আজ ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার | ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- সন্ধ্যা ৭:২৩

আজ ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার | ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈমান

ঈমানের অভিধানিক অর্থ
ঈমান শব্দটি (أمن) থেকে নির্গত। অর্থ আশ্বস্ত হওয়া, নিরাপদ হওয়া, নিরুদ্বিগ্ন হওয়া।
যেমন কুরআনে এসেছেÑافأمنوا مكر الله “তারা কি আল্লাহ তা‘আলার কৌশল থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে?”
افأمن أهل القري “তবে কি এ জনপদের অধিবাসীরা নিশ্চিত হয়ে পড়েছে?”
“الايمان” অর্থ মেনে নেওয়া, বিশ্বাস করা, সত্যায়ন করা। যেমন কুরআনে রয়েছে-

বিশ্বাস করা
آمن الرسول بما أنزل إليه من ربه والمؤمنون كل آمن بالله وملائكته وكتبه ورسله لا نفرق بين أحد من رسله
অর্থ: বিশ্বাস রাখেন রাসূল সেই বিষয়ের প্রতি যা তাঁর প্রতি নাযীল করা হয়েছে। তাঁর প্রভুর পক্ষ হতে। আর মুমিনগণও, সকলেই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি ও তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর পয়গ¤^রগণের প্রতি। এই মর্মে যে আমরা তাঁর পয়গ¤^রগণের মধ্যে কাউকেও পার্থক্য করি না।

আনুগত্য করা
قالوا أنؤمن لك واتبعك الأرذلون
অর্থ: তারা বলতে লাগলো, আমরা কি তোমার প্রতি আনুগত্য করবো? অথচ নিচ লোকগুলো তোমার সহচর হয়েছে।

আস্থা স্থাপন করা
ما من الانبياء من نبي الا قد اعطي من الايات ما مثله أمن عليه البشر
অর্থ: প্রত্যেক নবীকে তার যুগের চাহিদা মোতাবেক কিছু মু’জিযা দান করা হয়েছে, যা দেখে লোকেরা তাঁর প্রতি আস্থা স্থাপন করেছে।

চির প্রতিষ্ঠিত থাকা
يا ايها الذين أمنوا أمنوا بالله و رسوله والكتاب الذي نزل علي رسوله والكتاب الذي انزل من قبل
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল এবং যে কিতাব তার রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তাতে এবং যে কিতাব পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন তাতে বিশ্বাস রাখো।
এখানে তাফসীরে জালালাইনের লেখক أمنوا – এর অর্থ করেছেন ‘ঈমানের উপর চির প্রতিষ্ঠিত থাকা’ এ প্রশ্ন নিরসনের জন্য যে, ঈমানদারকে ঈমান আনতে বলার দ্বারা ‘তাহসিলে হাসিল তথা অর্জিত বিষয় পুন অর্জন করা’ সাব্যস্ত না হয়।
ঈমানের পারিভাষিক অর্থ
১. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু এনেছেন, তার সবগুলোকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে সত্যায়ন করা, মন থেকে সত্য জানা, মুখে ¯^ীকার করা ঈমান। আর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আনীত দীনের কোন একটি বিষয়কে অ¯^ীকার করা কুফর।
২. ইমাম গাযালী র.- এর মতে
الكفر هو تكذيب الرسول صلي الله عليه وسلم في شيء مما جاء به والايمان تصديقه في جميع ما جاء به
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনীত সকল বিধানসহ তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
৩. ইমাম আবু হানীফা র.-এর মতে- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনীত সব বিষয়ের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস ও মৌখিক ¯^ীকৃতি হল ঈমান।
৪. অধিকাংশ মুহাদ্দিস এবং ইমাম শাফেয়ী, মালেক ও আহমদ রহ.-এর মতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনীত সব বিষয়ের প্রতি অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক ¯^ীকারোক্তি এবং আরাকানসমূহ কাজে পরিণত করার নাম ঈমান।
৫. যা কিছু রাসূলুল্লাহ সা. এর দীনের অন্তভর্‚ক্ত বলে ¯^তস্পূর্তভাবে জানা যায়, তা সত্যায়ন করা। যেমন তাওহীদ, নবুওয়্যত, পুনরুত্থান প্রতিফল। জমহুর মুহাদ্দিসীন, মু’তাযিলা খারেজীদের মধ্যে ঈমান তিনটি বিষয়ের সমষ্টির নাম। সত্য বিশ্বাস করা, সত্য ¯^ীকার করা, এবং তদুনুসারে আমল করা। সুতরাং যে ব্যক্তির শুধু বিশ্বাসের ত্রæটি আছে সে মুনাফিক, যার ¯^ীকারোক্তিতে ত্রæটি আছে, সে কাফের। এবং যার আমলে ত্রæটি আছে, সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত সে ফাসিক। খারেজিদের মতে সে কাফের। আর মুতাযিলাদের মতে সে ঈমানের গণ্ডি বহিভর্‚ত, তবে কুফুরীর অন্তভর্‚ক্ত নয়। আর ঈমান শুধু তাসদীকে ক্বলবী বা আন্তরিক সত্যায়নের নাম- এ বিষয়ের প্রতি যা দালালত করে তা হলো এই যে, আল্লাহ তাআলা (বিভিন্ন আয়াতে) ঈমানকে ক্বলবের দিকে সংযুক্ত করেছেন। যেমন আল্লাহ পাক বলেন, وقلبه مطمئن بالايمان‘তার অন্তর ঈমানের সাথে প্রশান্ত’ ولم تئمن قلوبهم ‘তাদের অন্তর বিশ্বাস স্থাপন করেনি’ ولما يدخل الايمان في قلوبكم ‘এখনও তোমাদের অন্তরে বিশ্বাস জন্মেনি’।

হাদিসে পাকে ঈমান
হাদিসে জিবরাঈলে জিবরাঈল আ. এর প্রশ্নের উত্তরে নবী কারীম সা. ঈমানের পরিচয় এভাবে দিয়েছেন। ঈমান হচ্ছে- ان تئمن با لله و ملائكته و كتبه و رسله واليوم الأخر و تئمن بالقدر خيره و شره
আল্লাহ, তার ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং ভাগ্যের ভালো-মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা, (যে, সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়।)

পারিভাষিক সংজ্ঞার বিশ্লেষণ
১. অন্তরের তাসদিক ও সত্যায়ন দ্বারা শুধু ইলম এবং মা‘রিফাতই উদ্দেশ্য নয়; বরং তাসদিক ও সত্যায়ন এক জিনিস, ইলম এবং মা‘রিফাত ভিন্ন জিনিস। ইলম অর্থ জানা, মা‘রিফাত অর্থ চেনা। আর তাসদিক অর্থাৎ সত্যায়ন বা মেনে নেওয়া। ঈমান অন্তর থেকে মেনে নেওয়ার নাম। শুধুমাত্র ওহীলব্দ বিষয়গুলোকে জানার নাম ঈমান নয়।
মক্কার কাফিরগণ নবুওয়াতের প্রমাণাদির ভিত্তিতে জানত যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী। ইহুদী আলেমরা খুব ভালোভাবে জানতো যে, তিনি সেই শেষ নবী। পূর্বেকার নবীগণ যাঁর ব্যাপারে সুসংবাদ দিয়ে আসছিলেন।
তাওরাত ও ইঞ্জিলে তাঁর যেসব নিদর্শন বিবৃত ছিল তারা ¯^চক্ষে সেসব প্রত্যক্ষ করেছিল। কালামে পাকে তাদের কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ
‘তারা তাঁকে এতটা ভালোভাবে চেনে যেরূপ তারা নিজের সন্তানদেরকে চেনে।’

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এভাবে চেনা সত্তে¡ও তারা মেনে নেয়নি, তাই তারা ঈমানের আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। নবীজীর চাচা আবু তালেবের তাঁর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকা সত্তে¡ও মুশরিকদের তিরষ্কারের ভয়ে মেনে নেননি। তাই তিনি ঈমানদার হতে পারেননি।

ভক্তি ও ভালোবাসার সহিত মানার নাম ঈমান
ঈমান শুধু চেনা-জানার নাম নয়; বরং ঈমান হল- দীন, দীনের নবী ও দীনের সব নিদর্শন ও বিধি-বিধানকে ভালোবাসা ও ভক্তি শ্রদ্ধার সহিত মেনে নেয়া।
ইসলামের বিধি-বিধান ও নিদর্শনসমূহের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ঈমানের অপরিহার্য অংশ। যা ছাড়া ঈমান কল্পনাও করা যায় না। মহান আল্লাহ বলেন-
وَجَحَدُوا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنفُسُهُمْ ظُلْمًا وَعُلُوًّا
‘তারা আমার নিদর্শন বা আয়াতসমূহকে অ¯^ীকার করে অথচ তাদের অন্তরে এর পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। তাদের এ আচরণ কেবল অন্যায় ও অহঙ্কারপ্রসূত”।
সারকথা হল, শুধু ইলম ও ইয়াকিন অর্থাৎ জানা ও বিশ্বাসের নাম ঈমান নয়। মূলত ঈমান হল ভক্তি শ্রদ্ধার সহিত মেনে নেয়া এবং ¯^ীকৃতি দেয়ার নাম।

ঈমানের হাকিকত
অন্তরের দৃঢ়বিশ্বাস ও সত্যায়ন হল আসল ঈমান। মৌখিক ¯^ীকৃতি হল, অন্তরে যে ঈমান বিদ্যমান রয়েছে তার বর্ণনা মাত্র। যদি মৌখিক ¯^ীকৃতি অন্তরের বিশ্বাসের অনুরূপ হয় তবে তো ভাল। আর যদি মুখে ঈমানের দাবি করে কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস না থাকে তাহলে ঈমানের নামে ধোঁকা ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। সে একজন মিথ্যুক, যে নিজেকে সত্যের লেবাসে প্রকাশ করছে।
ইসলামী দার্শনিকদের মতে ঈমানের মূল হাকিকত হল অন্তরের বিশ্বাস ও সত্যায়ন। তবে দুনিয়াবী বিধি-বিধান আরোপ করার জন্য মৌখিক ¯^ীকৃতি শর্ত। কেননা যবান হল অন্তরের ভাষ্যকার। যবানের ¯^ীকৃতি ব্যতীত অন্তরের অবস্থা জানা সম্ভব নয়। অন্তরের ¯^ীকৃতি যেহেতু একটি গোপন বিষয়, এ জন্য নিদর্শন হিসেবে মৌখিক ¯^ীকৃতিকে অপরিহার্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। যাতে বাহ্যিক বিধি-বিধান আরোপ করা সমূচিত হয়।
যদি কোন ব্যক্তি বোবা হওয়ার কারণে মুখে উচ্চারণ করতে ব্যর্থ হয় বা অন্য কারো বল প্রয়োগ ও বাধ্য করার কারণে মুখে কুফরী কালিমা উচ্চারণ করে কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস ও সত্যায়ন বিদ্যমান রাখে, তাহলে সে ব্যক্তি কাফির হবে না। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি অন্তরে দৃঢ বিশ্বাস রাখার পর মুখে ¯^ীকৃতি প্রদানের পূর্বেই মারা যায়। মৌখিকভাবে ¯^ীকৃতি দেয়ার সুযোগ না পায়। তাহলে সে ব্যক্তির ঈমানেও কোন ত্রæটি থাকবে না।
মুহাদ্দিসিনে কেরাম যদিও মৌখিক ¯^ীকৃতি এবং বাহ্যিক আমলকেও ঈমানের অংশ হিসেবে গণ্য করে থাকেন। এতে তাদের উদ্দেশ্য হল- ঈমানের মূল এবং শিকড় অন্তরের বিশ্বাস ও সত্যায়ন। তাঁরা এর ব্যাখ্যা এভাবে করেন যে, নেক আমল ব্যতীত ঈমান অসম্পূর্ণ থাকে। তবে নেক আমল ত্যাগ করা কুফরি নয়। কিন্তু মু‘তাজিলা এবং খারেজীরা কবিরা গোনাহে পতিত ব্যক্তিকে কাফের আখ্যা দিয়ে থাকে, যা সঠিক নয়।
মুহাদ্দিসিন এবং দার্শনিকদের মাঝে মৌখিক ¯^ীকৃতি এবং নেক আমলকে ঈমানের অংশ গণ্য করা না করার ব্যাপারে যে মতানৈক্য রয়েছে তা কেবল বাহ্যিকভাবে। মূলতঃ তাদের মাঝে এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই।

দীনি বিষয়াদির কোন একটি অ¯^ীকার করা কুফরি
ইমাম গাযালী রহ.“ফয়সালুত্ তাফরিকা বাইনাল ইসলামে ওয়ায্ যান্দাকাহ” নামক গ্রন্থে ঈমান এবং কুফরের পরিচয় এভাবে দিয়েছেন যে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আনীত কোন একটি বিষয়কে অ¯^ীকার করার নাম কুফরি এবং সব বিধানের ¯^ীকৃতি ও সত্যায়নের নাম ঈমান।’
ইমাম গাযালী রহ.-এর উক্ত বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে যে, ঈমানের জন্য শুধু মাত্র দু’একটি বিষয়ের বিশ্বাস যথেষ্ট নয়। দীনের সব বিষয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর বিশ্বাস করার নাম ঈমান। তবে কোন ব্যক্তি কাফির হওয়ার জন্য দীনের সব বিষয় অ¯^ীকার করা জরুরি নয়। বরং যে কোন একটি বিষয়কে অ¯^ীকার করাও কুফরি।
আহমদ ইবনে শায়খ আবদুল আহাদ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ. বলেন, “গ্রীক দার্শনিকগণ যারা আসমান ও গ্রহ-নক্ষত্রকে ধ্বংসশীল মনে করে না তারা অবশ্যই কাফির।” ইমাম গাজ্জালী রহ. ¯^ীয় গ্রন্থে এর বিশ্লেষণে বলেছেন, তাদের কাফির হওয়ার কারণ হলো, তারা অকাট্য ও সুস্পষ্ট বিষয়াদি এবং নবীদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত প্রমাণাদির অ¯^ীকারকারী। গ্রীক দার্শনিকগণ যে বিশ্বাস পোষণ করত তার বিপরীত আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ. وَإِذَا النُّجُومُ انْكَدَرَت. وَإِذَا الْجِبَالُ سُيِّرَتْ.
“যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে, যখন নক্ষত্র মলীন হয়ে যাবে, যখন পর্বতমালা অপসারিত হবে।”

মহান আল্লাহ আরো বলেন,
إِذَا السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ .وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَت .وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَت
“যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে, যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে।”
মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ. আরো বলেন, “শুধুমাত্র কালিমায়ে শাহাদাত পড়ে নেয়া মুসলমান হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়; বরং ঐ সব বিষয়ে ¯^ীকৃতি ও সত্যায়ন জরুরী, যেগুলো দীনের অন্তর্ভুক্ত হওয়া অকাট্যভাবে প্রমাণিত।”
আর যেসব বিষয় অকাট্যভাবে প্রমাণিত নয়, সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস ঈমানের অংশ নয় এবং সেগুলো অ¯^ীকার করার দ্বারা কাফির হবে না। তবে যেসব বিষয় সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কিন্তু ‘তাওয়াতুর’ ও ধারাবাহিকভাবে এসেছে এমন নয়, তা অ¯^ীকার দ্বারা কাফির না হলেও গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট নিশ্চয়ই হবে এবং কুফরির দিকে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু ঐ গোমরাহির বিষয়টি শুধু তার জন্য, যে ‘খবরে ওয়াহিদ’ দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয়ের অ¯^ীকার করে। আর যে ব্যক্তি মূল হাদিসকেই অ¯^ীকার করে এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা ও কর্মকে শরীয়তের দলিল মনে করে না সে নিশ্চিত কাফির। যে তার কুফরিতে সন্দেহ করে সেও কাফির।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
انظُرْ كَيْفَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَكَفَى بِهِ إِثْمًا مُّبِينًا.أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُواْ نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ هَؤُلاء أَهْدَى مِنَ الَّذِينَ آمَنُواْ سَبِيلاً. أُوْلَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ وَمَن يَلْعَنِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ نَصِيرًا.
“দেখ! এরা আল্লাহর ওপর কিরূপ মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে এবং প্রকাশ্য পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট। যে লোকদেরকে কিতাবের (তাওরাতের ইলম) থেকে একাংশ দেয়া হয়েছিলো, তোমরা কি তাদেরকে দেখনি! তারা (কীভাবে) প্রতিমা ও শয়তানের সত্যতা ¯^ীকৃতি দিচ্ছে এবং কাফিরদের (যারা মূর্তি পূজা করে তাদের) স¤^ন্ধে বলে, ‘এরা মু’মিনদের চেয়ে অধিকতর সরল পথের ওপর রয়েছে।’ এরা সে সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা লা’নত বর্ষণ করেছেন এবং যার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা লা’নত বর্ষণ করেন তুমি কখনো তার কোন সাহায্যকারী পাবে না।”
উক্ত আয়াতসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে পার্থক্য করা অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহর কালামকে শরীয়তের দলিল মনে করা, আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিসকে শরীয়তের দলিল মনে না করা নিশ্চিত কুফরি। আর যে ব্যক্তি এমন বিশ্বাস অন্তরে পোষণ করবে সে নিঃসন্দেহে কাফির।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফায়সালা মানা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا
“হে নবী! আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ মু’মিন পরিগণিত হবে না, যতক্ষণ তারা নিজেদের বিবাদ-বিস¤^াদের বিচারভার আপরার ওপর অর্পণ না করে। অতঃপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা না খাকবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে।”
উক্ত আয়াত দ্বারা জানা গেলো যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ এবং মীমাংসাকে মনে-প্রাণে মেনে নিতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন একটি কথাকেও মেনে নিতে অ¯^ীকৃতি প্রদান করে তাহলে সে নিশ্চিত কাফির।
কাফির হওয়ার জন্য এটা জরুরী নয় যে, সে তাওহীদ-রেসালাতকেই অ¯^ীকার করতে হবে; বরং দীনের যে বিধানই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত তা অ¯^ীকার করা কুফরি। দৃষ্টান্ত¯^রূপ, যে বস্তুর হালাল-হারাম হওয়া কুরআনে পাকের আয়াত দ্বারা কিংবা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ধারাবাহিক পর্যায়ে চলে আসা হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যথা- যিনা-ব্যভিচার, সমকামিতা, সুদ ইত্যাদি।

কুফরি থেকে মুক্ত ও পবিত্রতা ঈমানের শর্ত
যদি কোন ব্যক্তি ঈমানের দাবি করে কিন্তু কুফরি থেকে মুক্ত ও বিমুখতার ঘোষণা না দেয়, তাহলে সে দু’টি বিপরীতমুখী দীনের সত্যায়নকারী বিশ্বাসী বলে গণ্য হবে। সে ইরতেদাদ অর্থাৎ দীন ত্যাগের দোষে দুষ্ট হবে। মূলত এমন ব্যক্তি মুনাফিকের অন্তর্ভুক্ত। সে না এদিকে, না ওদিকে। সুতরাং ঈমানদার প্রমাণ করার জন্য কুফরি থেকে মুক্ত ও পবিত্রতা অপরিহার্য বিষয়। কুফরি থেকে মুক্ত হওয়ার দু’টি স্তর।
এক. সর্বনি¤œ স্তর হলো, অন্তরে কুফরির প্রতি চরম বিদ্বেষভাব থাকা।
দুই. উচ্চস্তর হলো, অন্তরের সাথে সাথে যবানে, অভ্যন্তরের সাথে সাথে প্রকাশ্যে কুফরের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করবে।
কুফর থেকে মুক্ত থাকার অর্থ হলো, আল্লাহর দুশমনের সঙ্গে দুশমনি রাখা। কোন বড় ধরণের বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অন্তরে বিদ্বেষভাব রাখা যথেষ্ট হবে। বড় কোন বিপদাপদের সম্ভাবনা না থাকলে অন্তরে বিদ্বেষ তো রাখবেই, প্রকাশ্যেও শত্রæতার ঘোষণা দিতে হবে। কালামে পাকে মহান আল্লাহ তা‘আলার ঘোষণা,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ.
“হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।”
উপর্যুক্ত আয়াতের মর্ম এটাই যে, আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ভালবাসা ততক্ষণ গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দুশমনদের সঙ্গে দুশমনি ও শত্রæতা না হয়। হজরত ইবরাহীম আ. যত সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছেন এবং খলিলুল্লাহ তথা আল্লাহর বন্ধু হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন তা কেবল আল্লাহর দুশমনদের সঙ্গে দুশমনি ও শত্রæতার কারণেই লাভ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা হজরত ইবরাহীম আ.কে আমাদের জন্য আদর্শ ও মডেল ঘোষণা করে বলেন,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
“তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সঙ্গিগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলো, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করো তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমরা এক আল্লাহর বিশ্বাস স্থাপন না করলে, তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চির শত্রæতা থাকবে।”

কুফরি শক্তির সঙ্গে শত্রæতা করা প্রসঙ্গে কুরআনের ঘোষণা
কুফরি শক্তির সঙ্গে শত্রæতা রাখা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলা কালামে পাকের ‘সুরা মুমতাহিনা’র এক, দুই ও তিন নং আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاء تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُم مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَن تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِن كُنتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاء مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنتُمْ وَمَن يَفْعَلْهُ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاء السَّبِيلِ. إِن يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا لَكُمْ أَعْدَاء وَيَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُم بِالسُّوءِ وَوَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ. لَن تَنفَعَكُمْ أَرْحَامُكُمْ وَلا أَوْلادُكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ.
“হে মু’মিনরা! যদি তোমরা আমার পথে জিহাদ করার জন্য ও আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য (ঘর থেকে) বেরিয়ে পড় তবে আমার শত্রæ ও তোমাদের শত্রæদের এমন বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না যে, তাদেরকে ভালবাসার পয়গাম পাঠিয়ে থাকবে। অথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে যে, রাসুলকে এবং তোমাদেরকে শুধু এ কারণেই মক্কা থেকে নির্বাসিত করেছে যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছো। অথচ তোমরা গোপনে বন্ধুত্বপূর্ণ কথা বলে থাকো। তোমরা গোপনে যা করে থাকো ও প্রকাশ্যে যা করে থাকো সেসব সম্পর্কে আমি ভালোভাবে অবগত। তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে।
যদি তোমরা তাদের হাতে কাবু হয়ে যাও তবে তারা তোমাদের শত্রæ হয়ে যাবে। হাত ও জিহŸা দিয়ে তোমাদের অনিষ্ট করবে। চাইবে যে, তোমরাও কাফির হয়ে যাও। কিয়ামতের দিন তোমাদের আত্মীয়-¯^জন ও সন্তান সন্ততি তোমাদের কোন কাজে আসবে না। আল্লাহই তোমাদের মীমাংসা করে দিবেন। তোমরা যা কিছু করো তার সব কিছু আল্লাহ দেখেন।”
উপর্যুক্ত আয়াতসমূহে কাফিরদের সাথে মুসলমানদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা হারাম সাব্যস্ত করা হয়।

তাগুতকে সম্পূর্ণভাবে অ¯^ীকার করা ঈমানের জন্য অপরিহার্য
যারা নিজেকে ঈমানদার দাবি করে অথচ তাগুতের কাছে বিচার প্রার্থী হয়, তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُواْ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُواْ إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُواْ أَن يَكْفُرُواْ بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلالاً بَعِيدًا .وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا.
“হে নবী আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা দাবি করে যে, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তারা তার প্রতি ঈমান রাখে। অথচ তারা তাদের তাগুতের নিকট বিচার প্রার্থী হতে চায়। যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বস্তুত শয়তার তাদেরকে ভুলিয়ে গোমরাহিতে লিপ্ত করতে চায়। আর যখন তাদের বলা হয়, এসো সেই হুকুমের দিকে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন আর এসো রাসুলের দিকে। তখন সেই মুনাফিকদেরকে দেখবে, তারা আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে রয়েছে।”
এই ক্ষেত্রে সেসব মুনাফিকের কথা আলোচিত হয়েছে, যারা মূলত মনে প্রাণে ইয়াহুদি ছিলো। কিন্তু মুসলমানদেরকে দেখানোর জন্য তারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে জাহির করতো। তাদের অবস্থা ছিলো, সে সব বিচার-আচারের ব্যাপারে তাদের মনে হতো, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পক্ষে রায় দিবেন। বিচারে তাদের ¯^ার্থ রক্ষিত হবে। সেসব বিচার তার নিকট পেশ করতো। কিন্তু যে সব বিষয়ে তাদের ভরসা হতো না এবং মনে হতো, এ সবের ফায়সালা তাদের বিপক্ষে যাবে সেসব মুকাদ্দামা তারা ইয়াহুদি সরদারের কাছে পেশ করতো। যাকে এ আয়াতে তাগুত বলা হয়েছে। মুনাফিকদের পক্ষ থেকে এরূপ কয়েকটি ঘটনা সংগঠিত হয়ে ছিলো। যা একাধিক রেওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ¯^ীকৃতি সত্যায়নের পর তাগুতকে প্রত্যাখ্যান অপরিহার্য বিষয়।
এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রাতে ঘুনোর পর জাগ্রত হয়ে দশবার বিসমিল্লাহ, দশবার সুবহানাল্লাহ এবং দশবার ‘আমানতু বিল্লাহ ওয়া কাফারতুত তাগুত’ (আমি আল্লাহর ওপর ঈমান আনলাম এবং তাগুতকে অ¯^ীকার করলাম) বলে, তাহলে সে প্রতিটি বিপদজনক বস্তু থেকে হেফাজতে থাকবে।
উপর্যুক্ত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি বিশ্বাস এবং তার দুশমনের প্রতি ঘৃণাবোধ যাতে এমনভাবে দৃঢ় হয়ে যায় যা গাফলতির সময়ও সক্রিয় থাকে। আল্লাহ তা‘আলা কালামে পাকে আরো বলেন,
فَلَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا قَالُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَحْدَهُ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِهِ مُشْرِكِينَ. فَلَمْ يَكُ يَنفَعُهُمْ إِيمَانُهُمْ لَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا سُنَّتَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ فِي عِبَادِهِ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكَافِرُونَ.
“তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন বলল, আমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করলাম এবং যাদেরকে শরিক করতাম তদেরকে পরিহার করলাম। অতঃপর তাদের এ ঈমান তাদের কোন উপকারে আসলো না যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করলো। আল্লাহর এই নিয়মই পূর্ব থেকে তার বান্দাদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
উপর্যুক্ত আয়াত দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, যদি মুশরিকরা শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পূর্বে কুফর এবং কাফিরদের থেকে মুক্ত হয়ে তাদের প্রতি দুশমনির ঘোষণা প্রদান করতো তাহলে তাদের ঈমান উপকারি হতো।
পাঠক! লক্ষ্য করুন, কাফিরগণ শাস্তি প্রত্যক্ষ করার সময় শুধু ঈমান আনেনি। বরং আল্লাহর দুশমনদেরকে প্রত্যাখ্যান করার এবং তাদের থেকে মুক্ত ও পবিত্র থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমের বিভিন্ন স্থানে হজরত মুহাজির সাহাবায়ে কেরামের যেসব প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করেছেন, সেটাও এ কারণে যে, তারা কাফির ও কুফর থেকে মুক্ত এবং কুফরি শক্তির চরম বিদ্বেষী ছিলেন। আল্লাহ এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভালবাসা হৃদয়ে স্থান দিয়ে তাঁরা কুফরের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। যে কারণে তাঁরা নিজের প্রিয় মাতৃভ‚মি, বাপ-দাদা, সন্তানাদি, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-¯^জন, বন্ধু-বান্ধব সব কিছু পরিত্যাগ করেছেন। আসহাবে কাহাফের বিশাল প্রশংসার একমাত্র কারণ এটা যে, তাঁরা হিজরত করেছেন। কুফরি শক্তির প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছেন এবং কাফিরদের থেকে পৃথক হয়ে গেছেন। এই হিজরতের কারণেই তাঁদের এতসব মান-মর্যাদা।

ঈমানের আকৃতি ও মূল তত্ত¡
সূফীগণ বলেন, ঈমানের দু’টি স্তর রয়েছে। এক হলো ঈমানের সূরত বা আকৃতি। আরেক হলো ঈমানের হাকীকত বা মূলতত্ত¡। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনীত সব বিষয়াদির প্রতি অন্তরের বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক ¯^ীকৃতি হলো ঈমানের আকৃতি। আর এ সত্যায়ন, ¯^ীকৃতি ও বিশ্বাস অন্তরে স্থীর হয়ে যাওয়া হলো ঈমানের মূলতত্ত¡। অন্তরে ঈমান স্থীর হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো; শরীয়তের দাবিসমূহ ¯^ভাবেরও দাবিতে পরিণত হওয়া।
হাদিসে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ তার সব কামনা-বাসনা আমার আনীত শরীয়তের অনুগত না হয়।” উক্ত হাদিসে ঈমান দ্বারা অন্তরের স্থীরতাকেই বুঝানো হয়েছে। এর ব্যাখ্যা হলো, ঈমান অন্তরের মধ্যে এমনভাবে স্থীর হয়ে যাওয়া যে, ঈমানদার ব্যক্তির নিকট আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতিটি আদেশ পালন করার ক্ষেত্রে ¯^াদ এবং মিষ্টতা অনুভব হয়। তাঁর অবাধ্যতা এবং নাফরমানির সামান্য মনোভাব ও খটকা যদি হৃদয়ে উদিত হয় তাহলে তার নিকট তা আগুণে জ্বলা থেকেও কঠিন অনুভ‚ত হয়।
হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- এমন তিনটি বস্তু রয়েছে, যে ব্যক্তির মধ্যে সেগুলো বিদ্যমান থাকবে কেবল সে-ই এগুলোর কারণে ঈমানের ¯^াদ অনুভব করতে পারবে। সেগুলো হলো, ১. যার নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালবাসা সকল কিছু হতে অধীক পরিমাণে থাকে। ২. যে ব্যক্তি কোন বান্দাকে শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে ভালবাসে ৩. এবং যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা কুফর হতে মুক্তি দেয়ার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে সেভাবে অপছন্দ করে যেমন অপছন্দ করে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ হওয়াকে।
‘ঈমানের ¯^াদ’ এ কথার অর্থ হলো, ইবাদতে আগ্রহবোধ করা, তৃপ্তি অনুভ‚ত হওয়া, দীনের পথে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা সৃষ্টি হওয়া এবং জাগতিক বিষয়ের ওপর দীনকে প্রাধান্য দেয়ার মনোবৃত্তি গড়ে ওঠা।

ঈমানের অস্তিত্বগত স্তরসমূহ
আল্লামা নিসাপুরী রহ. তফসীরে গারায়েবুল কুরআনে লিখেছেন, “ঈমানের অস্তিত্বগত তিনটি স্তর রয়েছে। ১. উযূদে আ’ইনী অর্থাৎ প্রকৃত অস্তিত্ব । ২. উযূদে জেহনী অর্থাৎ জ্ঞানগত অস্তিত্ব। ৩. উযূদে লিসানী অর্থাৎ ¯^ীকৃতিগত অস্তিত্ব। মূলত ঈমান হলো, উযূদে আ’ইনী অর্থাৎ ঈমান বাস্তবিকভাবে অস্তিত্বে আসা। সেটা হলো, যখন বান্দা এবং আল্লাহর মাঝে পর্দা সরে যায়, আড়াল দূর হয়ে যায়, তখন বান্দার অন্তরে একটি নূর বা আলো অর্জন হয়। এই আলোটিই হলো, ঈমানের প্রকৃত অস্তিত্ব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُون.
“যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক; তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে যান। আর যারা কুফুরী করে তাগুত তাদের অভিভাবক; তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। এরাই অগ্নিবাসী। সেখানে তারা স্থায়ী থাকবে।”
প্রকাশ থাকে যে, বান্দা এবং আল্লাহর মাঝে অনেকগুলো পর্দা ও আড়াল বিদ্যমান থাকে। সেগুলো একেকটি করে সরে যায়। যখন কোন নতুন পর্দা সরে যায় তখন আলো আরো পূর্ণতা লাভ করতে থাকে। ঈমান আরো শক্তিশালী হতে থাকে। এমনকি ইসলাম সম্পর্কে তার বক্ষ প্রসারিত হয়ে যায়। আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সমস্ত নবীদের সত্যতা তখন তার নিকট সূর্যের চেয়েও বেশি আলোকিত ও সুস্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন,
أَفَمَن شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَهُ لِلإِسْلامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِّن رَّبِّهِ فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُم مِّن ذِكْرِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ فِي ضَلالٍ مُبِينٍ
“আল্লাহ ইসলামের জন্য যার হৃদয় উন্মুক্ত করেছেন আর যে তার প্রতিপালকের দেয়া আলো পেয়েছে (সে কি কখনও পাষাণ হৃদয় লোকদের সমান হতে পারে?) দূর্ভোগ সেই কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের জন্য যারা আল্লাহর স্মরণে বিমুখ, এরা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
আর এ আলোই কিয়ামতের দিন ঈমানদারকে পুলসিরাতে পথ দেখাবে। যেমন আল্লাহ বলেন,
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعَى نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِم بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ .
“আপনি সে দিন মুমিন নর-নারীদেরকে দেখবেন, তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ডান পার্শ্বে ছুটতে থাকবে। (তাদেরকে বলা হবে) তোমাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে সেসব উদ্যানের, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত হয়েছে”। যেখানে তোমরা সব সময় থাকবে। এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য”।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
“তোমাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও দক্ষিণ পার্শ্বে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান করুন। আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চই আপনি সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান”।
মনে রাখবে, ঈমান যে নূরানী ও আলোকিত হয় ঈমানদারগণ কিয়ামতের দিবসে তা ¯^চক্ষে দেখবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে ঈমানের আলো থেকে বঞ্চিত সে কিয়ামতের দিবসেও ঈমানের আলো থেকে বঞ্চিত থাকবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَن لَّمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِن نُّورٍ
“আর যাকে জ্যোতি দেননা তার ভাগ্যে কোন জ্যোতি নেই”।
কিয়ামতের দিবসে সব মুমিনেরই ঈমানের আলো অনুভ‚ত হবে। কিন্তু এ দুনিয়াতে যখন কোন আধ্যাত্মিক দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তির নিকট ধ্যানলব্ধ জ্ঞান অথবা কাশফের মাধ্যমে ঈমান উদ্ভাসিত হয়েছে তখন সেটা তার নিকট আলো ও জ্যোতির আকৃতিতে উদ্ভাসিত হয়েছে।
আর এই নূর বা আলোর কল্পনা ও ধ্যান হলো, ঈমানের উযূদে জেহনী জ্ঞানগত অস্তিত্ব। আর মুখে তাওহীদ ও রেসালাতের ¯^ীকৃতি প্রদান হলো, ঈমানের উযূদে লিসানী ¯^ীকৃতিগত অস্তিত্ব।
স্মরণ রাখবে, ঈমানের শুধু মাত্র মুখে ¯^ীকৃতি প্রদান উপকারী হবে না, যতক্ষণ না সে নূর অর্জন হয়। যেমন পিপাসীত ব্যক্তির জন্য ¯^চ্চ ও নির্মল পানির কল্পনা ও পানি শব্দের উচ্চারণ যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ সে তা দ্বারা তৃষ্ণা না মেটায়।
হে আল্লাহ! আমাদের বক্ষকে ঈমানের জন্য উন্মুক্ত করুন এবং আমাদের হৃদয়াত্মাকে আপনার আনুগত্যের আলোয় আলোকিত করুন। আমিন।
সংশয়যুক্ত ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়
ঈমান তো অবিচল ও দৃঢ় বিশ্বাসের নাম। সংশয় ও দোদুল্যমানতার মিশ্রণ ঈমান হতে পারে না। আকীদা হতে হয় সংশয়মুক্ত। ঈমান হতে হয় সুদৃঢ়। মহান আল্লাহ কালামে পাকে ঘোষণা করেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
“তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনে, পরে সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ”।
সংশয় ও দোদুল্যমানতাকে কাফির ও মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য আখ্যা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ .وَلَوْ أَرَادُواْ الْخُرُوجَ لأَعَدُّواْ لَهُ عُدَّةً وَلَكِن كَرِهَ اللَّهُ انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُواْ مَعَ الْقَاعِدِينَ.
“তোমার নিকট সেসব লোক অনুমতি প্রার্থনা করে যারা আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান রাখে না এবং তারা নিজেদেরে সংশয়ের কারণে দোদুল্যমান রয়েছে। যদি এদের বের হওয়ার ইচ্ছা থাকত তবে এর জন্য কিছু না কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করত। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদের যাত্রা পছন্দ করলেন না এজন্য তাদেরকে ¯^স্তিতে থাকার সুযোগ দিলেন। আর বলে দিলেন, যারা প্রক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার কারণে বসে আছে তাদের সাথে তোমরাও বসে থাক।”
না দেখে বিশ্বাস করার নাম ঈমান
না দেখে সন্দেহাতীতভাবে মেনে নেয়া ও বিশ্বাস করার নাম ঈমান। প্রকৃতিবাদীরা বলে, ‘¯^চক্ষে দেখা ছাড়া আমরা কিছুই মানি না’। আর যুক্তিপুজারীরা বলে, ‘যা বিবেক বুদ্ধি দিয়ে উপলব্ধি করা যায় না তা আমরা মানি না। পক্ষান্তরে মু’মিন বলে ‘সত্য সংবাদ মেনে নেয়া সুস্থ বিবেকেরই ফয়সলা’। ¯^চক্ষে প্রত্যক্ষ করার পর ঈমান আনার আর কী থাকে? চোখে দেখা বিষয়কে তো কেউই অ¯^ীকার করে না। তাই আল্লাহ ও তার রাসুলের বাণী পৌঁছার পর তা গ্রহণ করতে বিল¤^ করার কোন অবকাশ নেই। যে ব্যক্তি মু’মিন হওয়া সত্তে¡ও কুরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত অদৃশ্যের বিষয় সন্দিহান থাকে এ কারণে যে, সে সকল বস্তুর ধরণ ও বিস্তারিত বিবরণ তার বুঝে আসছে না। অথবা কুরআন-হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত কোন বিষয়ে বিজ্ঞানীর সাক্ষ্য না থাকার দরুন সে সন্দেহ করে। তাহলে সে মু’মিন হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা কালামে পাকের শুরুতেই মু’মিনের গায়েবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা প্রসঙ্গে বলেছেন-
الم.ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ.الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ.وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ. أُوْلَئِكَ عَلَى هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.
“আলিফ-লাম-মীম। সন্দেহ নেই। এটি হেদায়েত ¯^রূপ তাদের জন্য যারা ভয় পোষণ করে। যারা ঈমান এনেছে অদেখা বিষয়ের ওপর এবং নামাজ কায়েম করে, আর আমি তাদেরকে যে সম্পদ দান করেছি, তা থেকে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয় এমন সব কাজে ব্যয় করে এবং যারা ঈমান আনে আপনার ওপর যা নাযিল হয়েছে তাতেও আর যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে তাতেও এবং আখেরাতের ওপর যারা পূর্ণ বিশ্বাস করে। এরা সেসব লোক, যারা নিজ পরওয়ারদেগারের নির্দেশিত সঠিক পথে আছে এরাই তারা, যারা সফলতা পেয়েছে”।

লেখক : মাওলানা আবদুর রাজ্জাক
বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক।

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন