আজ ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- ভোর ৫:০২

আজ ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলামী খিলাফাহ

ইসলাম আল্লাহপ্রদত্ত একমাত্র জীবনব্যবস্থা। জীবন, জগৎ ও মানুষ সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য সুনির্দিষ্ট। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ¶েত্রেও এ ¯^াতন্ত্র পরিব্যাপ্ত। একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা বিধায় রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা ইসলামের একটি অপরিহার্য অংশ।
ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র এমন একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা যা মানবজীবনের বিভিন্ন দিককে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। তাই পরিপূর্ণভাবে দীনের পথে চলতে হলে ইসলামী রাষ্ট্রের কোন বিকল্প নেই। ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পরিভাষায় খিলাফত বলা হয়।
ইসলামী খিলাফতের সূচনা হয় ৬২২ খ্রিস্টাব্দে। হজরত মুহাম্মাদ সা. মদিনায় প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে খিলাফতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর রা. পরবর্তী খলিফা নির্বাচিত হন। আবু বকর রা.-এর খিলাফতের মাধ্যমে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে খিলাফতে রাশিদার প্রতিষ্ঠা হয়। খিলাফতে রাশিদা ৩০ বছর ছিল।
এরপর ৬৬১ সালে সাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রা. কর্তৃক উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়। যা ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের এই ৯০ বছরে খলিফা ছিলেন ১৪ জন।
উমাইয়া খিলাফতের পর ইসলামী খিলাফতগুলোর মধ্যে তৃতীয় আব্বাসীয় খিলাফত ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা হয়। ৫০০ বছরের অধিক এই খিলাফতামলে ৩৭ জন খলিফা অতিবাহিত হয়েছে। ১২৫৮ সালে মঙ্গলদের আক্রমণে আব্বাসীয় খিলাফতের রাজধানী বাগদাদ ধ্বংস হয় ও খিলাফত বিলুপ্ত হয়। মিশরের মামলুক শাসকদের দ্বারা পুনরায় আব্বাসীয় খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
এরপর ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান প্রথম সেলিমের কাছে মিশরের আব্বাসী খলিফা কর্তৃক খিলাফত হস্তান্তরিত হলে উসমানীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। এই খিলাফত ৪০০ বছরের অধিক সময় স্থায়ী ছিল এবং তাদের খলিফা সংখ্যা ছিল ২৬ জন।
১৯০৯ সালে তুর্কি বিপ্লব এর মাধ্যমে খলিফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদ অপসারণ এবং ১৯১৮ সালে উসমানী খিলাফত বিলুপ্তির মুখে পড়ে।
১৯২৪ সালে সর্বশেষ খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মজিদকে নির্বাসিত করে কামাল আতাতুর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফত বিলুপ্ত করে।
খিলাফতের এই ধারাবাহিকতা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। যেমন, সেলজুক খিলাফত, ফাতেমী খিলাফত, কায়রোর খিলাফত, আলমোহাদ খিলাফত ইত্যাদি।

খিলাফত কী?
খিলাফত শব্দটি আরবী খুলুফুন শব্দ হতে নির্গত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, প্রতিনিধিত্ব করা, স্থলাভিষিক্ত হওয়া, অনুসরণকারী, কারও মৃত্যুর পর তার স্থানে উপবেশন ইত্যাদি।
অ গড়ফবৎহ অৎধনরপ উরপঃরড়হধৎু তে খিলাফতের অর্থ বলা হয়েছে- ঠরপধৎংযরঢ়, ঝঁপপবংংরড়হংযরঢ়.
ইমাম রাগিব ইস্পাহানী রহ. বলেন, খিলাফত হল কারও অনুপস্থিতিতে অন্য কোন ব্যক্তি তার প্রতিনিধিত্ব করা। চাই তার অনুপস্থিতি মৃত্যু, অপসারণ বা অন্য কোন কারণে হোক। যাকে প্রতিনিধি করা হয়েছে তাকে সম্মানিত করা উদ্দেশ্য।
পারিভাষিকভাবে খিলাফত বলা হয়, ইসলামী সরকার পদ্ধতিকে, অর্থাৎ যে রাষ্ট্রের সকল নিয়ম-কানুন ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী হয় তাকে খিলাফত বলে।
আল্লামা ইবনে খালদুন রহ. খিলাফতের সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছেন, আল্লাহর মনোনীত দীন ইসলাম সংরক্ষণ ; তা অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযালী রহ. বলেন, খিলাফত এমন একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যা যুক্তি তর্কের মাধ্যমে নয় ; বরং আল্লাহপ্রদত্ত বিধান ও রাসূল সা. প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হয়। সার্বিকভাবে বলতে গেলে, কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাকেই ইসলামী রাষ্ট্র বলে।

খিলাফতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
মহান রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের প্রেরণের উদ্দেশ্য হল আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দীন তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। আর এ কারণেইতো আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমে মানবজাতীকে খলিফা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأَرْضِ خَلِيفَةً
‘যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাদিগকে বলল, আমি দুনিয়াতে খলিফা (প্রতিনিধি) বানাতে যাচ্ছি।’ -সুরা বাকারা : ৩০
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেহেতু সমস্ত নবী-রাসূলকে খিলাফতের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তাই এর দ্বারা বুঝা যায় খিলাফতের গুরুত্ব কত অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনুল কারীমে উল্লেখ রয়েছে-
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
‘তিনি সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়েত ও সত্যধর্ম সহকারে যাতে (রাসূলের সাথে প্রেরিত ধর্ম) সকল ধর্মের ওপর বিজয়ী হয়। -সুরা সফ : ১০
আর রাসূলের আনিত দীন (মতবাদ) সকল মতবাদের ওপর বিজয়ী থাকার অর্থ হল খিলাফত প্রতিষ্ঠা। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الأَرْضِ
‘হে দাউদ! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দুনিয়াতে খলিফা (প্রতিনিধি) হিসেবে পাঠিয়েছি।’ সূরা সোয়াদ : ২৬
খিলাফতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا
‘তোদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সূদৃঢ় করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদেরকে ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। -সূরা নূও : ৫৫
উপর্যুক্ত আয়াতে খিলাফতের গুরুত্বের কয়েকটি দিক ফুটে উঠেছে।
(ক) আল্লাহ তা‘আলা খিলাফত প্রদানের ওয়াদা করেছেন।
(খ) খিলাফতের মাধ্যমে দীনকে সূদৃঢ় করবেন।
(গ) খিলাফতের মাধ্যমে শান্তি দান করবেন।
এছাড়াও খিলাফতের প্রয়োজনীয়তার আরও কয়েকটি দিক হল-
(১) আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি হিসেবে মানুষের দায়িত্ব পালনের জন্য খিলাফত প্রয়োজন। যেমন, কুরআনে ইরশাদ আছে, وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلائِفَ الأَرْضِ তিনিই তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছে। -সূরা আনআম : ১৬৫
(২) উম্মতের নেতৃত্বের জন্য খিলাফত প্রয়োজন। রাসূলে কারীম সা. ইরশাদ করেন,
أبي هريرة قال: قال رسول الله ﷺ: كانت بنو إسرائيل تسوسهم الأنبياء، كلما هلك نبي خلفه نبي، وإنه لا نبي بعدي، وسيكون خلفاء فيكثرون
‘বনী ইসরাঈলে আ¤ি^য়ায়ে কেরাম নেতৃত্ব দিতেন। যখনই কোন নবী ইন্তেকাল করতেন তখনই পরবর্তী নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পরে আর কোন নবী আসবে না। তবে আমার পরে খলিফা হবে। (বুখারী)
(৩) ইসলামী আইন বাস্তবায়ন; ইমাম গাযালী রহ. বলেন, ইসলামী আইন বাস্তবায়নে খিলাফতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সর্বোপরি কথা হল, ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে, সকলেই শান্তিতে বসবাস করবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা থাকবে, যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ ক্রমাš^য়ে বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু মানুষ নয়, ইসলামী খিলাফতের প্রভাব পড়বে হিং¯্র প্রাণীর ওপরও। তারাও উপকৃত হবে এর দ্বারা। তাইতো হযরত ওমর ফারুক রা. বলেছিলেন,
لو مات جمل ضياعاً على شط الفرات لخشيت أن يسألني الله عنه
‘যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি উটও অনাহারে মারা যায়, তাহলে আমি ওমর ভয় করি, তার জন্য আমাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কি না?’

খিলাফতের লক্ষ্য -উদ্দেশ্য
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানবজাতীর হেদায়াতের জন্য প্রত্যেক নবীর সাথে আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। সে হিসেবে আখেরী নবীর ওপর নাযিল করেছেন সর্বশেষ গ্রন্থ কুরআনুল কারীম। রাসূলে আরাবী সা. তাঁর জীবদ্দশায় এই কুরআনুল কারীমের বিধান পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। পরবর্তীতে যারা তাঁর খলিফা হয়েছেন তারাও সেই কুরআনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, ফলে বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। উপর্যুক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, রাসূলে করীম সা. ও তাঁর পরবর্তী খলিফাগণ যে খিলাফত তথা ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে তার লক্ষ্য ছিল কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠা। তাই সংক্ষেপে খিলাফতের লক্ষ্য আমরা এভাবে বলতে পারি- ‘আল্লাহর যমীনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সৃষ্টিজীবের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।’ যেহেতু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে খিলাফতের দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছের, তাই আল্লাহর দেওয়া সেই দায়িত্ব পালন করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করাই হলো খিলাফতের উদ্দেশ্য।

খিলাফতের প্রকারভেদ
দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন মুহতামিম মাওলানা কারী তাইয়েব সাহেব রহ. খিলাফতকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছেন।
এক. আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে খিলাফত, অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আ¤ি^য়া আ. এবং মানব জাতির ওপর যে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তাই এর দ্বারা উদ্দেশ্য। যেমন, সূরা বাকারা : ৩০ ও সূরা সোয়াদ : ২৬ দ্রষ্টব্য
দুই. আ¤ি^য়া আ. এর পক্ষ হতে খিলাফত, অর্থাৎ আ¤ি^য়া আলাইহিমুস সালামগণের ইন্তেকালের পর যারা তাঁর স্থলাভিসিক্ত হয়েছেন তারা। এ সম্পর্কেও বুখারী শরীফের একটি হাদিস আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, বনী ইসরাঈলে আ¤ি^য়ায়ে কেরাম আ. নেতৃত্ব দিতেন। যখনই কোন নবী ইন্তেকাল করতেন তাঁর পরিবর্তে নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পরে আর কোন নবী আসবে না; বরং আমার পরে খলিফা হবে।
এছাড়াও শাহ ওয়ালী উল্লাহ রহ. খিলাফতের প্রকার আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, খিলাফত দ্ইু প্রকার,
এক. আধ্যাত্মিক খিলাফত,
দুই. জাগতিক খিলাফত।
আধ্যাত্মিক খিলাফত হচ্ছে, তাসাউফের জগতে কোন হক্কানী পীর কর্তৃক তার মুরীদ বা অন্য কাউকে বাইআতের ইজাযত প্রধান। আর জাগতিক খিলাফত হল, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপ্রধানের স্থলাভিষিক্ত হওয়া।

খিলাফতের মূলনীতি
যে কয়টি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা হবে তা হল
১। সার্বভৌমত্ব : অর্থাৎ- সুপ্রিম পাওয়ার বা সর্বোচ্চ ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার। কিয়ামতের দিবসে যেভাবে সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য থাকবে, ঠিক একইভাবে দুনিয়াতেও সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সার্বভৌমত্ব বা সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা হবে। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার ইরশাদ করেন, إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلَّه আল্লাহ ছাড়া কারও নির্দেশ চলে না। (আন‘আম : ৫৭)
لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ নভোমণ্ডল ও ভূূমণ্ডলের রাজত্ব তাঁরই। (সূরা হাদীদ : ২)
২। মজলিসে শুরা কেন্দ্রীক শাসনব্যবস্থা : মজলিসে শুরা বা পরামর্শ পরিষদই হল ইসলামী খিলাফতের মূল কেন্দ্রবিন্দু এবং এই থেকেই সমস্ত খিলাফত ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। পরামর্শের মাধ্যমে ইসলামী খিলাফত পরিচালনা করার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে কুরআনুল কারীম। রাসূলে কারীম সা. কে স¤ে^াধন করে বলা হয়েছে- وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ আপনি কাজে কর্মে তাদের সাথে (সাহাবায়ে কিরাম) পরামর্শ করুন। (আল-ইমরান : ১৫৯)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ (ঈমানদার বান্দাগণ) পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে। (সূরা সূরা : ৩৮)
৩। সুবিচার নিশ্চিত করা : এটি ইসলামী খিলাফতের অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاء لِلَّهِ وَلَوْ عَلَى أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالأَقْرَبِينَ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠা থাক, আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-¯^জনের যদি ক্ষতি হয় তবুও।’ (সূরা নিসা : ১৩৫)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। (সূরা মায়িদা : ০৮)
রাসূলে কারীম সা. ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ ، أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الحَدَّ ، وَايْمُ اللَّهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا
তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এজন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন উচ্চবংশীয় লোক চুরি করত, তারা তাকে ছেড়ে দিত, যদি কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত তাহলে তার ওপর বিচার কার্যকর করত। আল্লাহর শপথ, যদি মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও চুরি করত তাহলে তার হাতও কতর্ন করা হত। (সহিহ বুখারী-হাদিস নং ৩৭৩২, ৩৭৩৩)
৪। মুসলমানদের মাঝে ভাতৃত্ব তৈরি ও সমগ্র মানবজাতির কল্যাণসাধন : ইসলামী খিলাফতের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে, মুসলমানদের মাঝে ভাতৃত্ব সৃষ্টি করা। সমগ্র মুসলিম জাতিকে এক দেহের ন্যায় তৈরি করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ ‘মুমিনরাতো পরস্পর ভাই ভাই। (সূরা হুজরাত : ১০)
রাসূলে আরাবী সা. ইরশাদ করেন,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المسلمون كرجل واحد إن اشتكى عينه اشتكى كله وإن اشتكى رأسه اشتكى كله
সমগ্র মুসলিম জাতি এক দেহের ন্যায়। যদি কোন একটি অঙ্গে আঘাত আসে, তখন গোটা শরীর তার ব্যাথা অনুভব করে।
৫। কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক শাসনব্যবস্থা : ইসলামী খিলাফতের শাসনব্যবস্থা হবে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক। সংবিধানসহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল নিয়ম-নীতি এক আলোকেই প্রণিত হবে।
তাইতো রাসূলে কারীম সা. বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন,
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال تركت فيكم أمرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله ، وسنة نبيه صلى الله عليه وسلم
তোমাদের মাঝে দু’টি বস্তু রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি বস্তুকে আঁকড়ে ধরবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সেই দু’টি বস্তু হল – আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত।
৬। নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করন : ইসলামী খিলাফতের অধীনে বসবাসরত সকল নাগরিকের সকল অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রপ্রধান তথা খলিফার অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। সকল নাগরিকের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রæর নিরাপত্তা, তাদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যেমন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّواْ الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُواْ بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌঁছে দাও, আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার – মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায়ভিত্তিক।’ (সূরা নিসা : ৫৮)
উপর্যুক্ত আয়াতে আমানতের হুকুমটি যদিও ব্যাপক, কিন্তু অনেক মুফাসসিরীনে কিরাম এর দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক তার প্রজাদের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।
৭। যিম্মীদের অধিকার নিশ্চিত করা : যিম্মী বলা হয়- মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিম নাগরিককে। যেহেতু তারা জিযিয়া বা ট্যা· প্রদানের মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্রের বৈধ নাগরিক, তাই তাদের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রæর হেফাজত করা মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব। আইনের দৃষ্টিতে তাদেরকে সমান চোখে দেখতে হবে। অন্যায়ভাবে তাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন বা তাদেরকে হত্যা করা যাবে না। রাসূলে কারীম সা. ইরশাদ করেন,
عن النبي صلى الله عليه وسلم قال من قتل نفسا معاهدا لم يرح رائحة الجنة وإن ريحها ليوجد من مسيرة أربعين عاما
যে ব্যক্তি কোন যিম্মীকে হত্যা করে সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (মিশকাত, পৃ: ২৯৯) অন্য এক হাদিসে ইরশাদ করেন, সাবধান! কেউ যদি কোন যিম্মীর প্রতি জুলুম করে অথবা তাকে তার অধিকার থেকে কম দেয় কিংবা সাধ্যের বহির্ভূত কোন কাজ তার ওপর চাপিয়ে দেয়, কেয়ামতের দিন আমি ঐ যিম্মীর পক্ষ নেব। (মিশকাত , পৃ: ৩৫৪)
৮। ঐক্যবদ্ধ জাতি ও বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা : ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা হলে সমগ্র বিশ্ব ক্রমাš^য়ে ইসলামী খিলাফতের অন্তর্গত হবে এবং এক খলিফার অধীনে একই নীতিতে পরিচালিত হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ
তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রুজুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)
উপর্যুক্ত আলোচনা দ্বারা আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়- তা হল গোটা বিশ্বে একই সময়ে একাধিক খলিফা থাকা যাবে না। একজন খলিফার অধীনেই সমগ্র ইসলামী খিলাফত পরিচালিত হবে। এই বিষয়ে অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে হুজুরে পাক সা. ইরশাদ করেন,

‘যদি শরীয়তসম্মত কোন খলিফা থাকা অবস্থায় অন্য কেউ খিলাফতের দাবি করে, সেক্ষেত্রে তাকে তিন দিন সময় দেওয়া হবে। যদি এই সময়ে সে পরিবর্তন না হয়, তখন তাকে হত্যা করা হবে। কারণ, এর দ্বারা ফাসাদ সৃষ্টি হবে এবং এবং এতে প্রচুর লোক নিহত হবে।’
হযরত আরফাজা রা. থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে হুজুর সা. ইরশাদ করেন, ‘অচিরেই নানা প্রকার ফিৎনা ফাসাদের উদ্ভব হবে, যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধ উম্মতের মধ্যে বিশৃক্সখলা সৃষ্টির প্রয়াস চালাবে, তরবারি দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে, চাই সে যে কেউ হোক না কেন।’ সহীহ মুসলিম হাদিস নং : ৪৬৪২
তবে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. বলেছেন, যোগাযোগের দূরত্ব বা ভৌগলিক সমস্যার কারণে একাধিক খলিফা থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই দুই জায়গায় একই নিয়ম-কানুন থাকতে হবে এবং দুই খলিফার মাঝে সুসর্ম্পক থাকতে হবে। উদাহরণ ¯^রূপ বলা বলা যায়, এশিয়া মহাদেশের কিছু রাষ্ট্র নিয়ে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্টা হল। আবার ইউরোপ মহাদেশেও কিছু রাষ্ট্রে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা হল। আর এই দুই মহাদেশের মাঝে অনেক শত্রæ রাষ্ট্র রয়েছে। এমতাবস্থায় এই দুই মহাদেশে দুইজন খলিফা থাকতে পারে। এর মাধ্যমে ফিৎনা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৯। ¯^জনপ্রীতি ও দুর্নীতিমুক্ত শাসন প্রতিষ্ঠা : এ প্রসঙ্গে রাসূলে করীম সা. ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোন কর্তৃত্বভার লাভ করে কোন ব্যক্তিকে অনুরাগবশত বা আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে দায়িত্ব প্রদান করল, সে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুসলিম জাতির প্রতি খিয়ানত করল।’ আস সিয়াসাতুশ শারঈয়্যাহ: পৃ: ১৬
১০। দীন প্রতিষ্ঠা করা : রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে যেন পূর্ণাঙ্গ দীন প্রতিষ্ঠা হয় সে বিষয়ে ইসলামী খিলাফত সদা তৎপর থাকবে। পবিত্র কুরআনে কারীমে এ বিষয়ে ইরশাদ হচ্ছে-
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ
তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি সামর্থ দান করলে তারা নামাজ কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। (সূরা হজ্জ : ৪১)

ইসলামী খিলাফতের রাষ্ট্রপ্রধান
ইমাম, সুলতান, আমীর, খলিফা : ইসলামী খিলাফতের যিনি প্রধান থাকবেন তাকে বলা হয় খলিফা। খলিফার পাশাপাশি আরও কয়েকটি শব্দ এক্ষত্রে ব্যবহার হয়। যেমন, আমীর, সুলতান, ইমাম। যতদূর তাহকীক করা হয়েছে এর দ্বারা বুঝা যায়, এই শব্দগুলোর মাঝে যদিও অর্থগত পার্থক্য আছে, কিন্তু উদ্দেশ্য এক। কুরআন ও হাদিসের আলোকে এটাই প্রতিয়মান হয়।
ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানের জন্য এক এক জায়গায় এক এক শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যেমন, হযরত ওমর রা. নিঃসন্দেহে তিনি খলিফা ছিলেন। কিন্তু তাকে ‘আমিরুল মু’মিনীন’ বলা হত।
খিলাফতে বনু উমাইয়া, আব্বাসিয়া ও উসমানিয়ায় ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানদেরকে খলিফা বলা হয়, এর মাঝে আবার দেখা গেছে হযরত মুআবিয়া রা. আমীর হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সা. এর যুগেও আমীর শব্দ ব্যবহার হতো, তবে তা রাষ্ট্র প্রধানের জন্য নয় ; বরং যুদ্ধের সেনাপতির জন্য। যেমন হাদিসে বর্ণিত রয়েছে- যে আমীরের অনুসরণ করল সে যেন আমার অনুসরণ করল। এ হল খলিফা ও আমীরের সম্পর্ক।
সুলতান শব্দটিও খলিফার স্থলে ব্যবহার দেখা যায়। যেমন রাসূলে কারীম সা. বলেছেন, ‘আসসুলতানু জিল্লুল্লাহি ফিল আরজি’ অর্থাৎ শাসকগণ পৃথিবীতে আল্লাহর ছায়া ¯^রূপ।
অনুরূপভাবে সালাহউদ্দীন আইউবী রহ. ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা ছিলেন ; কিন্তু তিনি সুলতান হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
ইমাম শব্দটিও খলিফার অর্থে হাদিসে ব্যবহার হয়েছে। যেমন রাসূলে কারীম সা. ইরশাদ করেন, ‘ঐ ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) যে জনগণের ওপর দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’
কুরআনে কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত দাউদ আ. কে খলিফা বলেছেন, আবার হযরত ইবরাহীম আ. কে ইমাম বলেছেন। উপরের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল- খলিফা, ইমাম, আমীর, সুলতান শব্দগত দিক থেকে পার্থক্য থাকলেও উদ্দেশ্যগত দিক দিয়ে এক। যদিও কেউ কেউ এগুলোর মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করেছেন।

খলিফার যোগ্যতা ও গুণাবলী
ইসলামী খিলাফতের যিনি খলিফা হবেন তাঁর নি¤েœাক্ত যোগ্যতা ও গুণাবলী থাকা আবশ্যক।
মুসলিম হওয়া : পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
وَلَن يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلاً ‘আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের ওপর বিজয় দান করবেন না।’ (সূরা নিসা: ১৪১)
পুরুষ হওয়া : আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء ‘পুরুষেরা নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল।’ (সূরা নিসা: ৩৪)
রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ‘সে জাতি কখনও সফল হবে না, যারা কোন নারীকে তাদের শাসক বানিয়েছে।’ বুখারী
বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া : রাসূলে কারীম সা. বলেন, তিন ধরনের লোকের কাজ কখনও লিপিবদ্ধ করা হয় না, তারা হল
(ক) নাবালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত)।
(খ) ঘুমন্ত ব্যক্তি (জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত)।
(গ) পাগল ব্যক্তি (জ্ঞান আসা পর্যন্ত)।
বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া : আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, وَلاَ تُؤْتُواْ السُّفَهَاء أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا
‘আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন-যাত্রার অবল¤^ন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না।’ (সূরা নিসা : ০৫)
¯^াধীন হওয়া : গোলাম যেহেতু তার মুনীবের অধীনে থাকে, তাই তার দ্বারা খলিফা হওয়া সম্ভব নয়।
বিচক্ষণ হওয়া : আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ
‘(হে নবী) আপনি বলে দিন, এই আমার পথ, আমি আল্লাহর পথে আহŸান করি বিচক্ষণের সাথে।’ (সূরা ইউসুফ : ১০৮)
ইসলামী শরীয়তের জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া : ইমাম রাগীব ইস্পাহানী রহ. বলেন, ‘তোমরা ফিকাহ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানার্জন ও আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিফহাল না হয়ে নেতৃত্ব দিতে যেও না।’
নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়া : রাসূলে কারীম সা. ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম।’
পদলোভহীন : হুজুরে পাক সা. ইরশাদ করেন, আমরা আমাদের কোন কাজেই এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ করিনা, যে তার আকাক্সক্ষা করে। মুত্তাফাক আলাইহি, মিশকাত, ৩২৬পৃ.

খলিফার দায়িত্ব ও কর্তব্য
খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য মৌলিকভাবে দশটি। যথা-
১. শরী‘আতের প্রতিষ্ঠিত নীতি ও পূর্বসূরীদের ঐকমত্য অনুসারে দীনের হেফাজত করা, বিদআত প্রতিহত করা, ফরজ -ওয়াজিবের ওপর মানুষকে টিকিয়ে রাখা ও নিষিদ্ধ বিষয় থেকে সকলকে দূরে রাখা।
২. বিবদমান লোকদের মধ্যে ইনসাফের সাথে ফয়সালা করে দেয়া।
৩. রাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদ সংরক্ষণ করা এবং জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা।
৪. রাষ্ট্রের সীমানা সংরক্ষণ করা এবং সীমান্ত প্রহরার ব্যবস্থা করা, যাতে সীমান্তের বাহিরে থেকে কেউ অনুপ্রবেশ করে দেশের লোকদের জান-মালের ক্ষতিসাধন করতে না পারে।
৫. শরী‘আত নির্ধারিত হুদুদ বা শাস্তির বিধানাবলী যথাযথভাবে প্রয়োগ করা।
৬. ইসলামের দাওয়াত প্রদান করা। দাওয়াত গ্রহণ না করলে ইসলামের জিহাদের নীতি অনুসারে জেহাদ পরিচালনা করা।
৭. কোনরূপ জুলুম -অবিচার না করে শরী‘আতের বিধান ও ফিকাহর মাসায়েল অনুসারে খারাজ (রাজ¯^/খাজনা/ট্যা·) ও যাকাত উসূল করা।
৮. বায়তুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন ভাতা নির্ধারণ করা এবং যথাযথভাবে (প্রয়োজনের চেয়ে কমও নয় বেশিও নয়) নির্দিষ্ট সময়ে তা পরিশোধ করা।
৯. দীনদার, আমানতদার, যোগ্য ও নির্ভরযোগ্য লোকদেরকে মন্ত্রী, গভর্নর, প্রতিনিধি ইত্যাদি দায়িত্বশীল পদে নিযুক্ত করা।
১০. নিজে সমস্ত রাজ্যের সবকিছুর তত্ত¡াবধান করা এবং খোঁজ-খবর রাখা।

খিলাফত প্রতিষ্ঠার অন্তরায়
বর্তমান বিশ্বে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় অন্তরায় তার মৌলিক কয়েকটি হল এই-
ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের খিলাফত বিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত : এই চক্রান্ত তারা বিভিন্নভাবে করে যাচ্ছে। যেমন-
(ক) মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলোকে তাদের গোলামীতে আবদ্ধ করে সেখানে তাদের পা চাটা, আজ্ঞাবহ শাসক নিয়োগ করেছে। যার ফলে ঐ সকল রাষ্ট্রগুলো থেকে খিলাফত প্রতিষ্ঠার কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
(খ) বিশ্বব্যাপী খিলাফত বিরোধী অপপ্রচার ও খিলাফত ব্যবস্থাকে জঙ্গী, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা। আর একাজটি তারা সহজেই করতে পারছে। কারণ, বিশ্ব মিডিয়ার একক নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। তাদের, এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও খিলাফত সম্পর্কে বিরূপ ধারনা সৃষ্টি হচ্ছে।
(গ) বিশ্বে যে সকল ইসলামী সংস্থাগুলো রয়েছে, সেগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। যাতে তাদের মাঝ থেকে খিলাফতের কোন আলোচনা না আসে। যার কারণে বর্তমানে ওআইসি, আরবলীগসহ আরো কয়েকটি সংস্থা থাকা সত্তে¡ও খিলাফত দূরে থাক, মুসলমানদের পক্ষে কোন কথাই তাদের মাঝ থেকে শোনা যায় না।
মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনৈক্য : ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অন্তরায়। বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেত তাহলে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা সময়ের ব্যাপার ছিল।
ইসলামী বিশ্বে অনৈসলামিক চিন্তা-চেতনার উপস্থিতি : বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের মাঝে ইসলামী চিন্তা-চেতনার পরিবর্তে ইসলাম বিরোধী চিন্তা-চেতনার চর্চা বেশী হচ্ছে। ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন মতবাদ-মতাদর্শের ব্যাপক প্রচার-প্রসারের কারণে সেগুলোর কুপ্রভাব মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে। যার কারণে ইসলামের বিজয় তথা ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় অনেক ক্ষেত্রে খোদ মুসলমানরাও আগ্রহী নয়।
মুসলমানদের মাঝে খিলাফত প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে হতাশা : বর্তমান বিশ্বের অনেক মুসলমানেই মনে করে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইসলামের বিজয় অসম্ভব। তারা মনে করে, এই দূরাবস্থা থেকে মুসলমানদের মুক্তির কোন উপায় নেই। খিলাফত প্রতিষ্ঠা বা ইসলামী পুনর্জাগরণের চেষ্টা করা অরণ্যে রোদন এর শামিল। কিছু মানুষের এই ধরনের মন্তব্যে তারা যেমন নিজেরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে গেছে, তাদের এ কথার কারণে যারা খিলাফত প্রতিষ্ঠার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে তারাও হতাশাচ্ছন্ন হচ্ছে।
খিলাফত প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের যথাযথ কর্মতৎপরতার অভাব : খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য যারা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও উপকরণের অপ্রাপ্তিতার কারণে যথাযথ কর্মতৎপরতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। একদিকে যেমন তাদের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে, আবার অপরদিকে রয়েছে উপকরণের অপর্যাপ্ততা। ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রে রয়েছে অযোগ্যতা, ত্যাগের মানসিকতার অভাব, কাজের ধারাবাহিকতা ও আন্তরিকতা বা নিষ্ঠার অভাব ইত্যাদি। উপকরণাদির ক্ষেত্রে রয়েছে অর্থ, মিডিয়া ও প্রয়োজনীয় রসদের অপর্যাপ্ততা।

খিলাফত প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা
শত প্রতিক‚লতা এবং সীমাবদ্ধতার মাঝেও, হাজারো অন্তরায়ের পরও ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার রয়েছে বেশ কিছু আশা জাগানিয়া সম্ভাবনা। সেগুলোকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যদি কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়, ইনশাআল্লাহ ইসলামী খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।
১. মুসলমানরা সঠিক এবং সত্য পথে থাকা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলার নিকট মনোনিত ধর্ম ইসলাম।
২. আল্লাহর সাহায্য এবং তিনি আমাদের সাথে থাকার বিশ্বাস। সুরায়ে আলে ইমরানের ১৩৯ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- وَلاَ تَهِنُوا وَلاَ تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
“তোমরা হীনবল হয়ো না এবং দুুঃশ্চিন্তা করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও”।
৩. আশাজাগানিয়া এবং প্রেরণা সৃষ্টিকারী প্রতিশ্রæতিসমূহ। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে- তাদেরকে অবশ্যই শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন, যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের দীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন। ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না।” (সুরা নুর : ৫৫)
৪. ফিতনাসমূহের ভবিষ্যদ্বাণী এবং আসন্ন পরীক্ষাসমূহের আগাম সংবাদ। ফিতনা ও অন্তর্কলহ সম্পর্কে মহানবী সা. সতর্ক করে গেছেন। এক হাদিসে এসেছে,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: تَكُونُ فِتْنَةٌ الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِي، وَالْمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي، مَنْ يَسْتَشْرِفْ لَهَا تَسْتَشْرِفْ لَهُ، وَمَنْ وَجَدَ مِنْهَا مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا فَلْيَعُذْ بِهِ.
‘সামনে এমন ফিতনা আসবে, যাতে উপবিষ্ট ব্যক্তি দণ্ডায়মান ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে। দণ্ডায়মান ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে। চলমান ব্যক্তি ওই ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে, যে দৌঁড়াচ্ছে। ফিতনা যে কাউকেই গ্রাস করবে। তাই যে ব্যক্তি কোনো আশ্রয় পায়, সে যেন তা গ্রহণ করে অর্থাৎ ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে।’ বুখারি, হাদিস নং : ৩৬০১
৫. মানুষের অন্তর পরিবর্তন করে দেওয়ার বাস্তবিক শক্তি।
৬. সংরক্ষিত শরিয়ত। ইসলামী শরিয়তের ম‚ল উৎস মহাগ্রন্থ আল কুরআন। যাতে কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হবে না। আল কুরআন মহান আল্লাহ তা‘আলার সংর¶ণে সংর¶িত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
আমি ¯^য়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংর¶ক। (সূরা হিজর : ৯)
لَّا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ ۖ تَنزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ
এতে মিথ্যার কোন অবকাশ নেই। এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর প¶ থেকে অবতীর্ণ। (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত : ৪২)
এমনিভাবে রাসুলের সুন্নাতও সু²ভাবে ও যতেœর সাথে সংর¶িত ও লিখিত আছে।
৭. ভৌগলিক অবস্থান। বর্তমানে ১৭০ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে মুসলিম উম্মাহ গড়ে উঠেছে। এ সংখ্যা সমগ্র বিশ্বের জনসংখ্যার ২৩.৪ শতাংশ। অঞ্চল বিচারে এশিয়া-ওশিনিয়ায় ২৪.৪ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ৯১.২ শতাংশ, সাব-সাহারা অঞ্চলে ২৯.৬ শতাংশ, ইউরোপে ৬ শতাংশ এবং উত্তর ও দ¶িণ আমেরিকায় ০.৬ শতাংশ মুসলিম রয়েছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৫২টি মুসলিম (সংখ্যাগরিষ্ঠ) রাষ্ট্র রয়েছে। এই ৫২টি দেশ ছাড়াও এমন কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল রয়েছে যেগুলো এখনো অমুসলিম দেশের অধীনে রয়েছে। তা ছাড়া বেশ কিছু দেশে মুসলিম জনসংখ্যা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ। এক গবেষণায় বলা হয়েছে- আগামী শতকে অর্থাৎ ২১০০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ হবে মুসলিম এবং ইসলাম হবে সর্বাধিক মানুষের ধর্ম। ইহুদি ধর্ম, বৌদ্ধ, হিন্দু ও নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসীদের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও শতকরা হার কমে আসবে।
৮. খনিজ সম্পদ। পৃথিবীতে মোট তেল ও গ্যাসের ৮০ ভাগ, কয়লার ৬০ ভাগ, ¯^র্ণের ৬৫ ভাগ, রাবার ও পাটের ৭৫ ভাগ এবং খেজুরের ১০০ ভাগই মুসলিম দেশের।
৯. সংখ্যাগত শক্তি। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি এবং মুসলমান দেশের সংখ্যা ৬৫-এরও অধিক। পৃথিবীর মোট দেশের আয়তনের তিনভাগের একভাগ এখনো মুসলমানদের দেশসমূহ। পৃথিবীর মোট ৩ কোটি সৈন্যের এক কোটিই মুসলমান। অমুসলিম বিশ্বের ৮৭ ভাগ বাণিজ্যই মুসলমানের সাথে। অর্থাৎ মুসলমানরা চাইলেই যেকোনো মুহূর্তে সারাবিশ্ব দখল করে নিতে পারে এবং অমুসলিম বিশ্ব তথা লুটেরা কাফিররা মুসলমান বিশ্বের তথা মুসলমানদের সম্পদ হরণ করেই বা নির্ভর করেই বেঁচে আছে। কিন্তু মুসলমান সে বিষয়ে বেখবর। তারপরও মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা পশ্চিমা হানাদার শক্তির আগ্রাসনের শিকার।
১০. সর্বোপরী ঐশী সাহায্য। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُواْ الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْاْ مِن قَبْلِكُم مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُواْ حَتَّى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ آمَنُواْ مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللهِ أَلا إِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ-
‘তোমরা কি মনে করে নিয়েছ যে, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে ? অথচ তোমাদের মাঝে এখনও তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত অবস্থা উপস্থিত হয়নি। তাদেরকে দারিদ্র্য ও রোগ-শোক জাপটে ধরেছিল এবং তারা এমন (বিপদের) ঝাঁকুনি খেয়েছিল যে, ¯^য়ং রাসূল এবং তার সঙ্গী মুমিনগণ পর্যন্ত বলে ফেলেছিলেন, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?’ সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটেই।’ (সুরা বাকারাহ : ২১৪)
পরিশেষে বলতে চাই, ইসলামী খিলাফত মুসলিম উম্মাহর হারানো ঐতিহ্য। যতদিন পৃথিবীতে খিলাফত প্রতিষ্ঠা ছিল ততদিন শান্তির সুবাতাস বয়ে গেছে বিশ্ব জুড়ে। খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পর মুসলিম উম্মাহ আজ নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ইহুদি-খ্রিস্টানরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে- যাতে মুসলিম উম্মাহর হারানো খিলাফত ফিরে না আসে। তাই মুসলমানদেরকে এই বিষয়ে ভাবতে হবে। খিলাফত প্রতিষ্ঠায় কঠিন সংকল্প করতে হবে। দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে। ঈমানী বলে বলিয়ান হয়ে, আল্লাহর রহমতের আশা নিয়ে, কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত পথে ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখলে ইনশাআল্লাহ বিজয় সুনিশ্চিত।
নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারীব।

লেখক : মুহাম্মাদ আবদুর রহমান গিলমান

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন