আজ ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রবিবার | ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- সকাল ১০:২৬

আজ ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রবিবার | ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমানতদারিতা

ভূমিকা : আমানত একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ গচ্ছিত রাখা, নিরাপদ রাখা। সাধারণত কারো নিকট কোন অর্থ-সম্পদ বা কথা গচ্ছিত রাখা কে আমানত বলা হয়। তবে ব্যাপক অর্থে শুধু ধন-সম্পদ নয়; বরং যেকোনো জিনিস গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলে। যেমন একজনের জান-মাল সম্মান কথা প্রতিজ্ঞা সবকিছুই অন্যের নিকট আমানতস্বরুপ। পবিত্র কোরআনের আলোকে আমানতের ও আমানতদারিতার গুরুত্ব আলোচনা করা হবে। যিনি গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেন এবং তা প্রকৃত মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেন তাকে বলা হয় আমিন বা আমানতদার।

পবিত্র কোরআনে আমানতের গুরুত্ব :
“নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন (প্রত্যেক) আমানতসমূহ তার হকদারের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে বিচার ফয়সালা করবে, তখন ইনসাফভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সুন্দর উপদেশ দেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সবকিছু শোনেন এবং দেখেন।” (সূরা নিসা-৫৮)

উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা :
আলোচ্য আয়াত প্রমাণ করে যে, আমানত সংরক্ষণ করা এবং তা যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়া প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব। কেননা অমর তথা নির্দেশ সূচক শব্দ শুধুমাত্র ওয়াজিবের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আর এই আয়াতে যেহেতু আল্লাহ আমানত সংরক্ষণের নির্দেশ প্রদান করেছেন এজন্য প্রত্যেক মানুষের উপর আমানত সংরক্ষণ করা এবং তা প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়া ওয়াজিব। এর বিপরীত কারা হারাম ও কবীরা গুনাহ। আমানত রক্ষা করা আখলাকে হামিদাহ-র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। সচ্চরিত্র ব্যক্তির মধ্যে আমানতদারী বিশেষভাবে বিদ্যমান থাকে। আমানত রক্ষা করা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ।

আমানত সংরক্ষণকারীরা জান্নাতুল ফেরদৌসের ওয়ারীশ হবে :
“আর যারা নিজেদের আমানত ও অঙ্গীকার সমূহ পূর্ণ করে ; যারা নিজেদের নামাজ সমূহ হেফাজত করে; তারাই হবে জান্নাতের ওয়ারিশ; তারা জান্নাতুল ফেরদৌসের ওয়ারিশ হবে এবং সেখানে চিরকাল থাকবে।” (সূরা মুমিনুন : ৮-১১)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা :
উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে যে, খরিদ করা ব্যতীত উত্তরাধিকার সূত্রে কোন কিছুর মালিক হওয়া কে ওয়া ওয়ারিশ বলা হয়। আলোচ্য আয়াত সমূহ তিনটি গুনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, যাদের মধ্যে এই তিনটি গুণ থাকবে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতুলফেরদাউসের ওয়ারিশ বানিয়ে দিবেন।

তিনটি গুণ হল :
১. যারা যথাযথভাবে আমানত সংরক্ষণ করে। ২. যারা ওয়াদা ঠিক রাখে। ৩. যারা যথাসময়ে নামাজ আদায় করে।

আমানতের ক্ষেত্রসমূহ :
কারো নিকট কোন দ্রব্য বা জিনিসপত্র রাখা হলে তা অবশ্যই যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। গুচ্ছিত দ্রব্যের কোনরূপ পরিবর্তন করা যাবে না। তা নিজ কাজে ব্যবহার করা যাবে না। বরং প্রকৃত মালিক যখন চাইবে তখন তার ফিরিয়ে দিতে হবে। এটাই আমানতের ইসলামী নীতি ও পদ্ধতি।

আমানতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যাপক। শুধু মানবসম্পদ এই আমানত নয় বরং কথা, কাজ, মান -সম্মান ও আমানত হতে পারে। কেউ বিশ্বাস করে কোন কথা বললে এবং তার গোপন রাখতে বললে সে কথা ও আমানত স্বরুপ। সে কথা অন্যের নিকট বলে ফেললে আমানতের খিয়ানত করা হয়।

ইসলামে মানুষের প্রতিটি দায়িত্ব ও কর্তব্য আমানত স্বরুপ। ব্যক্তিগত কাজের পাশাপাশি মানুষকে আরও বহু দায়িত্ব পালন করতে হয়। মানুষের এসব পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক দায়িত্ব আমানত হিসেবে গণ্য।

আমানতের কতিপয় ক্ষেত্র :
১. মাতা-পিতার নিকট সন্তান আমানত স্বরুপ।
২. সন্তানের নিকট মাতা পিতা আমানত।
৪. ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র আমানত।
৫. কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট ঐ প্রতিষ্ঠান আমানত স্বরুপ।
৬. সরকারের নিকট রাষ্ট্রের সকল সম্পদ ও জনগণের অধিকার আমানত স্বরুপ। ৭.জনগণের নিকট রাষ্ট্র আমানত স্বরুপ।

উপসংহার :
উপরোক্ত আলোচনা ও আয়াতের আলোকে বুঝা যাচ্ছে যে, আমানত একটি মহৎ গুণ। নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমে মানুষ আমানত রক্ষা করতে পারে। আমরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে আমানত রক্ষা করতে সচেষ্ট হব। জীবনে আর কখনো আমানতের খিয়ানত করা যাবে না। জীবনে আর কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করা যাবে না।

আল্লাহ আমাদের আমল করার তওফিক দান করুন-আমিন।

লেখক : মুহাম্মাদ মনিরুজ্জামান, মুবাল্লিগপ্রত্যাশী, ইশা ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম মহানগর

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন