হাদিসের অনুবাদ :
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। যে কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে। (সহিহ বুখারী ৩৩ নং হাদিস)
রাবী পরিচিতি :
নাম আবু হুরায়রা রা.। তাঁর প্রকৃত নাম নিয়ে উলামায়ে কেরামগণ মতবিরোধ করেছেন।নির্ভরযোগ্য মতামত হলো, ইসলাম গ্রহনের পূর্বে তাঁর নাম ছিলো আবদে শামস অথবা আবদে আমর আর ইসলাম গ্রহণের পর তার নাম রাখা হয় আব্দুল্লাহ বা আব্দুর রহমান।
উপনাম আবু হুরায়রা, পিতা সাখর, মাতা উম্মিয়া বিনতে সাফিহ অথবা মাইমুনা। (www.iscabd.org)
আবু হুরায়রা নামে প্রসিদ্ধিলাভের কারণ :
আরবী শব্দে ‘আবুন’ অর্থ পিতা।আর হুরায়রা অর্থ বিড়ালছানা।সুতরাং আবু হুরায়রা অর্থ বিড়ালছানার পিতা।আরবদের ব্যবহার মতে অর্থ হয় বিড়ালছানার মালিক।উল্লেখ্য, তিনি বিড়ালের ছানা খুবই ভালোবাসতেন এবং পুষতেন।একদিন তিনি রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত ছিলেন।এ সময় হঠাৎ তাঁর জামার আস্তিন থেকে বিড়াল ছানা বের হয়ে পড়লো।রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে রসিকতা করে “আবু হুরায়রা” বললেন।তখন থেকে নিজের নাম হিসেবে তিনি এটি গ্রহণ করলেন।এবং এ নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. সপ্তম হিজরি সনে ইসলাম গ্রহণ করেন। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৫৩৭৪ টি। কেউ কেউ বলেন ৫৫৭৫ টি
হযরত আবু হুরায়রা রা. ৫৯ হিজরিতে ৭৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। (www.facebook.com/iscabd91)
ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি; শাব্দিক বিশ্লেষণ :
সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পরস্পরের সাথে যে মৌখিক বা লিখিত চুক্তি বা অঙ্গীকার করা। ওয়াদা একটি আরবী শব্দ, “আ’হদ” শব্দ হতে নির্গত। আভিধানিক অর্থ হচ্ছে: অঙ্গীকার, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি।
ইসলামী পরিভাষায় :
কোনো লোকের সঙ্গে অপর কোনো ব্যক্তি অঙ্গীকার করলে বা কাউকে কোনো কথা দিলে তা পালন করার নাম ওয়াদা। জীবনে প্রতিনিয়ত চলার পথে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকি পেয়েও থাকি। ইসলাম এসব প্রতিশ্রুতি পালন করার জোরালো তাকিদ করেছে। আল্লাহ ওয়াদা পালনকারীকে ভালোবাসেন। প্রতিশ্রুতি পালন করা আল্লাহর একটা অন্যতম গুন। আল্লাহ নিজে প্রতিশ্রুতি পালন সম্পর্কে আল-কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, স্মরণ রাখিও যে, আল্লাহরই সত্বাধীন রহিয়াছে যা কিছু আসমানসমূহে এবং যমীনে আছে। স্মরণ রাখিও যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু অধিকাংশ লোক বিশ্বাস করে না। (সূরা ইউনুস-৫৫) (www.icabdlibrary.com)
আল কোরআনের অন্য এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা কেন তা বল যা তোমরা করনা? আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃনিত সে ব্যাক্তি, যে নিজে যা বলে কিন্তু সে তা করেনা। (সুরা সফ-২/৩)
হাদিসের ব্যাখ্যা :
আলোচ্য হাদিসে প্রিয়নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করার নিমিত্তে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং মুনাফেকের আলামত সমর্পকে স্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, তিনটি বিষয় হলো মুনাফেকের আলামত, কথা বললে মিথ্যা কথা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা, আমানতের খেয়ানত করা। অর্থাৎ এ তিনটি বদ আমল হলো নেফাকির আলামত। করো মধ্যে নেফাকি আছে কি না তা বুঝার উপায়। (www.twitter.com/iscabd)
প্রতিশ্রুতি পূরণ করার ক্ষমতা থাকা অবস্থায় এবং প্রতিশ্রুতি পালন করতে ধর্মীয় কোনো বাধা না থাকলে যেকোনো মূল্যে তা পূরণ করা ওয়াজিব। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা জঘন্য অপরাধ। এ কথা জেনেশুনেও আমরা সজ্ঞানে অহরহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে চলেছি। প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা যেন আজকাল আমাদের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের হেফাজত করুন।