হযরত আবু দারদা রা. হতে বর্নিত, নবী করীম সা. বলেছেন, কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দার দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্র অপেক্ষা অধিক ভারী জিনিস আর কিছুই হবে না। আর যে ব্যক্তি বেহুদা, অশ্লীল ও নিকৃষ্ট ধরনের কথাবার্তা বলে, আল্লাহ তাআলা তাকে মোটেই পছন্দ করেন না। (তিরমিজি)
বর্ণনাকারীর (রাবি) পরিচয় :
রাসূল সা. এর বিশিষ্ট সাহাবী আবু দারদা রা.। তার প্রকৃত নাম আমির বা উয়াইমির। তিনি মদিনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের, বানু হারিস, শাখার সন্তান। তার পিতার নাম হলো যায়েদ। তিনি ছিলেনরাসূল সা: এর সমবয়সী। তিনি ছিলেন আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, বিচারক ও অশ্বারোহী। তিনি ৩২হিজরিতে দামেস্কে ইন্তেকাল করেন। তিনি ১১৯টি হাদিস বর্ননা করেছেন।
হাদিসের ব্যাখ্যা :
প্রিয়নবী সা. ঈমানের পর নৈতিক চরিত্রের ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। নৈতিক চরিত্র ছাড়া ঈমান মূল্যহীন। ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোপরি ঐ ব্যক্তি উত্তম যার চরিত্র সর্বোত্তম।
রাসূল করিম সা. এর আগমনের উদ্দেশ্যের অন্যতম একটিহলো ‘তাজকিয়াতুন নাস’।
রাসূল সা. তার আগমের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, “উত্তম নৈতিক চরিত্রের পরিপূর্ণতার জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি” (বায়হাকি, মুসনাদে বাযযার)
আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন, “হে নবী নিশ্চয় আপনি মহান ও উন্নত চরিত্রের ওপরে অধিষ্ঠিত।” (সূরা আল ক্বালাম, আয়াত-৪)
“অবশ্যই রাসূল সা. এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল আহজাব, আয়াত২১)
অতএব যার ঈমান যত বেশি, তার চরিত্রও তত উন্নত হবে এবং যার চরিত্র উন্নত, মনে করতে হবে যে, সে একজন ‘মুমিনে কামেল’ তথা পূর্নাঙ্গ ঈমানদার ব্যক্তি। ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রই দুনিয়ায় অতি উত্তম চরিত্রবান হবে। কেননা ঈমান ও উত্তম নৈতিক চরিত্রের মধ্যে গভীর সম্পর্ক নিহিত। (www.icabdlibrary.com)
উক্ত হাদিসে মন্দ ও খারাপ চরিত্রের একটি বিশেষ গুরুতর দিক দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, অশ্লীল কথা বলা এবং বেহুদা, বাজে ও নীচ-হীন কথাবার্তা বলা। কথা মানুষের মনোভাব ও চিন্তাধারার বাহন। মানুষের অন্তরের ভাবধারাও অভ্যন্তরীণ প্রকৃতরুপের প্রকাশ ঘটে মুখের ভাষায়। এ জন্য রাসূল সা. মানবিক চরিত্র উন্নয়নের জন্য সবরকমের অশ্লীল কথাবার্তা পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাসূল সা. ঘোষনা করেছেন যে, যারা এ জাতীয় চরিত্রের অধিকারী আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে একবিন্দু ভালোবাসেন না। সাথে সাথে তাদের প্রতি মহান রবের অপরিসীম ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি পতিত হয়। যাদের প্রতি মহান আল্লাহর ক্রোধ থাকে তাদের ভবিষ্যৎ কখনো কল্যানণময় হতে পারে না। এ ছাড়াও তাদের অসৎ চরিত্র বিচারের পাল্লাকে হালকা করে দেবে যা তাদের জন্য অত্যন্ত আফসোসের কারন হবে।
ইসলাম প্রচারকাজে নিয়োজিত দায়ীদের অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।চরিত্রবান দায়ীর মাধ্যমে সাধারন মানুষ প্রভাবিত হয় এবং তাদের কথার মাধ্যমে দাওয়াতের সম্প্রসারণ হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “হে নবী! হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে ডাকুন। আর তাদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করতে হলে সুন্দরভাবে করুন।”(সুরা আন নাহল আয়াত-১২৫)
একজন দায়ীকে কতিপয় মৌলিক চরিত্র বা গুনাবলি অর্জন করতে হবে। যেমন -ইখলাস ও নিষ্ঠা, উন্নত আমল ও নৈতিকতা এবং সত্য প্রকাশে অকুতোভয়। এভাবে আমল ও চরিত্রের মশাল দিয়ে বাতিল শক্তিকে বিকল করে দিতে হবে। অনুরুপভাবে ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনের কর্মীদের চরিত্র হবে সাহসী চরিত্র ও যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে ধৈর্যধারনের হিম্মত রাখবে। (www.iscabd.org)
উপসংহার :
জীবনের সকল ক্ষেত্রে কামিয়াব হতে গেলে উত্তম চরিত্র ও আদর্শের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে একজন দায়ী ও সংগঠকের দ্বীন প্রচার ও প্রসারের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো উত্তম-উন্নত চরিত্র ও আদর্শ।
লেখক : মুহাম্মাদ জিল্লুর রহমান, মুবাল্লিগপ্রত্যাশী, ইশা ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম মহানগর