আজ ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখন সময়- সন্ধ্যা ৬:৫৫

আজ ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাওবাহ

আয়াত :
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوَءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ فَأُوْلَـئِكَ يَتُوبُ اللّهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللّهُ عَلِيماً حَكِيماً. وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الآنَ وَلاَ الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُوْلَـئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
সরল অনুবাদ :
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুল বশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তাওবা করে। এরাই হলো সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারও মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে, আমি এখন তাওবা করছি। আর তাওবা নেই তাদের জন্য যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
-সূরা নিসা ১৭ ও ১৮

সূরা নিসা নামকরণের কারণ :
উল্লিখিত আয়াত্দ্বয় সূরা নিসার ১৭ ও ১৮ নং আয়াত। আর এই সূরার নামকরণের কারণ হলো- মানব সভ্যতা বিকাশের মূল কেন্দ্রস্থল হচ্ছে পরিবার। আর সন্তান লালন-পালনে মূল দায়িত্ব পালন করে একজন নারী। তাই নারীর সম্মান ও অধিকার এবং পারিবারিক বিষয়ে বক্তব্য থাকায় উক্ত সূরার নামকরণ করা হয়েছে সূরা নিসা। (www.iscabd.org)

আয়াত নাযিলের সময়কাল :
এ সূরাটি কয়েকটি ভাষণের সমষ্টি। সম্ভবত তৃতীয় হিজরীর শেষের দিক থেকে নিয়ে চতুর্থ হিজরীর শেষের দিকে অথবা পঞ্চম হিজরীর প্রথম দিকের সময়কালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে এর বিভিন্ন অংশ নাযিল হয়। যদিও নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না কোন আয়াত থেকে কোন আয়াত পর্যন্ত একটি ভাষণের অন্তর্ভূক্ত হয়ে নাযিল হয়েছিল এবং তার নাযিলের সময়টা কি ছিল। তবুও কোন কোন বিধান ও ঘটনার দিকে কোথাও কোথাও এমন সব ইঙ্গিত করা হয়েছে যার সহায়তায় রেওয়াত থেকে আমরা তাদের নাযিলের সময়কাল জানতে পারি। যেমন আমরা জানি, সূরা নিসার প্রথম চারটি রুকুও পঞ্চম রুকুর প্রথম তিনটি আয়াতে উত্তরাধিকার বণ্টন, এতিমের অধিকার রক্ষা প্রসঙ্গে বিধান নাযিল হয়। তাই উক্ত আয়াত সমূহ ওহুদ যুদ্ধের পর নাযিল হয়ে থাকবে। (www.icabdlibrary.com)

আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট :
ওহুদ যুদ্ধে সত্তর জন মুসলমান শহীদ হয়েছিল। এ ঘটনার ফলে মদীনার ছোট জনবসতির বিভিন্ন গৃহে শহীদের মিরাস কিভাবে বণ্টন করা হবে এবং তারা যেসব এতিম ছেলে-মেয়েদের রেখে গেছেন তাদের স্বার্থ কিভাবে সংরক্ষণ করা হবে, এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। এরই ভিত্তিতে আমরা অনুমান করতে পারি উক্ত আয়াত সমূহ এ প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিল।

আয়াতের ব্যাখ্যা :
যারা ভুল বশত গুনাহ করে এবং অনতিবিলম্বে তাওবা করে, আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন। আয়াতে بِجَهَالَةٍ (অজ্ঞতা) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, ব্যক্তি গুনাহ সম্পর্কে অজ্ঞাত বা গুনাহের ইচ্ছা নেই বরং এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে, গুনাহর অশুভ পরিণাম ও পরলৌকিক আযাবের প্রতি তার সাময়িক অনীহাই গুনাহের কারণ। যেমন- হযরত ইউসুফ আলাইহিসসালাম তার ভাইদের বলেছিলেন- هَلْ عَلِمْتُم مَّا فَعَلْتُم بِيُوسُفَ وَأَخِيهِ إِذْ أَنتُمْ جَاهِلُونَ
এতে ভাইদেরকে জাহিল বলা হয়েছে। অথচ তারা যে কাজ করেছিল, তা কোন ভুল অথবা ভুলে যাওয়া বশত ছিল না বরং ইচ্ছাকৃতভাবে, জেনে-শুনেই করেছিল। কিন্তু পরিণতি সম্পর্কে গাফিল হওয়ার কারণে জাহিল বলা হয়েছে। তাই সাহাবা, তাবেয়ীন ও সমগ্র উম্মতের এ ব্যাপারে ইজমা হচ্ছে- যে ইচ্ছাকৃত গুনাহ করে, তার তাওবাও কবুল হতে পারে। (বাহরে মুহীত)
তবে শর্ত হচ্ছে- তাওবা হতে হবে যথাশীঘ্র। যেমন হাদীসে এসেছে- “ততক্ষণ তাওবা কবুল হয়, যে পর্যন্ত তার উপর মৃত্যু যন্ত্রণার গরগরা প্রকাশ না পায়।” (www.facebook.com/iscabd91)

আশরাফ আলী থানবী রহ. তাফসীরে বয়ানুল কুরআনে লেখেন, মৃত্যুর পূর্বে দুই অবস্থা। প্রথমত, ব্যক্তি চিকিৎসা এবং বাঁচার সম্পর্কে নিরাশ হয়ে যায়। এটিকে ﺑﺎﺲ বলা হয়। দ্বিতীয়ত, যখন উর্ধ্বশ্বাস উঠে যায় তখন পরজগতের দৃশ্যাবলী তার সামনে উপস্থিত হয়। এটিকে ﻳﺎﺲ বলা হয়। মূলত প্রথম অবস্থা পর্যন্ত ﻣﻦﻗﺮﻳﺐ বা তাওবা কবুলের সীমা ধরা হয়।

আর তাদের তাওবা কবুল হয় না, যারা সারা জীবন নির্ভয়ে গুনাহ করতে থাকে। আর যখন মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায় তখন বলে আমি এখন তাওবা করছি। যেমনিভাবে ফেরাউন ও তার সভাসদরা সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার সময় চিৎকার করে বলেছিল, আমরা মুসা ও হারুনের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি। মূলত তাদের তাওবা কবুল হবে না।

আয়াতের শিক্ষা :
১. গুনাহ হয়ে গেলে যথাশীঘ্র তাওবা করে ফেলতে হবে।
২. তাওবা হতে হবে নির্ভেজাল। এর ৩টি স্তর রয়েছে। যথা :
ক) স্বীয় কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া।
খ) কৃত গুনাহ অবিলম্বে বর্জন করা।
গ) ক্ষতিপুরণের চিন্তা করা। (যেমন-কাযা নামাজ, কাযা রোযা ইত্যাদি)
৩. আবারও গুনাহ হয়ে গেলে পরম করুণাময়ের থেকে প্রত্যেকবার তাওবা কবুলের আশা রাখবে। (www.twitter.com/iscabd91)

তথ্যসূত্র : তাফসীরে মা’আরিফুল কোরআন

লেখক : মুহা. রাশেদুল ইসলাম, মুবাল্লিগ, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র অান্দোলন, লক্ষীপুর জেলা

Leave a Comment

লগইন অথবা নিবন্ধন করুন

লগইন
নিবন্ধন