আজ ১০ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার | ১৩ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি | ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- রাত ১২:৪৩

আজ ১০ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার | ১৩ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি | ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারীবাদ পরিচিতি

নারীবাদ
জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তাত্তি¡ক ভিত্তি থাকে। নারী বিষয়ক অধ্যয়ন ও গবেষণার তাত্তি¡ক ভিত্তি হলো নারীবাদ। ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীতে নারীকে নিজ অধিকার ও মুক্তি অর্জনের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছে। নারী অধিকার আন্দোলনে যারা অবদান রেখেছেন তাদের নারীবাদী বলা হয় এবং নারীর প্রতি বৈষম্য-শোষণের বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতনতাকে বলা হয় নারীবাদ।

নারীবাদের অর্থ ও সংজ্ঞা
নারীবাদের একক কোন সংজ্ঞা নেই। নারীবাদ অন্য যেকোন ‘বাদ’ থেকে আলাদা। কোন একক কাঠামো থেকে এর তত্ত¡গত ও ধারণাগত ভিত্তি লাভ করেনি। এক্ষেত্রে একক কোন ব্যক্তি নেই, যিনি সকলের জন্য এবং সকল সময়ের জন্য নারীবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যে কারণে নারীবাদের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, যা সকল নারীর জন্য প্রযোজ্য। নারীবাদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয় তা পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হতে পারে।

নারীবাদ অর্থ
এক কথায় নারীবাদ শব্দটির অর্থ হচ্ছে নারী স¤^ন্ধীয় মতবাদ।

পারিভাষিক অর্থ
পারিভাষিক অর্থে নারীবাদ হচ্ছে একটি আন্দোলন, যা কিনা পুরুষের মতো একজন মানুষ হিসাবে নারীর পূর্ণ অধিকার দাবি করে।

বর্তমান যুগে নারীবাদ
বর্তমান যুগে নারীবাদ হচ্ছে সমতা ও মর্যাদা এবং নারীদের ¯^াধীনতা অর্জনের সংগ্রাম; ঘরে ও বাইরে নিজেদের জীবন ও দেহের উপর নিংন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।

নারীবাদের ধারণা
নারীবাদের ধারণা বিভিন্ন স্থান, পরিস্থিতি ও ইস্যুর ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাবে বর্ণিত হতে পারে এবং হয়ে থাকে। সে হিসাবে একটি দেশের ভেতরেও বিভিন্ন নারীর কাছে নারীবাদ তাদের শ্রেণি, পটভূমি শিক্ষা, সচেতনতা ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন অর্থ বহন করে।

নারীবাদের সংজ্ঞা
নারীবাদ হচ্ছে পরিবার সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে সাধারণভাবে নারীদের উপর, পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ, শোষণ ও নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতা এবং বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য সচেতন উদ্যোগ গ্রহণ করা।
মূলত নারীবাদ একটি বহুমাত্রিক ধারণা। এর কোন একক, নির্দিষ্ট বা সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা আজও নির্ধারণ করা যায়নি। বিভিন্ন নারীবাদী গবেষক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নারীবাদকে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের মতামতের ভিন্নতার কারণে নারীবাদ শব্দটি একাধিক অর্থ বহন করে। নারীবাদের কিছু প্রমাণ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-

এস্টেল বি ফ্রীডম্যান (ঊংঃবষষব ই. ঋৎববফসধহ) তার ‘ঘড় ঞঁৎহরহম ইধপশ’ নামক গ্রন্থে নারীবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন এভাবে, “নারীবাদ একটি বিশ^াস যে, নারী ও পুরুষের অন্তর্নিহিত মূল্যমান সমান। যেহেতু অধিকাংশ সমাজ ব্যবস্থা পুরুষকে গোষ্ঠী হিসাবে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে, কাজেই নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক আন্দোলন অত্যাবশ্যক।”
সাসকিয় উইরিঙ্গা (ঝধংশরধ ডরবৎরহমধ) তার ‘ঝঁনাবৎংরাব ডড়সবহ’ গ্রন্থে বলেছেন, “নারীবাদ হচ্ছে একটি বিশ্বাস! যা নারী সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা পাল্টে দিয়ে এর নতুন অর্থ খুঁজে বের করে জেন্ডার সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে বর্জন করে ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে নারীত্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করে।”
রোজমিল্ড ডেলমার (জড়ংধষরহফ উবষসধৎ) তার ‘ডযধঃ রং ঋবসরহরংস’ গ্রন্থে বলেন, “সাধারণভাবে নারীবাদ বলতে বুঝায়, সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনের জন্য সক্রিয় আগ্রহ কে।”
জুডিথ অ্যাস্টেলারা (ঔঁফরঃয অংঃবষষধৎধ) তার ‘ঋবসরহরংস ধহফ উবসড়পৎধঃরপ ঞৎধহংরঃরড়হ রহ ঝঢ়ধরহ’ গ্রন্থে বলেছেন, “নারীবাদ হচ্ছে সামাজিক রূপান্তর ও আন্দোলনের লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা, যা নারী নিপীড়ন বন্ধ করার চেষ্টা করে।
সুতরাং বলা যায়, নারীবাদ হচ্ছে এমন একটি তত্ত¡ীয় কাঠামো যা নারীদের উপর পুরুষতান্ত্রিক নির্যাতনের কারণ ও ফলাফল এবং নারী মুক্তির ব্যবস্থাপত্র প্রদান করে থাকে।

নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ
নারীবাদের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ধারণা করা হয়, এ ইতিহাসের সূচনা পঞ্চদশ শতাব্দীতে। তবে কবে, কোথায়, কখন, কে নারীর প্রতি বৈষম্য এবং নারী-পুরুষ সমানাধিকারের প্রশ্ন প্রথম উত্থাপন করেছিলেন সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। ফরাসি গবেষক সিমন দ্য বুভ্যেয়ার (ঝরসড়হব ফব ইবধাঁড়রৎ) এর মতে, যিনি নারীর ¯^পক্ষে প্রথম কথা তুলে ধরেছিলেন তার নাম খ্রিষ্টিন ডি পিজন (ঈযরৎরংঃরহব ফব চরংধহ) ১৪০৫ সালে প্রকাশিত ‘ঞযব ইড়ড়শ ড়ভ ঃযব ঈরঃু ড়ভ খধফরবং’ গ্রন্থে তিনি দাবি করেন, বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই যে, পুরুষ ও নারী উভয়ে ইশ^রের প্রজা এবং মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত। নারী ভিন্ন কোন প্রজাতির নয়; কাজেই তাদের নৈতিক শিক্ষা থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে কোন যুক্তি নেই। ১৯৬২ সালে ওলন্দাজ নারী মার্গারেট লুকাস রচিত ‘ঋবসধষব ঙৎধঃরড়হং’ বা ‘নারী ভাষণ’ বিশে^র ইতিহাসে প্রথম ‘নারীবাদ সাহিত্য’ হিসাবে পরিচিত হয়।

নারীবাদের উদ্ভবের প্রথম পর্যায়
অষ্টাদশ শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে শুরু হয় নারীবাদের উদ্ভবের প্রথম পর্যায়। মূলত ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই আমেরিকায় ¯^াধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণীত হলে এবং ১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান গৃহীত হলে, সে সময় থেকে নারীরা সমানাধিকারের দাবি জানাতে থাকেন। এরপর ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ ‘সাম্য, মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্ব’ এই মহান বাণী নারীর অধিকারকে সামনে নিয়ে আসে। তাই তখন নাগরিক অধিকারের ¯^ীকৃতি প্রদানের জন্য তথা ¯^ীয় ভোটাধিকার লাভের জন্য আন্দোলনে যেতে হয় নারীকে। “নারীদের যদি ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার অধিকার থাকে, তবে পার্লামেন্টে যাওয়ার অধিকার থাকবে না কেন?” এই প্রশ্নটি করেন অলিম্প ডি গুৎজ (ঙষুসঢ়ব ফব এড়ঁমবং)। তবে সত্যিকারের নারীবাদী কণ্ঠ প্রথমে শোনা যায় ইংরেজ লেখিকা ‘মেরী ও লস্টোনক্রফট’-এর যুগান্তকারী গ্রন্থে। নারীবাদ সম্পর্কে তার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। ঊনবিংশ শতাব্দীর ৫০ ও ৬০-এর দশকে যে দু’জন দার্শনিক নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে জন স্টুয়ার্ট মিল এবং হ্যারিয়েট টেইলর মিল উল্লেখযোগ্য। হ্যারিয়েট টেইলর মিল ১৮৫১ সালে তার (ঊহভৎধহপযরংবসবহঃ ড়ভ ডড়সবহ) গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৮৫৭ সালে তার মৃত্যু হলে, তার ¯^ামী জন স্টুয়ার্ট মিল ১৮৬৫ সালে পার্লামেন্টে নারীর ভোটাধিকারের পক্ষে জোরালো যুক্তি উত্থাপন করেন। ১৮৬৯ সালে তিনি নারীর ভোটাধিকারসহ অন্যান্য সকল অধিকার প্রদানের লক্ষ্যে রচনা করেন সাড়া জাগানো গ্রন্থ ‘ঞযব ঝঁনলবপঃরড়হ ঙভ ডড়সবহ’ সে সময়কার নারীবাদী কর্মীরা কৃতজ্ঞতার সাথে মিলের এ অবদানকে ¯^াগত জানিয়েছিল।

নারীবাদের উদ্ভবের দ্বিতীয় পর্যায়
নারীবাদের উদ্ভবের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর ৪০-এর দশক থেকে। বিংশ শতাব্দীর দিকে ভোটাধিকার অর্জনের পরে নারীবাদী আন্দোলন এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়ে। বিংশ শতাব্দীর ৫০-এর দশক হতে পুঁজিবাদী দেশসমূহ কর্তৃক বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি গৃহীত হলে নারীরা উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত হতে থাকে। ফলে ৬০-এর দশক হতে নারীবাদী আন্দোলনে নতুন প্রেরণা যোগ হয়। ১৯৬৩ সালে মার্কিন সাংবাদিক বেটি ফ্রাইডান (ইবঃঃু ঋৎরবফধহ) এর ঞযব ঋবসরহরহব গুংঃরয়ঁব গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে, নারী আন্দোলনে নতুন করে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। ১৯৬৬ সালে বেটি ফ্রাইডান ও অন্যান্য নারী মিলে ‘ঘধঃরড়হধষ ঙৎমধহরুধঃরড়হ ভড়ৎ ডড়সবহ’ (ঘঙড) প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠন ১৯৭০ সাল থেকে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। কেননা ভোটাধিকার নারীমুক্তির শেষ কথা নয়। প্রথমাবস্থায় নারীরা মনে করেছিলেন যে, ভোটের অধিকার অর্জিত হলে কালক্রমে নারী অন্যান্য সকল অধিকার লাভ করবে। কিন্তু ভোটাধিকার লাভের কয়েক যুগ পরেও নারী তার কাক্সিক্ষত মঞ্জিলে পৌঁছাতে পারেনি।

৭০-এর দশক হতে নারীবাদী আন্দোলন আবার দানা বেঁধে উঠে। আর এ আন্দোলনের বাস্তব প্রকাশ ঘটে ১৯৭০ সালে অ·ফোর্ডের রাসকীন কলেজে ‘নারী মুক্তি সভা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। উক্ত সভায় চারটি বিশেষ বিষয় তুলে ধরা হয়। যেমন-
ক. নারী-পুরুষের সমান বেতন ও ভাতা।
খ. নারী-পুরুষের জন্য একই ধরণের শিক্ষা এবং সুযোগ।
গ. ২৪ ঘন্টা শিশু সেবা প্রদানের আশ্রম।
ঘ. চাওয়ামাত্র বিনামূল্যে গর্ভনিরোধ এবং গর্ভপাতের ব্যবস্থা।

উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত বিষয়গুলোর সাথে চার বছর পর ১৯৭৪ সালে আরো কতিপয় দাবি সংযুক্ত করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-
ক. নারীদের অর্থনৈতিক ¯^াধীনতা।
খ. নারীদের আইনগত ¯^াধীনতা।
গ. সমকামীদের ক্ষেত্রে প্রভেদ দূরীকরণ।
ঘ. লিঙ্গ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নারীর ¯^াধীনতা।

১৯৭৮ সালে নারীদের দাবী হয়ে দাঁড়ায় ভয়ভীতি থেকে ¯^াধীনতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা থেকে ¯^াধীনতা। বলপূর্বক নারীর শ্লীলতাহানী থেকে ¯^াধীনতা এবং যে সকল আইনের দ্বারা নারীদের উপর পুরুষের আধিপত্য এবং আক্রমন অব্যহত বা স্থায়ী রূপ গ্রহণ করতে পারে সেগুলোর বাতিলকরণ। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসাবে ¯^ীকৃতি দান করে। এরপর ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপের জন্য ‘সিডও’ (ঈঊউঅড) সনদ অনুমোদন করে। এভাবেই ‘নারীবাদ’ নারীবাদী আন্দোলনের সীমানায় আবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করেছে।

নারীবাদের বিভিন্ন তত্ত¡ বা মতবাদসমূহ
নারী ও রাজনীতির তাত্তি¡ক ভিত্তি হচ্ছে নারীবাদ। নারীবাদ নারী আন্দোলনের পক্ষে যুক্তি, তত্ত¡ ও শক্তি জোগায়। তবে নারীবাদ অভিন্ন কোন মতবাদ বা তত্ত¡ নয়। কেননা নারীবাদী গবেষকদের মধ্যে মত ও পথের বিভিন্নতা রয়েছে। নারীবাদী গবেষকগণ নারী ও সমাজকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন ও নারীবাদের তাত্তি¡ক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। ফলে তাঁদের মত ও পথের বিভিন্নতার কারণে নারীবাদের বিভিন্ন ধারা বা মতবাদ বা তত্তে¡র উদ্ভব ঘটেছে। তাই নারীবাদের তাত্তি¡ক ব্যাখ্যা সম্পর্কে মতভেদ ও বিতর্ক থাকাই ¯^াভাবিক। নারীবাদের তত্ত¡ বা মতবাদ প্রধান চারটি ধারায় বিভক্ত। যথা-

ক. উদারপন্থী নারীবাদ।
খ. আমূল ও প্রগতি বা র‌্যাডিক্যাল নারীবাদ।
গ. মার্কসীয় নারীবাদ।
ঘ. সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ।

নারীবাদের তাত্তি¡ক মতবাদসমূহ
উদারপন্থী নারীবাদ
‘উদারতাবাদ’ (খরনবৎধষরংস) নামক রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে উদারপন্থী নারীবাদ নামক তাত্তি¡ক চিন্তাধারার উদ্ভব ঘটেছে। উদাপন্থী নারীবাদের সাথে যাদের নাম বিশেষভাবে জড়িত রয়েছে তারা হলেন- মেরী ওলস্টোনক্রাফট (গধৎু ডড়ষষংঃড়হবপৎধভঃ), জন স্টুয়ার্ট মিল (ঔড়যহ ঝঃঁধৎঃ গরষষ), হ্যারিয়েট টেইলর (ঐধৎৎরবঃ ঞধুষড়ৎ), বেটি ফ্রাইডান (ইবঃঃু ঋৎরবফধহ) প্রমূখ। এরা সকলেই উদারপন্থী নারীবাদের প্রবক্তা। এরা সকলেই বিশ^াস করেন যে, সমাজে নারীর অধস্তনতার মূল কারণ সমাজের প্রচলিত প্রথা বা রীতিনীতি এবং আইনগত ব্যবস্থা; যা নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরী করে।

আমূল নারীবাদ
নারীবাদী আন্দোলনের মধ্যে কয়েকটি ধারা ৬০-এর দশকের শেষদিক থেকে ক্রমেই ¯^তন্ত্র রূপ নিতে থাকে। যারা নারীর অধস্তনতাকে নারী-পুরুষের জৈবিক সম্পর্কের ফল হিসাবে দেখেছেন, তারাই আমূল নারীবাদী নামে পরিচিত হন। আমূল নারীবাদী প্রবক্তাদের মধ্যে শুলামিথ ফায়ারস্টোন (ঝযঁষধসরঃয ঋরৎবংঃড়হব), কেট মিলেট (কবঃব গরষষবঃঃ), মেরিলিন ফ্রেন্স (গধৎরষুহ ঋৎবহপয), মেরী ডালি (গধৎু উধষু) প্রমূখ নারীবাদী গবেষক অন্যতম। এই নারীবাদের মূল বক্তব্য হলো- পুরুষ নারীকে লৈঙ্গিক পীড়নের মাধ্যমে শোষণ করে।

মার্কসীয় নারীবাদ
মার্কসীয় নারীবাদ হলো নারী সম্পর্কে কার্ল মার্কস (কধৎষ গধৎী) ও ফ্লেডারিক এঙ্গেল-এর মতবাদের অনুসারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা। ঊনবিংশ শতাব্দীর আগে সমাজে নারী জাতির পরাধীনতা ও নারীমুক্তির সমস্যার উপর কোন সুচিন্তিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়নি। কেননা এর আগে নারী সম্পর্কিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এই যে, নারী জাতি চিরদিনই পুরুষের অধীন ছিল এবং থাকবে। তাই নারীর সেই পরাধীনতা বা দাসত্ব মেনে নিয়েই পুরুষ শাষিত সমাজে বসবাস করতো। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মার্কসবাদের সূচনার পর মার্কস-এঙ্গেলসই সর্বপ্রথম নারীর পরাধীনতা তথা দাসত্বের ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রদান করেন এবং মার্কসীয় নারীবাদীররা একমাত্র শ্রেণি শোষণহীন সমাজেই যে নারীর পূর্ণ মুক্তি বা ¯^াধীনতা তা দেখিয়েছেন।

সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ
সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ মূলত প্রগতি, মার্কসীয় ও মনোবিশ্লেষক নারীবাদী চিন্তার সংমিশ্রণ। এ মতবাদকে আবার ‘মনঃসমীক্ষণগত নারীবাদ’ বলে নাম দেওয়া যায়। মনঃসমীক্ষণগত নারীবাদে বলা হয়- নারী নিপীড়নের মূল কারণ মানুষের মনঃস্তত্তে¡ নিহিত। আবার মনস্তত্ত¡ যেভাবে গঠিত হয়েছে তাতে অর্থনৈতিক বিপ্লব ছাড়া নারী নিপীড়ন উচ্ছেদ সম্ভব নয়।

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের পদক্ষেপ
এক সময় নারীরা ছিল অবহেলিত ও অধিকার থেকে বঞ্চিত। শতাব্দীর বঞ্চিত, অবহেলিত নারীদের অনগ্রসরতা দূর করার জন্য এবং পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ এ পর্যন্ত অনেক কার্যকরী ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ ও কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছে। বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ বা উদ্যোগ গুলোকে এ ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণার পাশাপাশি নারীদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণে সবিশেষ উদ্যোগী ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

নারী ও মানবাধিকার
নারীর অধিকার বলতে বুঝায় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা ও ন্যায্যতা। আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পুরুষ যে অধিকার ও মর্যাদা ভোগ করে নারীকে সমভাবে সে সকল অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করতে হবে। নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা অর্জন তথা উভয়ের সমান অধিকার, সমান সুযোগ এবং সমান দায়িত্ব থাকবে; যাতে তারা তাদের ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতা অর্জন এবং সামাজিক হীত সাধনের জন্য তাদের নিজ¯^ প্রতিভা ও শক্তি পূর্ণরূপে বিকশিত করতে পারে। বিশ^ সম্প্রদায় এ ঘোষণা করেছে যে, ‘কোন দেশের পূর্ণ ও সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন, বিশে^র মঙ্গল এবং শান্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সর্বোত্তম অংশগ্রহণ।

প্রাচীন যুগের শুরুতে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা, সাম্য ও ন্যায্যতা ছিল। বরং কিছু কিছু দিকে নারীর ভ‚মিকা ছিল প্রধান ও উচ্চতর। নারীর সম্মান ও মর্যদা ছিল। তৎকালীন সময়ে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক ছিল সমতা ও ন্যায্যতাভিত্তিক। কিন্তু ইতিহাসের বির্বতনের ধারায় সমঅধিকার ও মর্যাদার ক্ষেত্রে দেখা দেয় বৈষম্য। কালক্রমে নারী তার ন্যায্য অধিকার হারিয়ে পুরুষের অধিন হয়ে পড়ে। আর তখন থেকেই শুরু হয় নারীর প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতনের ইতিহাস।

জাতিসংঘ জাতীয় সরকারসমূহ ও অন্যান্য সংস্থাগুলোকে নারী উন্নয়নের কাজগুলো করতে নানাভাবে সহায়তা করছে। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এ পর্যন্ত নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ বা উদ্যোগসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো :
১. ১৯৪৫ : নারী-পুরুষের মধ্যে সমতার নীতিমালা প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ সনদ গৃহীত হয়।
২. ১৯৪৬ : নারী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রসারের উদ্দেশ্যে নারীর মর্যাদা সম্পর্কিত কমিশন ‘ঈঝড’ (ঈড়সসরংংরড়হ ড়হ ঝঃধঃঁং ড়ভ ডড়সবহ) গঠিত হয়।
৩. ১৯৪৮ : জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা জারি।
৪. ১৯৫১ : সমান কাজের জন্য নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান মজুরির নীতি এবং তার চর্চা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইএলও (ওখঙ) কর্তৃক সনদ অনুমোদন।
৫. ১৯৫২ : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নারীর রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত সনদ অনুমোদন। এ সনদে নারী ভোটাধিকারসহ আইনের অধীনে সমান রাজনৈতিক অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদন লাভ করে।
৬. ১৯৬০ : কর্মসংস্থান ও পেশাক্ষেত্রে বৈষম্য বিলোপ সম্পর্কিত আইএলও কর্তৃক সনদ গৃহীত।
৭. ১৯৬২ : বালিকা এবং মহিলাদের শিক্ষাক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রবর্তনের লক্ষ্যে ‘ইউনেস্কো’ (টঘঊঝঈঙ) সনদ গৃহীত।
৮. ১৯৬৭ : নারীর বিরুদ্ধে সকল ধরণের বৈষম্য দূরীকরণ সম্পর্কিত ঘোষণা অনুমোদন।
৯. ১৯৭২ : নারীদের সমস্যার উপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১৯৭৫ সালকে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ হিসাবে ঘোষণা।
১০. ১৯৭৪ : জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ উপলক্ষ্যে ‘বিশ^ নারী সম্মেলন’ আহŸান।
১১. ১৯৭৯ : সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ ‘সিডও’ (ঈঊউঅড)-এর কার্যক্রম শুরু।
১২. ১৯৯১ : নারীর অবস্থা সম্পর্কে উপাত্তের বা ডাটার একটি সংকলনের মাধ্যমে বিশে^র নারীপ্রবণতা ও পরিসংখ্যান প্রকাশ।
১৩. ১৯৯২ : জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়নের সম্মেলনে পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকার ¯^ীকৃতি।
১৪. সামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কিত বিশ^ শীর্ষ সম্মেলনে (ডড়ৎষফ ঝড়পরধষ ঝঁসসরঃ) কর্মসূচিতে নারীবাদ সমস্যার পুরো বিষয় প্রতিফলিত। খসড়া ঘোষণায় পূর্ণ সমতা নিশ্চিতকরণের প্রতিশ্রæতিতে অন্তভর্‚ক্ত।
১৫. ২০০০ : নিউইয়র্কে জুন মাসে ‘বেইজিং প্লাস ফাইভ’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
১৬. ২০০৫: ‘বেইজিং প্লাস টেন’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

জাতিসংঘ ঘোষিত নারী দশক
জাতিসংঘ ঘোষিত নারী দশকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
এ দশকের মূল ¯েøাগান ‘সমতা, উন্নয়ন এবং শান্তি’ (ঊয়ঁধষরঃু উবাবষড়ঢ়সবহঃ ধহফ চবধপব)
বিশ^ নারী সম্মেলনে ‘সমতা, উন্নয়ন এবং শান্তির যে শ্লোগান ঘোষিত হয়েছিল, পরবর্তীতে এর লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
সমতা (ঊয়ঁষরঃু) যার অর্থ নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা আনয়ন।
উন্নয়ন (উবাবষড়ঢ়সবহঃ) যার অর্থ নারীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা।
শান্তি (চবধপব) যার অর্থ বিশ^শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীর ভ‚মিকাকে শক্তিশালী করা।

জাতিসংঘ নারী দশকের এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নারী সমাজকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সকল প্রকার পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। নারী সমাজের সমতা, অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে দেশে দেশে উন্নয়ন ও শান্তি নিশ্চিত করাই প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘ নারী দশকের লক্ষ্য। সুতরাং বলা যায় যে, জাতিসংঘ ঘোষিত নারী দশক এর মূল উদ্দেশ্য হলো- বিশ^ নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমতার নীতিমালা গ্রহণ করা। নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়া এবং মানুষ হিসাবে সমান অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও সম্মানের নিশ্চয়তা প্রদান করা।

জাতিসংঘ নারী দশকের পর্যায় ও ভাগ
জাতিসংঘ ঘোষিত নারী দশক ১৯৭৬-৮৫ এ সময়ের মধ্যে নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য তিনটি ‘বিশ^ নারী সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। যথা- মে·িকো সম্মেলন (১৯৭৫), কোপেনহেগেন সম্মেলন (১৯৮০) এবং নাইরোবি সম্মেলন (১৯৮৫)
ক. নারী দশকের প্রথম ভাগ : ১৯৭৫ সালে মে·িকোতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ^ নারী সম্মেলন ‘সমতা, উন্নয়ন ও শান্তি’ এ শ্লোগান নিয়ে জাতিসংঘ ১৯৭৬/৮৫ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘নারী দশক ঘোষণা করে। জাতিসংঘ নারী দশকের প্রথম ভাগ বা প্রথমার্ধে ‘সমতা, উন্নয়ন ও শান্তির লক্ষ্যে ‘বিশ^ কর্ম পরিকল্পনা’ অনুমোদিত হয়।
খ. নারী দশকের মধ্যভাগ : ১৯৮০ সালে নারী দশকের মধ্যকালীন সময় কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় বিশ^ নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে নারী দশকের (১৯৭৬-৮৫) দ্বিতীয়ার্ধের জন্য সমতা, উন্নয়ন ও শান্তি শীর্ষক ‘বিশ^ কর্মপরিকল্পনা’ গৃহীত হয়। এ সম্মেলনে আরও কতগুলো বিষয় উপস্থাপিত হয়। যথা : শিক্ষা, ¯^াস্থ্য ও কর্মসংস্থান ইত্যাদি।
গ. নারী দশকের শেষ ভাগ : ১৯৮৫ সালে ‘সমতা, উন্নয়ন ও শান্তির লক্ষ্যে জাতিসংঘ নারী দশক (১৯৭৬/৮৫) উদযাপিত হয়। এ প্রচেষ্টার সাফল্য পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের জন্য ১৯৮৫ সালে নাইরোবিতে তৃতীয় বিশ^ নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নারী দশকের শেষ প্রান্তে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ২০০০ সাল নাগাদ নারী উন্নয়নের জন্য নাইরোবি অগ্রমূখী কৌশল গৃহীত হয়। সেখানে নারী-পুরুষের ক্ষমতা, ¯^তন্ত্রতা ও ক্ষমতায় উৎকর্ষতা সাধান, ¯^াস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা, অধিকতর উন্নত শিক্ষা লাভের সুযোগ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভূক্ত হয়। নাইরোবি সম্মেলনে নারী দশকের পূর্ববর্তী অগ্রগতি সমূহের পর্যালোচনা করা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে নারী আন্দোলন এবং নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ইস্যু সমূহের প্রতি সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি কি রূপ সে সম্পর্কে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ম্যান্ডেট অনুসারে সম্প্রসারিত জাতিসংঘ নারী দশক সম্পর্কিত ¯ে^চ্ছামূলক তহবিল ‘ইউনিফেম’ একটি ¯^ায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়।

নারীর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ
নারীর মানবাধিকার অর্জনের ইতিহাসে ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ’ ঈড়হাবহঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঊষরসরহধঃরড়হ ড়ভ ধষষ ভড়ৎসং ড়ভ উরপৎরসরহধঃরড়হ ধমধরহংঃ ডড়সবহ (ঈঊউঅড) ‘সিডিও’ একটি মাইলফলক। জাতিসংঘের ৬০টির অধিক সনদ বা চুক্তির মধ্যে কেবল ৭টি সনদকে ‘মানবাধিকার সনদ’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। আর এ ৭টি সনদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘সিডিও সনদ’। এ সনদের মূল লক্ষ্য হলো- মানুষের মৌলিক অধিকার, মর্যাদা ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমতার নিশ্চয়তা বিধানে আবশ্যকীয়তা তুলে ধরা এবং নারীর অধিকারকে মানবাধিকার হিসাবে ¯^ীকৃতি দান।

বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন
বিশ^ব্যাপী নারী আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করলেও নারী সমাজ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার। যার ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হওয়া সত্তে¡ও এ নারী সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অংশগ্রহনকে বাধাগ্রস্ত ও সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। অথচ দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণ ও উন্নতির কথা ভাবতে গেলে সেখানে নারীর কথা অবশ্যই ভাবতে হয়। কেননা, পুরুষের পাশাপাশি নারীর ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই নারীকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা ব্যতীত এ দেশে সঠিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সে জন্য বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের ধারাকে ব্যাপক ও ত্বরাšি^ত করার লক্ষ্যে এবং সর্বস্তরের নারীদেরকে উন্নয়ন কর্মসূচির আওতাভ‚ক্তকরণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি গৃহীত হয়ে আসছে।

জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারী
জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলঅদেশ আধুনিক উন্নয়নে বিশে^র তুলনায় অনেক বেশি পিছিয়ে রয়েছে। বৈদেশিক সাহায্যের উপর সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচির অপরিসীম নির্ভরশীলতার ফলে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার নিজ¯^ নিয়ন্ত্রণ বহুলাংশে হারিয়ে ফেলেছে। বৈদেশিক ঋণ নির্ভরশীলতার ফলে পরিকল্পনাধীন বিষয়ের অগ্রাধিকার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই নিজ¯^ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার অক্ষমতার দরুণ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ব্যবহারিক কার্যকারিতা সীমিত হয়ে পড়েছে। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেই উন্নয়ন অগ্রাধিকার নিরুপনে সরকারের মনোভাব প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশ সরকার জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এ পর্যন্ত গৃহীত পাঁচটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে যে সকল কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮)
প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নারীকে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠী হিসাবে সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাই এ পরিকল্পনায় নারী উন্নয়ন তেমন বেশি প্রাধান্য পায়নি। তবে সে জন্য মূলত তৎকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা দায়ী ছিল। কেননা যুদ্ধপরবর্তী জাতীয় অর্থনীতির পূণর্গঠন ও উন্নয়নই প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল। তবে এ ক্ষেত্রে নারী বিষয়ক প্রসঙ্গ এসেছে কেবল বাংলাদেশের ¯^াধীনতা যুদ্ধ ও সামাজিক আন্দোলনে যে অসংখ্য নারী বিধবা বা ধর্ষিতা হয়েছেন তাদের পুনর্বাসিত করার দায়িত্বের সাথে সম্পর্কিত করে। তাই ¯^াধীনতার অব্যহতির পর পরই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনের জন্য একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে নারীবিষয়ক যে পাঁচটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, সেগুলো ছিল সমাজকল্যাণ ও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত। এ প্রকল্পের জন্য ২৭৬.৫৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৮০-৮৫)
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮০-৮৫) প্রথম সুনির্দিষ্টভাবে নারীর জন্য ব্যয় বরাদ্দ করা হয়। প্রকৃত পক্ষে ১৯৭৮ সালে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপনকারী বিশে^র গুটিকয়েক রাষ্ট্রের একটিতে পরিণত হয় বাংলাদেশ। নারী বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যয় বরাদ্দ এ প্রচেষ্টার ফল। কারণ বাংলাদেশের পরিকল্পনাধীন ব্যয় বরাদ্দের বিষয়টি সর্বদাই মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক। তাই এই মন্ত্রণায়লয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী বিষয়ক প্রকল্পের সরাসরি ব্যয় বরাদ্দের বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক মনোযোগ অর্জন করে।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৮৫-৯০)
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮৫-৯০) নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ধারণাও ব্যাপকভাবে উচ্চরিত হয়। এ পরিকল্পনায় নারীদের সুপ্ত সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে তাদেরকে জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করাকে অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হয়। এতে নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও ¯^াস্থ্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মহিলাদের জন্য গ্রামকেন্দ্রিক ¯^াস্থ্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এখানে গ্রামীন মহিলাদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং মহিলা প্রাথমিক শিক্ষিকা নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের জড়িত করার ক্ষেত্রে জোড় দেওয়া হয়। এতে সরকারি খাতের চাকরীসমূহে মহিলাদের কোটা ১০% থেকে ১৫% বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা খাতে ৬০ শতাংশেরও বেশী চাকরী মহিলাদের মাধ্যমে পূরণ করার কথা বলা হয় এবং অন্যান্য খাতেও মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত করা হয়।

চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৯০-৯৫)
চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নারীদেরকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় আনয়নের লক্ষ্যে নারী উন্নয়নকে ম্যাক্রো কাঠামোর সাথে সংযুক্ত করে। নারীদের জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মূল ধারায় নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে এ পরিকল্পনা নারীবাদী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রচুর আলোচনার জন্ম দেয়। এ সময়ে দাতাগোষ্ঠীর আর্থিক সহায়তা ক্রমবর্ধমান হারে নারী বিষয়ক বিভিন্ন সমীক্ষা বাংলাদেশের নারী ইস্যুর ¯^পক্ষে একটি শক্ত ভিত্তি তৈরী করে এবং সরকারকে এ ব্যাপারে আরও মনযোগী করে তুলে। আর তাই সরকার কর্তৃক প্রথমবারের মত জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারী সংক্রান্ত বিষয়সমূহকে একটি পৃথক অধ্যায় হিসেবে সংযোজিত করে।

পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৯৭-২০০২)
পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নারীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে জেন্ডার-বৈষ্যম্য হ্রাস করার অঙ্গীকার প্রদান করা হয়েছে। নারীর বর্তমান সামগ্রিক আথ-সামাজিক অবস্থার চিত্র উপস্থাপন করার মাধ্যমে উল্লিখিত অঙ্গিকার বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা রয়েছে এ পরিকল্পনায়। এতে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় ক্ষেত্রেই নারীর উন্নয়ন নীতিমালার লক্ষ্যসমূহ সংযোজিত হয়েছে। উৎপাদনশীল ¯^কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষা, দক্ষতা ও প্রশিক্ষণকে অগ্রাধিকার প্রদান। ক্ষুদ্রঋণ ও মৌলিক ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে নারীর অধিকার সংরক্ষণ ও ক্ষমতায়ন এবং নারীর বিদ্যমান দারিদ্রের বোঝা লাঘবের উপর এ পরিকল্পনা গুরুত্ব প্রদান করে।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা
বাংলাদেশের পশ্চাৎপদ নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য সরকারী পর্যায়ে গৃহীত নীতিই হচ্ছে “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি”। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি নারী সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি, আন্দোলন ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত হয়েছে।
১৯৯৫ সালে বেইজিং চতুর্থ বিশ^ নারী সম্মেলনের গৃহীত বেইজিং কর্ম পরিকল্পনায় ১২টি ইস্যুকে চিহ্নিত করা হয় নারী উন্নয়নের অন্তরায় হিসাবে। এ ইস্যুগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘভুক্ত তথা যেকোন রাষ্ট্রের করণীয় হিসাবে সরকার, রাষ্ট্র ও জনগণের ভ‚মিকাকে চিহ্নিত করা হয়। যেকোন রাষ্ট্রে, পরিবারে, সরকারে ও রাজনীতিতে নারী-পুরুষের ‘সমঅধিকার’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব সরকারের। জাতিসংঘ সিডও সনদের ‘সমতার নীতি’ ব্যাখ্যায়ও একই কথা বলা হয়েছে। এসব ভাবচেতনা কর্মসূচি হতে লাগল। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা১৯৯৭, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৪, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ ঘোষিত হয়েছে।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ১৯৯৭
১৯৯৭ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ১৯৯৭’ ঘোষিত হয়। এ নীতিমালা তৎকালীন সরকার এবং বিভিন্ন নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রণীত হয়েছিল।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিসমূহ
১৯৯৭ সালের ৮ মার্চ ঘোষিত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিসমূহ নি¤œরূপ-
১. নারীর মানবাধিকার এবং মৌলিক চাহিদার বাস্তবায়ন।
২. মেয়ে শিশুর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সাধন এবং সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন।
৩. নারীর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন দূরীকরণ।
৪. সশস্ত্র সংঘর্ষ ও নারীর অবস্থান।
৫. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ।
৬. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি।
৭. জাতীয় অর্থনীতির সকল কর্মকান্ডে নারীর সক্রিয় ও সম অধিকার নিশ্চিতকরণ।
৮. নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন।
৯. নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন।
১০. ¯^াস্থ্য ও পুষ্টি।
১১. গৃহায়ন ও আশ্রয়।
১২. নারী ও পরিবেশ।
১৩. নারী ও গণমাধ্যম।
১৪. বিশেষ দুর্দশাগ্রস্থ নারী।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৪ (সংশোধিত)
১৯৯৭ সালের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ছিল বাংলাদেশের নারী সমাজের আন্দোলনের পর অর্জিত নীতিমাল। ২০০৪ সালের মে মাসে জোট সরকার নারী উন্নয়নের নীতিমালার ব্যাপক সংশোধন আনে। তাতে মূল নীতিমালার যেসব বিষয় বাদ দেওয়া হয়, সেগুলো হচ্ছে :
১. নারী-পুরুষের সমান অধিকার।
২. সম্পত্তিতে সমান অধিকার।
৩. নারীর উচ্চ পদে আসীন ইত্যাদি।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৪ পরিবর্তন করে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ১৯৯৭’ পূনর্বহাল করা হয়। ২০০৮ সালের ১৭ জানুয়ারী মহিলা পরিষদের ‘একাদশ জাতীয় সম্মেলনে’ প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমদ ঘোষণা করেন যে, “নতুন নারী উন্নয়ন নীতি যুগপোযোগী করে শীঘ্রই ঘোষিত হতে যাচ্ছে।” ২০০৮ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারীতে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৮’ অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রধান উপদেষ্টা ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৮’ ঘোষণা করেন।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮-এ নারীর ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতি পূনর্বহাল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এবং নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার নিমিত্ত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে।

লেখিকা : শেখ আফরোজা জান্নাত

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন