সরল অনুবাদ
(১) যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে।
(২) এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।
(৩) তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী। (সূরা নাসর) (www.iscabd.org)
সূরার নাম করন :
সুরা নাসর পবিত্র কুরআনের ১১০ তম সুরা। তাফসীর কারীদের সর্বসম্মত অভিমত এই যে, সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩ টি। সুরা নাসর এর অপর নাম সুরা “তাওদী”। তাওদী শব্দের অর্থ বিদায় করা। এ সুরায় রাসূলে করীম সা. এর ওফাত নিকটবর্তী হওয়ার ইঙ্গিত আছে বিধায় এর নাম “তাওদী” হয়েছে।
নাজিল হওয়ার সময় ও স্থান :
ঠিক কখন এ সুরাটি নাযিল হয়েছিল সে সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত ইবনে ওমর রা. বলেন, সূরা নাসর বিদায় হজে অবতীর্ণ হয়েছে। এরপর “আলইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম” আয়াত অবতীর্ণ হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা. মাত্র আশি দিন জীবিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সা. এর জীবনের যখন মাত্র পঞ্চাশ দিন বাকী ছিল, তখন কালালার আয়াত নাজিল হয়। অতঃপর পয়ত্রিশ দিন বাকী থাকার সময় “লাক্বাদ জা আকুম রাসূলুম মিন আনফুসিকুম আযিযুন আলাইহি” আয়াত অবতীর্ণ হয়। এবং একুশ দিন বাকী থাকার সময় “ওয়াত্তাকু ইয়াউমান তুরজাউনা ফীহ” আয়াত অবতীর্ণ হয়। (www.icabdlibrary.com)
শানে নুযূল :
এই সূরার আয়াতসমূহ নবী মুহাম্মাদ সা. কে উদ্দেশ্য করে বর্ণিত। মক্কা বিজয়ের লক্ষণসমুহ পরিস্ফুটিত হয়ে উঠা এবং এ বিজয়ের মাধ্যমে দুনিয়াতে রাসূল সা. এর আগমন ও অবস্থার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সমাসন্নতার পরিপেক্ষিতে এই সুরাটি নাযিল হয়।
এ সুরার অন্যতম তাৎপর্য এই যে, মৃত্যু নিকটবর্তী প্রতিয়মান হলে মুসলমান ব্যাক্তিকে তাসবীহ ও ইস্তিগফার করতে হবে।
হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্নিত যে, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর রাসূল সা. প্রত্যেক নামাজের পর “সুবহানা রাব্বিনা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী” পাঠ করতেন।
হযরত উম্মে সালমা রা. বলেন, এই সূরা নাযিল হওয়ার পর তিনি উঠা-বসা, চলা-ফেরা তথা সর্বাবস্থায় এই দোয়া পাঠ করতেন “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী আসতাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু ইলাইহি” তিনি বলতেন আমাকে এ আদেশ করা হয়েছে। অতঃপর এ সুরা তেলাওয়াত করতেন। (www.facebook.com/iscabd91)
মূল বক্তব্য :
৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পরের বছর অর্থাৎ ৯ম ও ১০ম হিজরীকে ইতিহাসে প্রতিনিধি দল সমূহের আগমনের বছর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিনিধি দল সমূহের সংখ্যা ৭০ এর চেয়ে বেশি। ওই সময়ে মক্কার কাফিররা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। সূরা নাসরে মানুষের বিজয়ের বা সাফল্যের জন্য সৃষ্টিকর্তার সাহায্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিজয় মানুষের শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করে না। বিপুল শক্তিশালী দল ও যুদ্ধে পরাজিত হয়। অন্যদিকে দুর্বল দলও আল্লাহর সাহায্যক্রমে জয়ী হতে পারে। বদরের যুদ্ধ যার প্রমান। শক্তিমত্তা নয়; আল্লাহর সাহায্যই বিজয়ের একমাত্র নিয়ামক। এ কথাই সূরা নাসরের প্রাথমিক তাৎপর্য। বিজয়ের মুহুর্তে আল্লাহ তার রাসূল সা. কে দুটি নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজের একটি গুনের কথা পুনরুক্ত করেছেন। প্রথমটি হলো, আল্লাহর গুনকীর্তন করা যে তিনি সবরকম দুর্বলতা বা দোষ থেকে মুক্ত। (অর্থাৎ তিনি কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী নন) দ্বিতীয়টি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। তথা তাওবা করতে বলা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী। (www.twitter.com/iscabd1)
সংক্ষিপ্ত বাখ্যা :
সুরা কাউসারের অনুরূপ এটিও কুরআনুল কারীমের একটি ছোট সূরা। মাত্র ৩টি আয়াত সম্পন্ন এ সূরায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তাঁর প্রিয় হাবীব রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে আল্লাহর সাহায্য বিজয় ও দলে দলে লোকদের ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আগাম সুসংবাদ নাযিল করেছেন। মূলত এটি আল্লাহর মদদ, বিজয়, ও ইসলামের প্রধান্য প্রতিষ্ঠার সুসংবাদবাহী সূরা। এ সূরায় সাহায্য ও বিজয় প্রাপ্তিলগ্নে রাসুলুল্লাহ সা. কে আল্লাহর শুকরিয়া প্রকাশ, আল্লাহর প্রশংসা, তার পবিত্রতা বর্ণনা ও মাগফিরাত কামনায় মনোনিবেশ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বিজয়োল্লাসে আনন্দে মাতোয়ারা না হয়ে মহান আল্লাহর শুকরিয়া, হামদ, তাসবীহ ও মাগফিরাত কামনার মাধ্যমে বিনয়, নম্রতা প্রকাশের মহান মানবীয় গুনাবলীর প্রতি হুযুরে পাক সা. এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
বলে রাখা ভালো, কোন কোন ব্যাখ্যাকার পবিত্র কুরআনের নিগুঢ় তত্ত্ব ও রাসূল সা. এর শান বিবেচনা না করেই এমন ব্যাখ্যাও করেছেন যে, নবুওতের দায়িত্ব পালনে কৃত ভুলত্রুটির জন্য রাসূল সা. কে ইস্তিগফার করতে বলা হয়েছে। নাউজুবিল্লাহ। যা সম্পূর্ণ মনগড়া। মূলত উম্মাহ কে শিক্ষা দিতেই রাসূল সা. কে ইস্তিগফার করতে বলা হয়েছে। নতুবা রাসূল সা. সহ নবীগণের নিষ্পাপত্বের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত একমত। (www.iscabd.org)
আলোচ্য সুরার শিক্ষা :
এখানে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষনা করা হয়েছে যে, মুসলমানের বিজয় কখনো জনশক্তি বা অস্ত্রবলে হয়না; বরং বিজয়ের উৎস ঈমান বিল্লাহ। কাঙ্খিত বিজয় ইসলামী কাফেলার প্রত্যাশা দিয়ে আসে না। এ জন্য দায়ী ইলাল্লাহদের কে শ্রম, প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়।
কিন্তু বিজয় আসে একমাত্র আল্লাহর মর্জি ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। আল্লাহর নুসরত ও মদদই হচ্ছে বিজয়ের একমাত্র মাধ্যম। আল্লাহ তায়া’লা যখন ইচ্ছা করেন সিদ্ধান্ত নেন। তখন অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর ভাবেই ঘুম থেকে জেগে বিজয়ের উদিত সুর্য কে দেখতে পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়া’লা যে সময় যে পন্থায় যে প্রকৃতিতে বিজয় দিতে চান বিজয় সে পথেই সুচিত হয়। দ্বীন বিজয়ের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের শ্রম, সাধনা, জনশক্তি, সম্পদ ও অস্ত্রের ওপর ভর করে বিজয় আসে না।
সংগ্রামী কাফেলার এতে কোন অংশ নেই। তাদের নিজস্ব শক্তি ও সামর্থের এতে কোন হিস্যা নেই। আল কুরআনে বলা হয়েছে। তোমারা আল্লাহর অপার অনুগ্রহ কে গুণে শেষ করতে পারবেনা। তাই আল্লাহর এ অনন্ত দানের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তার সমীপে এস্তেগফার করা বান্দার দায়িত্ব।
তথ্য সুত্র :
* মাআরিফুল কুরআন
* তাফসীর ফি যিলালিল কোরআন
লেখক : মুহাম্মাদ তানভীর হোসাইন, মুবাল্লিগপ্রত্যাশী, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা