশন প্রয়োজন বোধ করলে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে যেকোনো সহায়তার জন্য যেকোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে নিয়োগ দিতে পারেন।
কর্মকৌশল :
১. প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করবেন।
২. একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার সভাপতিরূপে কাজ করবেন।
৩. এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে কোন নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বৎসরকাল হবে এবং-
ক) প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন; এমন কোন ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন না।
খ) অন্য কোন নির্বাচন কমিশনার অনুরূপ পদে কর্মাবসানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনাররূপে নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন, তবে অন্য কোনভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন না।
গ) নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন।
৪. সংসদ প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেমনটি নির্ধারণ করবেন, তেমনটি‘ই হবে। তবে শর্ত থাকবে যে, সুপ্রীম কোর্টের বিচারক যে পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হন, সে পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হবেন না।
৫. কোন নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব
১. রাষ্ট্রপতি পদ ও সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকবে এবং নির্বাচন কমিশন এই সংবিধান ও আইনানুযায়ী-
ক) রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন আয়োজন করবেন;
খ) সংসদ-সদস্যদের নির্বাচন আয়োজন করবেন;
গ) সংসদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করবেন; এবং
ঘ) রাষ্ট্রপতি পদের এবং সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুত করবেন।
২. উপর্যুক্ত দফাসমূহে নির্ধারিত দায়িত্বসমূহের অতিরিক্ত যে দায়িত্ব এই সংবিধান বা অন্য কোন আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে, নির্বাচন কমিশন সে দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটার-তালিকায় নামভুক্তির যোগ্যতা
১. প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
২. কোন ব্যক্তি সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত কোন নির্বাচনী এলাকায় ভোটার-তালিকাভুক্ত হওয়ার অধিকারী হবেন,
ক) যদি তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হন;
খ) তার বয়স আঠার বছরের কম না হয়;
গ) কোন যোগ্য আদালত তার সম্পর্কে অপ্রকৃতস্থ বলে ঘোষণা বহাল না থাকে;
ঘ) তিনি যদি ঐ নির্বাচনী এলাকার অধিবাসী বা আইনের দ্বারা ঐ নির্বাচনী এলাকার অধিবাসী বিবেচিত হন; এবং
ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত না হয়ে থাকেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়
১. রাষ্ট্রপতি-পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পরবর্তী ষাট থেকে নব্বই দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে : তবে শর্ত থাকবে যে, যে সংসদের দ্বারা তিনি নির্বাচিত হয়েছেন সে সংসদের মেয়াদকালে রাষ্ট্রপতির কার্যকাল শেষ হলে সংসদের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ শূন্য পদ পূর্ণ করার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না, এবং অনুরূপ সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের দিন হতে ত্রিশ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির শূন্য পদ পূর্ণ করার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
২. সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং
খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে সে ক্ষেত্রে ভাঙ্গার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে। তবে শর্ত থাকবে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করবেন না।
সূত্র : যঃঃঢ়://িি.িবপ.ড়ৎম.নফ/ইধহমষধ/
আইন বিভাগ
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষকে কতকগুলো সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও প্রাকৃতিক বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। এ বিধিনিষেধগুলোকে আইন বলে অভিহিত করা হয়। আইন আদর্শ জীবন প্রবাহের পথ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে থাকে।
শব্দগত অর্থ : আইনের ইংরেজী প্রতিশব্দ খধি এর উৎপত্তি টিউটনিক মূল শব্দ “খধম” থেকে নেওয়া হয়েছে; যার অর্থ স্থির বা অপরিবর্তনীয়। সুতরাং অর্থগত এবং উৎপত্তিগত দিক থেকে আইন বলতে কতিপয় নির্দিষ্ট নিয়মাবলীর সমষ্টি কে বোঝায়।
আইনের প্রামাণ্য সংজ্ঞা : অধ্যাপক হল্যান্ডের মতে, “আইন হলো সেই সাধারণ নিয়ম; যা মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দ্বারা প্রযুক্ত হয়।”
এরিস্টটলের মতে, “সমাজের যুক্তিসিদ্ধ ইচ্ছার অভিব্যক্তিই হলো আইন।”
উইলসনের মতে, “আইন হলো মানুষের স্থায়ী আচার ব্যবহার ও চিন্তুধারার সে অংশ যা রাষ্ট্রের দ্বারা স্বীকৃত বিধিতে পরিণত হয়েছে এবং যার পশ্চাতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সুস্পষ্ট সমর্থন রয়েছে।”
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)
সংক্ষেপে : বিপিএসসি।
গঠিত : ২২ ডিসেম্বর-১৯৭৭।
আইনি অবস্থা : সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান।
অবস্থান : আগারগাঁও, ঢাকা।
দাপ্তরিক ভাষা : বাংলা, ইংরেজি।
চেয়ারম্যান : একরাম আহমেদ।
বাজেট : ৩০.৬ কোটি টাকা। (২০১৫-১৬ অর্থ বছর)
ওয়েবসাইট : যঃঃঢ়://িি.িনঢ়ংপ.মড়া.নফ/
‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইচঝঈ) বাংলাদেশ’ একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, যার দায়িত্ব সরকারী চাকরীতে নিয়োগ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করা। কখনো-কখনো এটিকে সরকারী কর্ম কমিশন হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি একটি আধা বিচারিক, স্বাধীন সংস্থা। পাকিস্তান আমলের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের উত্তরাধিকার হিসাবেই বাংলাদেশে গঠিত হয়েছিল পাবলিক সার্ভিস কমিশন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩৭ থেকে ১৪১ পর্যন্ত অনুচ্ছেদে পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বর্ণিত আছে। একজন চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন সদস্য সমবায়ে পাঁচ বৎসর মেয়াদের জন্য কমিশন গঠিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিয়োগ প্রদান করেন।
সংক্ষিপ্ত তথ্য :
ক) বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা বিপিএসসি একটি সাংবিধানিক এবং স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এই কমিশনের প্রধানের পদবী হবে চেয়ারম্যান।
খ) সংবিধানের ১৩৭ নং অনুচ্ছেদ বলে এই কমিশন গঠিত হয়েছে।
গ) বর্তমান বিসিএস ক্যাডার সংখ্যা ২৮ টি। এর আগে এটি ছিল ২৯টি।
ঘ) উপমহাদেশে প্রথম সরকারী কর্মকমিশন গঠিত হয়েছিল ১৯২৬ সালে।
ঙ) বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠিত হয়েছিল ১৯৩৭ সালে।
চ) এই কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ড- এ কিউ এম বজলুল করিম।
ছ) বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রথম নারী চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপিকা ড. জিন্নাতুন্নেসা তাহমিদা বেগম।
জ) পিএসসির বর্তমান ১৩ তম চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ।
ইতিহাস : বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুসারে প্রথমাবস্থায় ২টি ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ গঠন করে, যা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (প্রথম) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (দ্বিতীয়) নামে অভিহিত হয়; কিন্তু পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করত: উভয় কমিশনকে একত্রিত করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন নামে একটিমাত্র কমিশন পদ্ধতি চালু করা হয়। ভারত উপমহাদেশে ১৯২৬ সালে প্রথম পাবলিক সার্ভিস কমিশন নামে একটি কমিশন গঠিত হয় এবং এটি ব্রিটিশ ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োগ দানের কার্যক্রম পরিচালনা করত। ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন এবং পরবর্তী ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রদেশে দায়িত্বশীল সরকার গঠিত হওয়ার পর ১৯৩৭ সালে বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ প্রদেশ পর্যায়েও অনুরূপ কমিশন গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ব্রিটিশ ভারতের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে পাকিস্তানের কেন্দ্র ও প্রদেশ উভয় পর্যায়েই অনুরূপ পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠিত হয়। এভাবেই আইনগত ভিত্তির পরিবর্তে বরং সাংবিধানিক ভিত্তিই বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের সংবিধানের পাঁচটি অনুচ্ছেদ সংবলিত একটি অধ্যায়ে (৯ম ভাগের ২য়) কমিশনের গঠনপ্রণালী ও কার্যাবলি নির্দেশিত হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক (কার্যত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে) পাঁচ বছর মেয়াদে অথবা তাদের বয়স বাষট্টি বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সময়ের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নিয়োগযোগ্য সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন সদস্যের সংখ্যা সংবিধানে নির্দিষ্ট করা হয় নি। তবে ১৯৭৭ সালে জারিকৃত রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশে চেয়ারম্যানসহ এ সংখ্যা সর্বোচ্চ পনেরো (ন্যূনতম ছয়) নির্ধারণ করা হয়েছে।
কার্যাবলী : পাবলিক সার্ভিস কমিশন সাধারণত নিম্নোক্ত কার্যক্রম সম্পাদন করে :
১. সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগ দানের জন্য লোক বাছাই করার উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা/অথবা সাক্ষাৎকার গ্রহণ।
২. প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ প্রত্যাশী প্রার্থীদের জন্য মনস্তাত্ত্বিক ও মেধাযাচাই পরীক্ষার ব্যবস্থা।
৩. সরকারি কর্মকর্তাদের এক চাকরি থেকে অন্য চাকরিতে পদোন্নতি (যথা ২য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণিতে) দানের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা এবং/অথবা সাক্ষাৎকার গ্রহণ।
৪. সরকারি চাকরিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে স্থায়ী চাকরিতে নিয়োগদানের জন্য প্রার্থী নির্বাচন।
৫. বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনস্থ অ্যাড হক ভিত্তিক নিয়োগ অনুমোদন।
৬. নিয়োগ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিধি, নিয়োগ দানের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতিমালা, সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি ও বদলি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেকার পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নিরূপণের ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদান।
৭. বিভাগীয় ও পেশাগত বিভিন্ন পরীক্ষার নিয়মাবলি ও পাঠ্যসূচি পরীক্ষা ও অনুমোদন এবং সরকারি কর্মচারীদের জন্য সেসব পরীক্ষার আয়োজন।
৮. সরকারি কর্মচারীদের চাকরির শর্তাদি প্রভাবিত করে এমন সব বিষয়ে পরামর্শ দান; এবং
৯. সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন শৃঙ্খলা ও আপীল বিষয়ে পরামর্শ দান। অধিকন্তু, কমিশন সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের ব্যাপারে কর্মী-বিষয়ক গবেষণার কিছু কাজও করে, যেমন প্রার্থীদের সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ ও পরিসংখ্যানগতভাবে তাদের প্রবণতাগুলি (শিক্ষাগত, আর্থ-সামাজিক, আঞ্চলিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রেক্ষাপটসহ) বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কর্মকান্ড পরিচালনায় সহায়তা দানের জন্য কমিশনের একটি সচিবালয় রয়েছে। কাঠামোগত অবস্থানের দিক থেকে এটি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের একটি অংশ এবং মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের সমমর্যাদাসম্পন্ন। রাজধানী শহরে (ঢাকায়) অবস্থিত পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদর দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ড মোট ১০টি সার্ভিস শাখার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে, যেমন সংস্থাপন শাখা, হিসাব শাখা, পরীক্ষা শাখা, নিয়োগ শাখা, মনস্তত্ত্ব শাখা, গবেষণা শাখা ও গ্রন্থাগার শাখা ইত্যাদি। এছাড়া পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মোট ৬টি আঞ্চলিক অফিসের মধ্যে ৫টি রাজধানীর বাইরের বিভাগীয় সদরে এবং ঢাকা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট অবশিষ্টটি রাজধানীতে কমিশনের কেন্দ্রীয় সচিবালয় ভবনে অবস্থিত। আঞ্চলিক অফিসগুলি কার্যত যোগাযোগ রক্ষাকারী অফিসের ভূমিকাই পালন করে থাকে। কমিশন সচিবালয়ে নিয়োজিত সচিব হলেন এর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব এবং কমিশন সচিবালয়ে প্রেরণে নিয়োগকৃত। সচিবের সহযোগী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ১ জন যুগ্মসচিব, ১ জন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ১ জন প্রধান মনোবিজ্ঞানি, ২ জন উপসচিব ও ৭ জন পরিচালক। সূত্র : যঃঃঢ়://িি.িনঢ়ংপ.মড়া.নফ
এ্যটর্নি জেনারেল
সংবিধানের ৬৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সুপ্রীম কোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তি এ্যটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে এটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উত্থাপিত যেকোনো রেফারেন্সের ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব মত প্রকাশ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত।
(সূত্র : যঃঃঢ়://িি.িষধলিঁংঃরপবফরা.মড়া.নফ/
কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল (সিএজি)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল (সিএজি) এর কার্যালয়কে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করে। সিএজি কর্তৃপক্ষের অধীনে প্রজাতন্ত্রের সরকারি একাউন্টস, সরকারি এজেন্সি, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক কোম্পানিসমূহের অডিট পরিচালনা করা হয় এবং তা সংসদে উপস্থাপিত হয়। সিএজি কার্যালয় সরকারি সম্পদ ব্যবহারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদকে সহায়তা দিয়ে থাকে।
নিরীক্ষণ : (অডিটিং) আর্থিক কাজকর্ম ও ঘটনাবলী সম্পর্কে নিয়মানুগ পন্থায় নিরপেক্ষ মূল্যায়ন- যার লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যমান নীতিমালা ও সম্পাদিত কাজকর্মের মধ্যে কতটুকু অসঙ্গতি রয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী ও সে সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্যের পরীক্ষা মাত্র এবং এ পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ মতামত হিসেবে সংশ্লিষ্ট পক্ষের নিকট প্রদান করা। বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত কোম্পানির হিসাব নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক। ২১৩(৩) ধারা অনুযায়ী নিরীক্ষককে বার্ষিক সাধারণ সভায় পরীক্ষিত হিসাব-সম্পর্কিত মতামত প্রদান করতে হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউট কর্তৃক আন্তর্জাতিক নিরীক্ষামান গ্রহণের পূর্বে নিরীক্ষার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল : ১. হিসাবে ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্নীতি নির্ধারণ ২. ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্নীতি সংগঠন বন্ধ করা। যেমন- ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন, ১৯৯১ সালের ব্যাংকিং কোম্পানি আইন, ১৯৩৮ সালের বীমা আইন, ১৯৯৩ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৮৭ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৭৮ সালের বৈদেশিক অনুদান নিয়ন্ত্রণ রুলস এবং ১৯৮৪ সালের কো-অপারেটিভ সোসাইটি অধ্যাদেশ। এই নিরীক্ষা কো-অপারেটিভ সোসাইটির রেজিস্টারার অথবা তার অনুমোদিত অন্য কোন অফিসার সম্পাদন করে থাকেন। রাষ্ট্রায়ত্ত কর্পোরেশনের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব তিন স্তরে নিরীক্ষা করা হয় :
১. প্রাথমিক কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ
২. মাধ্যমিক স্বাধীন পেশাজীবী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ও
৩. বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেল (সিঅ্যান্ডএজি)
বাংলাদেশ সংবিধানের ১২৮ ধারা মোতাবেক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের হিসাব নিরীক্ষার দায়িত্ব সিঅ্যান্ডএজি-কে প্রদান করা হয়েছে। সিঅ্যান্ডএজি-কে সংসদে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। প্রজাতন্ত্র ও কোর্ট অব ল’-এর হিসাব, অন্যান্য কর্তৃপক্ষ ও সরকারি অফিসারদের হিসাব সিঅ্যান্ডএজি-কে নিরীক্ষা করতে হয়। এই উদ্দেশ্যে তার অথবা তার অনুমোদিত অন্য কোন প্রতিনিধির সকল হিসাব- বই, ভাউচার, দলিল, নগদান, স্ট্যাম্প, সিকিউরিটিজ, গুদাম ও অন্যান্য সরকারি সম্পত্তি দেখার অধিকার আছে। কাজ চালানোর ক্ষেত্রে সিঅ্যান্ডএজি কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ নন। সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এবং অধীনস্থ দশজন ডাইরেক্টর জেনারেলের সহায়তায় তিনি সরকারি সকল বিভাগ, এজেন্সি, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন এবং যে সকল পাবলিক কোম্পানিতে সরকারের ৫০% মালিকানা আছে তার নিরীক্ষা করে থাকেন।
সরকারি নিরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় সম্পদ ব্যবহারের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বের নিশ্চয়তা দান করা। এই উদ্দেশ্য সম্পাদনে নিরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত কাজগুলি হলো- হিসাব, আয়-ব্যয় বিবরণ সঠিকভাবে তৈরী করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা, নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার যথার্থতা বিচার-বিবেচনা করা, প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবহারে কার্যকারিতা, দক্ষতা ও মিতব্যয়িতার নিশ্চয়তা প্রদান, সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃতপত্র ক্রয়-বিক্রয় হিসাব, উৎপাদন হিসাব, লাভ-ক্ষতি হিসাব ও সহকারি হিসাব বই পরীক্ষা করা এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা জানার জন্য বিশেষ অনুসন্ধান কাজ সম্পাদন। সিঅ্যান্ডএজি-র অধীনে নিম্নলিখিত অডিট ডাইরেক্টরেট ও প্রশিক্ষণ একাডেমি ন্যস্ত করা হয়েছে :
(ক) বাণিজ্যিক নিরীক্ষা (খ) পূর্ত নিরীক্ষা (গ) বৈদেশিক সাহায্যাধীন প্রকল্প নিরীক্ষা (ঘ) বেসামরিক নিরীক্ষা (ঙ) রেলওয়ে নিরীক্ষা (চ) ডাক, তার ও টেলিফোন নিরীক্ষা (ছ) প্রতিরক্ষা নিরীক্ষা (জ) বৈদেশিক মিশন নিরীক্ষা (ঝ) কৃতি নিরীক্ষা (ঞ) ঢ়বৎভড়ৎসধহপব ধঁফরঃ ব বা আর্থিক ব্যবস্থাপনা একাডেমি।
উপর্যুক্ত বিভাগগুলোর প্রধানকে ডাইরেক্টর জেনারেল বলা হয়। প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব কাজের কাঠামো রয়েছে।
বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদপ্তর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষার জন্য বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদপ্তরটি স্থাপন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রীয়করণের জন্য বাণিজ্যিক নিরীক্ষা বিভাগের কাজের পরিধি বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এই অধিদপ্তর সকল স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ৫০% সরকারি মালিকানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিরীক্ষা করে। এই অধিদপ্তর যে সকল দায়িত্ব পালন করে থাকে তা হলো : সকল সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রারম্ভিক ও চূড়ান্ত হিসাব নিরীক্ষা; স্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান ও নিরীক্ষা শাস্ত্রের নীতি অনুযায়ী উক্ত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণীগুলি ঐ প্রতিষ্ঠানের শুদ্ধ ও সঠিক আর্থিক অবস্থা দেখাচ্ছে কি-না তা নির্ধারণ; বিধিবদ্ধ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত হিসাব সহকারে সাধারণ আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা; উপর্যুক্ত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মূল্যায়ন এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষণের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃকাজের মূল্যায়ন করা এবং সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডের কার্যকারিতা, দক্ষতা ও মিতাচারিতা পরিমাপ করা।
সিঅ্যান্ডএজি-র অনুমোদনের পর গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অনিয়মসমূহ নিরীক্ষা মন্তব্য সহকারে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন সিঅ্যান্ডএজি কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির নিকট সংসদে প্রেরণের জন্য উপস্থাপন করে। সংসদে উপস্থাপিত প্রতিবেদন পাবলিক একাউন্টস (পিএসি) কমিটি কর্তৃক আলোচিত হয়। সংসদের একটি স্থায়ী কমিটি যা পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি (পিইউসি) নামে পরিচিত সে কমিটি ‘সংসদ কার্যপ্রণালী বিধি’র বিধি ২৩৮ মোতাবেক সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও কার্যকরিতা সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখেন।
সূত্র : যঃঃঢ়://িি.িপধমনফ.ড়ৎম/
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
বাংলাদেশে জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা অনেক দিনের। এ লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালের শেষের দিকে প্রথমবারের মতো একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকারের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন (আইডিএইচআরবি) শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬-২০০১ সাল নাগাদ মানবাধিকারের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আইনি কাঠামোর খসড়া তৈরীর কাজ পরিচালিত হয়। পরে ২০০১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার কমিশন গঠন করার সম্ভাবনা যাচাইয়ের লক্ষ্যে আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি মানবাধিকার কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের সাথে সাথে মানবাধিকার রক্ষার লক্ষ্যে একটি পরিপূর্ণ আইন তৈরীরও সুপারিশ করে। ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফা আলোচনার পর এই কমিটি একটি খসড়া বিল প্রস্তুত করে মন্ত্রিপরিষদে প্রেরণ করে। কিন্তু এই বিলটি মন্ত্রিপরিষদের সভায় উত্থাপন করা হয় নি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানবাধিকার কমিশন গঠনের উদ্যোগের ঘোষণা দেয়। ২০০৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্যে উপদেষ্টা পরিষদে একটি খসড়া উত্থাপন করে। পরিষদ নীতিগতভাবে খসড়া অনুমোদন করে এবং আইন সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটিকে খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদনের মধ্য দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুনরায় প্রেরণের জন্য আদেশ দেয়া হয়। পুনঃসংষ্কার করা প্রস্তাবটি আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা পরিষদে পেশ করে এবং ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তা অনুমোদন লাভ করে।
অনুমোদন লাভের পর ২০০৭ সালের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশের অধীনে একজন সভাপতি এবং আরো দু’জন কমিশনার নিয়ে ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কাজ শুরু করে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কমিশনের সভাপতি হবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অন্য দু’জন কমিশনারের একজন হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং আরেকজন হবেন মানবাধিকার আন্দোলনের সমর্থক কোনো নারী নেত্রী। অধ্যাদেশ বলে কমিশনের সভাপতি হবেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কমিশনের সদস্যগণ একটি নির্বাচনী কমিটির সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ লাভ করবেন। কমিশনের কোনো সদস্যের বয়স ৫০ বছরের নিচে এবং ৭২ বছরের উর্ধ্বে হবে না। কমিশনের সভাপতি এবং অন্য সদস্যরা তিন বছরের মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং মেয়াদ শেষে দ্বিতীয় বারের মতো নিয়োগ লাভ করলে শুধু সেই মেয়াদেই দায়িত্ব পালন করবেন এবং তা পুনরায় আর বাড়ানো হবে না। সদস্য নির্বাচক যে কমিটি, তা গঠিত হবে ছয়জন সদস্যের সম্বন্বয়ে। এদের অন্তর্ভূক্ত থাকবেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনিত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, যিনি কমিটির সভাপতি হবেন। মন্ত্রীপরিষদের একজন সচিব, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশের মহা হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সভাপতি, আইন বিচার এবং সংসদীয় কমিটির সচিব যিনি কমিটিকে সচিবালয়ের যে সকল সহায়তা প্রয়োজন তা প্রদান করবেন। সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি যে পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়ায় পদ থেকে অপসারিত হন, মানবাধিকার কমিশনের নির্বাচক কমিটির সভাপতি এবং অন্য সদস্যবৃন্দ একই পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়ায় তাঁদের কর্ম থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন। এই কমিশন আইনগতভাবে একটি বৈধ সংস্থা হিসেবে নিজস্ব সিলমোহর এবং স্থায়ী দায়াধিকার এবং নিজস্ব নামে যেকোন মামলায় বাদী বা বিবাদী হবার অধিকার ভোগ করবে।
এই কমিশন অন্যন্য দায়িত্বের সাথে নিম্নোক্ত কার্যাবলি সম্পাদনে দায়বদ্ধ থাকবে :
(ক) জারি করা সুয়োমটো রুলের তদন্ত করা অথবা কোনো ব্যক্তি, রাষ্ট্র অথবা সরকারের কোনো অংশের অথবা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা মানবাধিকারের কোনো লঙ্ঘন অথবা মানবাধিকারের লঙ্ঘন করতে উস্কানি দেয়া বা প্ররোচিত করা এমন কোনো কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষুব্ধ ব্যক্তির নিজের করা অভিযোগের অথবা তাঁর পক্ষের হয়ে অন্য কোনো ব্যক্তির দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত করা, এবং
(খ) জারি করা সুয়োমটো রুলের তদন্ত করা অথবা সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা মানবাধিকারের কোনো লঙ্ঘন অথবা মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নিতে অবহেলা বা উপেক্ষা করা এমন কোনো কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষুব্ধ ব্যক্তির নিজের দায়ের করা অভিযোগের অথবা তাঁর পক্ষের হয়ে অন্য কোনো ব্যক্তির করা অভিযোগের তদন্ত করা।
কমিশন কোনো অভিযোগের তদন্তকালে যে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তাদের বক্তব্যও শুনবে, এছাড়া বাদী এবং তার সাক্ষীদের প্রতি সমন জারি করার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থাকা যেকোন ধরনের ডকুমেন্ট কমিশনের সামনে উপস্থাপন করার আদেশ দেবার ক্ষমতা কমিশনের থাকবে। সব ধরনের তদন্ত শেষ করে কমিশন যদি অভিযোগটির সত্যতা খুঁজে পায় তাহলে সে সরকারকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অথবা অন্য যেকোন ধরনের আইনি পদক্ষেপ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিতে বলতে পারে যিনি আইনগত ব্যবস্থা অথবা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণকারী বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত আছেন। বিষয়টি সংবিধানের ১০২ ধারার অধীনে নিষ্পত্তি যোগ্য হলে কমিশন নিজে অথবা ক্ষুব্ধ ব্যক্তির পক্ষ হয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে পিটিশন ফাইল করতে পারে। উপযুক্ত মনে করলে কমিশন ক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে অথবা তাঁর পরিবারকে স্বল্পকালীন আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের নিকট অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করতে পারে। তদন্ত শেষে কমিশন তার তদন্ত রিপোর্টের একটি কপি ক্ষুব্ধ ব্যক্তির নিকট অথবা তার প্রতিনিধির নিকট প্রেরণ করবে। এছাড়াও কমিশন সুপারিশমালা সহ তদন্ত রিপোর্টের একটি কপি সরকার অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবে এবং রিপোর্ট গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে সরকার অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কমিশনের দেয়া সুপারিশমালার ভিত্তিতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে অথবা পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে তা কমিশনকে অবহিত করবে। কমিশনের প্রেরিত সুপারিশমালার সাথে যদি সরকার অথবা এ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতপার্থক্য ঘটে অথবা এই সুপারিশমালার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যদি অপারগতা প্রকাশ করে অথবা প্রত্যাখান করে তাহলে কমিশনের নিকট এই সময়ের মধ্যেই তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ এবং কেন তারা এর বাস্তবায়নে অক্ষম এবং প্রত্যাখান করেছে তার কারণ দর্শাতে হবে। কমিশন তার সংশ্লিষ্ট তদন্ত রিপোর্টের সংক্ষিপ্তসার প্রকাশ করবে এবং এখানে কমিশনের গৃহীত সিদ্ধান্ত অথবা সুপারিশমালা কমিশনের বিবেচনায় যতটুকু থাকা উচিত ততটুকুই থাকবে। যদি কোনো তদন্ত রিপোর্ট কমিশনের বিবেচনায় গুরুত্বপুর্ণ বলে বিবেচিত হয়, এবং কমিশন যদি মনে করে তদন্ত রিপোর্টের পুরো অংশ বা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত অংশ বিশেষ জনগণের সম্মুখে প্রকাশ করা উচিত, তাহলে কমিশন তদন্ত রিপোর্টের পুরো অংশ অথবা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত অংশবিশেষ প্রকাশ করতে পারে। প্রতি বছর ৩০ মার্চের মধ্যে রাষ্ট্রপতির নিকট কমিশনকে তার কার্যক্রমের বাৎসরিক প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। বাৎসরিক রিপোর্টের সাথে একটি মেমোরেন্ডামও যুক্ত থাকবে, যেখানে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অন্য কর্তৃপক্ষ কমিশনের প্রদত্ত সুপারিশমালা কার্যকর করার জন্য আইনি উদ্যোগ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কেন ব্যর্থ বা অপারগ হয়েছে তার কারণগুলো উল্লেখ থাকবে।
মানবাধিকার কী ও কেন?
মানুষের বিকাশ এবং স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের নিশ্চয়তায় অত্যাবশ্যকীয় সুযোগ সুবিধাগুলোই মানবাধিকার। মানবাধিকার হচ্ছে মানুষের জন্মগত অধিকার এবং এগুলো মানুষের মর্যাদার সাথে সম্পৃক্ত। ‘মানুষ’ হিসেবে পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য এ অধিকারগুলো অত্যাবশ্যক। মানবাধিকারকে এক কথায় ‘সব ধরনের ভয়এবং অভাব থেকে মুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বও জাতিসংঘে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়। সেখানে মানুষের মৌলিক মানবাধিকারগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এ জন্য ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়। মানবাধিকারের কিছু মূলনীতি রয়েছে। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের প্রম অনুচ্ছেদেই (অনুচ্ছেদ-১) এর উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-‘সকল মানুষ স্বাধীনভাবে জন্ম গ্রহণ করে এবং মর্যাদা ও অধিকারে সব মানুষ সমান”। মানবাধিকার সর্বজনীন। একজন মানুষ যে দেশেরই নাগরিক হোন না কেন, যেখানেই বসবাস করুন না কেন, তিনি যে ধর্মের, বর্ণের, লিঙ্গের, জাতির বা ভাষার মানুষ হোন না কেন পৃথিবীর সব মানুষ সমভাবে সব মানবাধিকার ভোগ করার অধিকারী। এই অধিকারগুলো কোনো অবস্থাতেই কেউ কেড়ে নিতে পাওে না। কেউ স্বেচ্ছায় কোনো অধিকার ত্যাগও করতে পারে না। মানবধিকার হিসেবে স্বীকৃত অধিকারগুলো অবিচ্ছেদ্য, পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং একটি অন্যটির ওপর নির্ভরশীল। একটি অধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অন্য অধিকারকে যেমন এগিয়ে নেয় তেমনিভাবে এক অধিকারের লংঘন অন্য অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘে গৃহীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার’ এবং ‘অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার’- এই দু’টি ধারায় মানুষের মানবাধিকারসমূহ সনিড়ববেশিত হয়েছে ।
নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার
১. জীবন, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার
২. দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার অধিকার
৩. নির্যাতন ও অবমূল্যায়ন থেকে মুক্তির অধিকার
৪. আইনের চোখে একজন ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার
৫. আইনের দৃি ষ্টতে সকলে সমান এবং আইনের আশয়্র সমানভাবে পাওয়ার অধিকার
৬. উপযুক্ত আদালত থেকে বিচার পাওয়ার অধিকার
৭. বেআইনী আটক ও বন্দীদশা থেকে মুক্তি লাভের অধিকার
৮. নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য শুনানীর অধিকার
৯. অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ ব্যক্তির মতো আচরণ পাওয়ার অধিকার
১০. ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার
১১. চলাফেরার স্বাধীনতা
১২. অন্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার অধিকার
১৩. জাতীয়তা পাওয়া এবং পরিবর্তন করার অধিকার
১৪. স্বেচ্ছায় পরিবার গঠন করার অধিকার
১৫. সম্পত্তি অর্জনের অধিকার
১৬. নিজস্ব বিশ্বাস ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার
১৭. মতামত দেওয়া ও তথ্য পাওয়ার স্বাধীনতা
১৮. শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার
১৯. স্বাধীনভাবে নির্বাচনে ও সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার।
২০. সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার
২১. কাক্সিক্ষত কাজ পাওয়া ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার
২২. অবসর ও বিশ্রাম পাওয়ার অধিকার
২৩. úূর্ণ জীবন-যাত্রার অধিকার
২৪. শিক্ষার অধিকার
২৫. সাংস্কৃতিক জীবনে অবাধে অংশগ্রহণের অধিকার
পরবর্তী কালে ১৯৬৬ সালে এই দুই ধরণের অধিকারকে আরো বিস্তারিতভাবে বণর্না করে এবং অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে সকল পক্ষের দায় দায়িত্ব সুনিদির্ষ্ট করে পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক বা জনগোষ্ঠীভিত্তিক অধিকারকে বিস্তৃত করে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সনদ গৃহীত হয়েছে। বতর্মানে এ ধরণের মোট ৯টি প্রধান আন্তর্জাতিক চুক্তি রয়েছে; যেমন :
১. অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক সনদ (গৃহীত-১৯৬৬, কার্যকর -১৯৭৬)
২. নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক চুক্তি (গৃহীত- ১৯৬৬, কার্যকর -১৯৭৬)
৩. সকল প্রকার বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত সনদ (গৃহীত- ১৯৬৫, কার্যকর- ১৯৬৯)
৪. নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (গৃহীত- ১৯৭৯, কার্যকর- ১৯৮১)
৫. নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যদাহানিকর আচরণ বা শাস্তি বিরোধী সনদ (গৃহীত- ১৯৮৪, কার্যকর- ১৯৮৭)
৬. শিশু অধিকার সনদ (গৃহীত- ১৯৮৯, কার্যকর- ১৯৯০)
৭. অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা সনদ (গৃহীত- ১৯৯০, কার্যকর-২০০৩)
৮. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সংক্রান্ত সনদ (গৃহীত- ২০০৬, কার্যকর- ২০০৮)
৯. বলপূর্বক অন্তর্ধান থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষা সংক্রান্ত সনদ (গৃহীত- ২০০৬, কার্যকর- ২০১০)
মানবাধিকার সংক্রান্ত ৯টি প্রধান আন্তর্জাতিক চুক্তির মধ্যে বলপূর্বক অন্তর্ধান বিষয়ক চুক্তি ছাড়া অন্যগুলি বাংলাদেশ অনুমোদন করেছে। আর্ন্তজাতিকভাবে গৃহীত মানবাধিকারের মূলনীতিগুলোকে বাংলাদেশ সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং নাগরিকের মানবাধিকারের সুরক্ষায় বিভিনড়ব বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে’। সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার শিরোনামে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারগুলোর সুরক্ষার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, বিশ্রাম ও চিত্ত বিনোদন এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক মানবাধিকারগুলোকে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

লেখক : মুহাম্মাদ নূরুল করীম আকরাম

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন