হাদিসের বঙ্গানুবাদ : হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত- রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন কোন বেহেশত বাসীকে যদি দুনিয়ার সকল সম্পদ দেয়া হয়, তথাপি সে পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া পছন্দ করবে না। একমাত্র আল্লাহর পথে শাহাদত বরণকারী ব্যক্তি এর ব্যতিক্রম। সে কামনা করবে, দুনিয়াতে পুনরায় তাকে পাঠানো হোক এবং আরোও দশ বার সে শাহাদত লাভ করে আসুক। শাহাদতের মর্যাদা ও সম্মান সে নিজ চোখে দেখবে, তার কারণেই সে এরূপ আকাঙ্খা করবে । (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি)
রাবী পরিচিতি : হযরত আনাস (রা.) এর পিতার নাম মালেক, মাতার নাম উম্মে সুলাইম বিনতে মেলহান, তাঁর উপনাম; আবু হামজা, আবু উমাইয়া, আবু উমামা, আবু উমায়মা। উপাধি : খাদেমুর রাসূল।
হযরত আনাস (রা.) কে তার মাতা দশ বছর বয়সে রাসূল (সা.) এর খেদমতে রেখে যান। এবং পরবর্তী দশ বছর পর্যন্ত তিনি রাসূল (সা.) এর খেদমত করেন। এত দীর্ঘ সময় আর কোন সাহাবী রাসূল (সা.) এর খেদমত করার সুযোগ পাননি ।
বয়স স্বল্পতার কারণে তিনি বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। পরবর্তী খাইবারসহ সকল অভিযানে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং বীরত্বের পরিচয় দেন। হযরত আবু বকর (রা.) এর খেলাফত কালে তিনি বাহরাইনের আমেল বা গভর্নর নিযুক্ত হন। হযরত উমার রা. এর খেলাফত কালে বসরার মুফতি হিসাবে নিযুক্ত হন।
আল্লামা আইনী (রহ.) এর মতে, তার বর্ণিত হাদিস সংখ্যা (১২৮৬) এক হাজার দুইশত ছিয়াশি খানা। তন্মধ্যে বুখারী ও মুসলিম শরীফে যৌথভাবে ১৬৮ টি হাদিস উল্লেখ রয়েছে। রাসূলে আরাবী (সা.) এর দোয়ার বরকতে তিনি দীর্ঘ হায়াত, বহু সম্পদ ও একশত সন্তানের জনক হয়েছিলেন। এই প্রাচীনতম সাহাবী বসরায় ১১০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার থেকে ইমাম যুহুরী, কাতাদা, ইসহাক প্রমূখ মনীষীগণ হাদিস বর্ণনা করেন।
হাদিসের ব্যাখ্যা : একজন মুমিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশের পরে দুনিয়ার সকল সম্পদ তাকে দান করলেও সে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে না। অথচ শহীদ ব্যক্তি বার বার ফিরে আসতে চাইবে। একজন মুমিন ও একজন শহীদের এই যে পরষ্পর বিরোধী অবস্থান, মূলত এর কারণ কি? একে তো কোন অল্প বুদ্ধির মানুষও চিরস্থায়ী আখিরাতের বিনিময় ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে আসতে চাইবে না। উপরন্তু সবচেয়ে ছোট জান্নাত যাকে দেওয়া হবে, তার জান্নাতের আয়তন হবে দশ দুনিয়ার সমান। এতো গেল স্থায়ীত্ব ও আয়তনের কথা। আল্লাহ তা’য়ালা জান্নাতীদের যে সকল নেয়ামত প্রদান করবেন তার কিয়াদংশের মূল্যও কি সমগ্র দুনিয়ার আছে? সমগ্র দুনিয়া খুঁজেও কি জান্নাতীতের দেওয়া হুর সমতুল্য একজন হৃদয়স্পর্শী, মনোহারী নারী খুঁজে পাওয়া যাবে? পৃথিবীর নারীরা তাদের নখের সৌন্দর্য্যরে সমতুল্যও নয়।
এ ছাড়া দুনিয়া মাদ্দাগতভাবে সুখ-দুঃখের সংমিশ্রণে তৈরি। যেখানে চিরন্তন সুখ অবান্তর। আর জান্নাত চীর সুখের স্থান। সময়ের আবর্তন দুনিয়ার মানুষের জীবনকে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ তিন ভাগে ভাগ করে, যার দুটি ভাগ সম্পদ ভোগের অনুপযোগী। আর জান্নাতে বান্দা চীর যৌবনা, স্বভাবতই জান্নাত মুমিনের চীর আরাধ্য এর বিপরীতে মুমিনের নিকট দুনিয়ার মূল্য সীকি পরিমাণ ও নয়। তাই একজন মুমিন সমগ্র দুনিয়ার বিনিময়ে ও জান্নাত ছাড়তে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু একজন শহীদের আরাধনা কেন এ রকম? তাও একবার-দুইবার নয় হাদিসে দশ বার শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। এ দশ বার অর্থ শাব্দিক অর্থে নয়; বরং বার বার অসংখ্য বার হওয়াই বাঞ্চনীয়। অপরদিকে একজন শহীদের জান্নাত একজন সাধারণ মুমিনের জান্নাত থেকে অনেকগুণ শ্রেষ্ঠ, তা বলায় বাহুল্য। মর্যাদার দিক থেকেও একজন শহীদ প্রথম স্তরের জান্নাতি। তবুও আল্লাহর দরবারে তার এরূপ চাওয়া। এতেই বুঝা যায় শহীদী মৃত্যু কতটা সম্মানের, কতটা ঈর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক।
লেখক : এইচ. এম. রফিকুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন